একটি ডাহা মিথ্যে থিওরী।
‘মানুষের অভাব অসীম, সম্পদ সীমিত। এই সীমিত সম্পদ দ্বারা অসীম অভাব পূরণের যে জ্ঞান, তা-ই অর্থনীতি। ’– ডাহা মিথ্যে থিওরী। মানুষের অভাব অসীম নয়, অভাব সীমিত। বরং আকাঙ্ক্ষা বা চাওয়া অসীম, কবরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এ চাওয়া শেষ হয়না । অন্যদিকে পৃথিবীতে সম্পদ সীমিত নয়, সম্পদ পর্যাপ্ত, আল্লাহ তায়ালাই বলে দিয়েছেন।
অনেক দিন যাবত একটা স্মার্ট ফোন কেনার চিন্তা, ডিকশনারি থাকবে, কোরআন থাকবে, আর পিক্সেল এতো ভাল থাকবে যে গাড়িতে বসে নেট চালাতে চোখে কষ্ট হবেনা। কিন্তু ভাল রেজুলেশনের একটা স্মার্ট ফোনের যে দাম, এই মুহূর্তে আমি তা দিতে অপারগ। এখন আমার স্মার্ট ফোনের আকাঙ্ক্ষাকে যদি অভাব বলা হয়, তাহলে অভাবের উপর নির্ঘাত অবিচার করা হবে। আজ ২০-২৫ হাজার টাকায় একটা HTC স্মার্ট ফোনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হলে কাল নিশ্চিত আইফোন কেনার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হবে। মানব সম্প্রদায়ের এ চাওয়ার কোন শেষ নেই- মৃত্যু পর্যন্ত। মানুষ ও তার আকাঙ্ক্ষার যিনি স্রষ্টা, তিনিই সূরা তাকাসুরে বলে দিয়েছেন,
‘তোমরা বেশি বেশি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় নিমজ্জিত... এমনকি তোমরা কবর পর্যন্ত পৌঁছে যাও’।
অন্যদিকে আবরাহাম মাসলো তার চাহিদার সোপান তত্বে বলে দিয়েছেন মানুষের চাহিদার চূড়া হচ্ছে Self Actualization বা আত্মতুষ্টি । শুধু যে কথা বলেননি, এই পৃথিবীর কোন মানুষ ‘আত্মতুষ্টি’ নিয়ে মরতে পারেনা, চাহিদা থেকেই যায়। সুতরাং মার্শালের অর্থনীতি আর আবরাহাম মাসলোর থিউরি পড়ে যারা জীবনের দর্শন নির্ধারণ করে ফেলেছি, তারা জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আকাঙ্ক্ষাগুলোকে ‘অভাব’ বিবেচনা করে তা পূরণের চেষ্টায় শ্রম ও সম্পদ ব্যয় করে যাই।
বস্তুত, অভাব হচ্ছে বেঁচে থাকার জন্য যা দরকার তার অনুপস্থিতি, যেমন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা শিক্ষা, ইত্যাদি। মানুষের অভাব খুব সামান্য। এক বেলা তার এক প্লেট কি দেড় প্লেট খাবারেই পেট ভরে যায়, এক সাথে এক সেটের বেশি কাপড় তার লাগেনা; এক সাথে দুই সেট কাপড় পরিধান করলে বরং তার মস্তিস্কের নাট বল্টু নিয়েই সন্দেহ দেখা দেবে।
০২
পৃথিবীতে অভাব পূরণের মত সম্পদ সীমিত- এটিও এক নির্জলা মিথ্যে কথা। আমার কথা নয়, খোদ আল্লাহ তায়ালা কুরআনের ৭ নম্বর সূরা, সূরা আল আ’রাফের ১০ নম্বর আয়াতে ক্লিয়ার জানিয়ে দিয়েছেন,
‘আমি তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করেছি, অতঃপর এরমধ্যে জীবনোপকরণ দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছি, তোমরা খুব কমই শুকরিয়া আদায় কর।’আসলেই তাই, পৃথিবীতে যে সম্পদ আছে তা পৃথিবীবাসীর 'অভাব' পূরণের জন্য শুধু যথেষ্টই নয়, পৃথিবীর সব মানুষের জন্য সচ্ছল জীবন যাপন করার মত পর্যাপ্ত- যদি আল্লাহ নির্ধারিত বণ্টন ব্যবস্থায় বন্টন করা হয়।
শৈশব থেকে আমাদের মাথায় অর্থনীতির সর্বগ্রাসী সংজ্ঞা আর মাসলোর অতলস্পর্শী চাহিদা তত্ত্ব ঢুকিয়ে দেয়া হয়, আর আমরা নিজেদের 'অভাব' অতিক্রম করে চাহিদার সর্বোচ্চ স্তর পূরণের পেছনে ছুটতে গিয়ে ডানে বায়ে হাজারো অভাবগ্রস্তের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ পাইনা। এর বিপরীতে যদি আমরা শিখে নেই ১৩৮৮ সালে মৃত্যু বরণকারী ইমাম আশ শাতিবির প্রয়োজন তত্ত্ব, মানব জাতি অনেক উপকৃত হবে। তিনি বলেছেন, মানুষের প্রয়োজনকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়-
১। জরুরিয়াত- মৌলিক প্রয়োজন, যা বেঁচে থাকার জন্য আবশ্যক
২। হাজিয়াত- পরিপূরক প্রয়োজন, যা জীবনকে সহজ করে
৩। তাহসিনিয়াত- জীবনকে যা সৌন্দর্যমন্ডিত ও আরামদায়ক করবে
এ তত্ত্ব মানুষের জরুরিয়াত মেটানোর পেছনে ছুটতে বলে, নিজের বেঁচে থাকার প্রয়োজন পূর্ণ হলে অন্যের প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য করতে বলে, অতপর সুযোগ পেলে 'হাজিয়াত' ও রিজিকে বরকত হলে 'তাহসিনিয়াত' এর দিকে নজর দিতে বলে।
আজ যদি বিশ্ববাসীর মন মগজে খোদাই থাকতো যে, মানুষের অভাব সীমিত আর প্রয়োজন পূরণের মত সম্পদ পৃথিবীতে পর্যাপ্ত, তাহলে অভাবগ্রস্ত অভিবাসীদের সাগরে ডুবে মরতে হতো না, কিংবা জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা রোহিংগা মুসলিমদেরকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতে পারতোনা আওয়ামী বাংলাদেশ।
সর্বনাশা ভোগবাদী জ্ঞানের হাত থেকে পৃথিবীবাসীকে বাঁচাতে আত্মসমর্পণকারী মুসলমানদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে ।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
মন্তব্য: ৭ টি
২৮ জানুয়ারি ’১৬ রাত ০১:১৫
সারা বিশ্বে মুসলিমদের দুর্দশার প্রধান কারন হল কম্প্রমাইজিং এর অভাব। সারা বিশ্বের সকল মানুষ এদের চিন্তার বাইরে। মুমিন আর কাফের দিয়ে বিশ্ব চলে না। কবে বুঝবে এরা??