স্বাধীনতার মহান নেতাকে শ্রদ্ধাঞ্জলী

১৭৮২ সালের আজকের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনের অনুপ্রেরণার মশাল শহীদ তিতুমীর। যাঁর প্রকৃত নাম সৈয়দ মীর নিসার আলী (জন্ম ২৭শে জানুয়ারী, ১৭৮২, ১৪ই মাঘ, ১১৮২ বঙ্গাব্দ, মৃত্যু ১৯শে নভেম্বর, ১৮৩১) ছিলেন একজন ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী। তিনি ওহায়াবী আন্দোলন এর সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি জমিদার ও ব্রিটিশদের বিরূদ্ধে সংগ্রাম ও তাঁর বিখ্যাত বাঁশের কেল্লার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। ব্রিটিশ সেনাদের সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় এই বাঁশের কেল্লাতেই তাঁর মৃত্যু হয়।
জন্ম:
তিতুমীরের জন্ম হয় চব্বিশ পরগনার বসিরহাটের চাঁদপুর গ্রামে (বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে)। তাঁর পিতার নাম মীর হাসান আলী এবং মাতার নাম আবিদা রোকেয়া খাতুন। তিতুমীরের প্রাথমিক শিক্ষা হয় তাঁর গ্রামের বিদ্যালয়ে। পরবর্তীকালে তিনি স্থানীয় একটি মাদ্রাসাতে লেখাপড়া করেন। ১৮ বছর বয়সে তিতুমীর কোরানে হাফেজ হন এবং হাদিস বিষয়ে পান্ডিত্য লাভ করেন। একই সাথে তিনি বাংলা, আরবি ও ফার্সি ভাষায় ব্যু্ৎপত্তি লাভ করেন।
যুদ্ধ:
১৮২২ সালে তিতুমীর মক্কায় হজ্জব্রত পালনের উদ্দেশ্যে যান। তিনি সেখানে স্বাধীনতার অন্যতম পথপ্রদর্শক সৈয়দ আহমেদ শহীদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন ও ওয়াহাবী মতবাদে অনুপ্রাণিত হন। সেখান থেকে এসে (১৮২৭) তিতুমীর তাঁর গ্রামের দরিদ্র কৃষকদের সাথে নিয়ে জমিদার এবং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। তিনি এবং তাঁর অনুসারীরা তৎকালীন হিন্দু জমিদারদের অত্যাচারের প্রতিবাদে ধুতির বদলে 'তাহ্বান্দ' নামে এক ধরনের বস্ত্র পরিধান শুরু করেন। তিতুমীর হিন্দু জমিদার কর্তৃক মুসলমানদের উপর বৈষম্যমূলকভাবে আরোপিত 'দাঁড়ির খাজনা' এবং মসজিদের করের তীব্র বিরোধিতা করেন। তিতুমীর ও তাঁর অনুসারীদের সাথে স্থানীয় জমিদার ও ব্রিটিশ শাসকদের মধ্যে সংঘর্ষ তীব্রতর হতে থাকে। আগেই তিতুমীর পালোয়ান হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন এবং পূর্বে জমিদারের লাঠিয়াল হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তিনি তাঁর অনুসারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলেন।
তিতুমীরের অনুসারীর সংখ্যা বেড়ে এক সময় ৫,০০০ গিয়ে পৌছে। তারা সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হয়। ১৮৩১ সালের ২৩শে অক্টোবরর বারসাতের কাছে নারিকেলবাড়িয়ায় তাঁরা বাঁশের কেল্লা তৈরি করেন। বাঁশ এবং কাদা দিয়ে তারা দ্বি-স্তর বিশিষ্ট এই কেল্লা নির্মাণ করেন।
তিতুমীর বর্তমান চব্বিশ পরগণা, নদীয়া এবং ফরিদপুরের বিস্তীর্ন অঞ্চলের অধিকার নিয়ে সেখানে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। স্থানীয় জমিদারদের নিজস্ব বাহিনী এবং ব্রিটিশ বাহিনী তিতুমীরের হাতে বেশ কয়েকবার পরাজয় বরণ করে। তন্মধ্যে বারাসতের বিদ্রোহ অন্যতম। উইলিয়াম হান্টার বলেন, ঐ বিদ্রোহে প্রায় ৮৩ হাজার কৃষকসেনা তিতুমীরের পক্ষে যুদ্ধ করেন।
অবশেষে ১৮৩১ সালের ১৩ নভেম্বর ব্রিটিশ সৈন্যরা তাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। তিতুমীর স্বাধীনতা ঘোষণা দিলেন "ভাই সব , একটু পরেই ইংরেজ বাহিনি আমাদের কেল্লা আক্রমণ করবে । লড়াইতে হার-জিত আছেই । এতে আমাদের ভয় পেলে চলবে না । দেশের জন্য শহিদ হওয়ার মর্যদা অনেক । তবে এই লড়াই আমাদের শেষ লড়াই নয়। আমাদের কাছ থেকে প্রেরণা পেয়েই এ দেশের মানুষ একদিন দেশ উদ্ধার করবে । আমরা যে লড়াই শুরু করলাম , এই পথ ধরেই একদিন দেশ স্বাধীন হবে।" ১৪ নভেম্বর কর্নেল হার্ডিং-এর নেতৃত্বে ব্রিটিশ সৈন্যরা ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তিতুমীর ও তাঁর অনুসারীদের আক্রমন করে। তাদের সাধারণ তলোয়ার ও হালকা অস্ত্র নিয়ে তিতুমীর ও তার সৈন্যরা ব্রিটিশ সৈন্যদের আধুনিক অস্ত্রের সামনে দাঁড়াতে পারেনি। ১৪শে নভেম্বর তিতুমীর ও তাঁর চল্লিশ জন সহচর শহিদ হন। তাঁর বাহিনীর প্রধান গোলাম মাসুমকে ফাঁসি দেয়া হয়।বাশেঁর কেল্লা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।
আজ তিতুমীর নেই কিন্তু তার প্রতিবাদী চেতনা আজও আছে । তার বাঁশের কেল্লা ইংরেজদের গোলার আঘাতে ভেঙ্গে গেলেও আজও সম্পূর্নরূপে অক্ষত আছে বাংলার কোটি প্রতিবাদী মানুষের হৃদয়ে
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
২৮ জানুয়ারি ’১৬ রাত ০১:০৬
তিতুমীর তার সাহসের জন্য বিখ্যাত। মক্কায় ওমরা পালন করতে গিয়ে তিনিও ওহাবী মতবাদের মত ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। ইতিহাস তার স্বাধীনতাবোধের স্বপক্ষে স্বাক্ষ্য দিবে ঠিক কিন্তু এই অঞ্চলে বাড়ন্ত ওয়াহাবি মতবাদের একটা বড় অংশ তার কাছ থেকেই উৎসাহ পাচ্ছে। ফলে এর দায় থেকে তিনি মুক্তি পাবেন না। এখনকার সময় এসে তিতুমীরের প্রাসঙ্গিকতা খুজতে গেলে আমরা এটাই পাই যে, যেকোন মানুষই ওহাবিজমে আক্রান্ত হতে পারেন। বিশেষ করে অধিকারহারা মানুষের এক্ষেত্রে সাবধানী পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ। মানুষের আবেগ ও ক্রান্তিকাল নিয়ে অমানবিক ওহাবি মতবাদ ব্যবসা করে।
২৮ জানুয়ারি ’১৬ রাত ০১:৫৯
ইংরেজদের বিরুদ্ধে তিতুমীরের সংগ্রাম সত্যিই অসাধারন! এ মহাবীরকে সম্মান জানাই।
২৮ জানুয়ারি ’১৬ বিকাল ০৩:১৪
তীতুমীরকে নিয়ে দারুন একটা গান শুনেছিলাম। আজও হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
যদি তিতুর বাঁশের ঐ ভাঙ্গা কেল্লা হতে
ভেসে আসে জিহাদের সুর
তবে সর্বশক্তি নিয়ে চলে যাব আমি আজ
হোকনা সে দূর বহূদূর।।
থামবনা আমি কভু
২৮ জানুয়ারি ’১৬ বিকাল ০৩:১৭
সাধক:
তীতুমীরের অর্জনকে বাংলাদেশের ক্লাসিফাই করেছে মৌলবাদীরা আর উদার তীতুমীরের চেতনাকে হত্যা করেছে তার আদর্শিক প্রতিপক্ষরা।
২৮ জানুয়ারি ’১৬ বিকাল ০৩:২৫
ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতার বীজ বপণের জন্য বাঙ্গালী জাতি চিরদিন মনে রাখবে এই বিপ্লবীকে