পুলিশ হয়তো সরকারের চেয়ার নিয়েই টানাটানি শুরু করে দিবে।
এক সময়ের খুব কাছের বন্ধু যাকে প্রধান শিক্ষক কেরানী থেকে শিক্ষকের মর্যাদা দিলেন, আবার যার হাত ধরে প্রধান শিক্ষক তিন তলা বাড়ি দিলেন, শেষ পর্যন্ত সেই কিনা স্যারের চেয়ার নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিলো!
আজকে সরকার এবং পুলিশের অবস্থা হয়েছে অনেকটা প্রধান শিক্ষক এবং হালিম স্যারের মত। বিরোধী দল দমনে সরকার পুলিশকে তার রাজনৈতিক পেটুয়া বাহিনীর মত ব্যবহার করল। আর এই সময়ে পুলিশ চালালো গ্রেফতার বাণিজ্য! এই গ্রেফতার বাণিজ্য বিরোধী দলের উপর চালানোর কারণে সরকারও সন্তুষ্ট হল। কিন্তু পুলিশের খাওয়ার পরিমাণ এতোটাই বেড়ে গেছে যে তারা এখন সরকারী বেসরকারী আর কিচ্ছু বাচ বিচার না করে সব খেয়ে ফেলছে! এখন পুলিশের কেউ কেউ বড় মুখ করে বলছেন, “ মাছের রাজা ইলিশ, আর দেশের রাজা পুলিশ।”
দেশের রাজা পুলিশ কতৃক,বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা রাব্বি এবং ডিসিসি কর্মকর্তা নির্যাতনের পর তারা আরও কি কি করছেন যা আমাদের লোক চক্ষুর আড়ালেই রয়ে গেছে সে রকম তিনটি ঘটনা উল্লেখ করছি!
ঘটনা নংঃ১
চট্টগামের চকরিয়া থানার ওসি ও এসআইসহ আটক ৫,
চোরের উপর বাটপারি করে বড় ধরনের ইয়াবার চালান আটকের পর ঢাকায় পাচার কালে পুলিশের হাতেই ধরা খেলেন চকরিয়া থানার ওসি ও এসআইসহ ৫ জন। শুক্রবার বিকালে সিতাকুন্ড হাইওয়ে পুলিশের টহল দল এদের আটক করে সীতাকুন্ড থানায় সোর্পদ করেছেন।
বৃহস্পতিবার ইস্তেমার মুসল্লিবাহি টেকনাফ স্পেশাল গাড়ী যোগে ইয়াবার চালানটি ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে চকরিয়া খুটাখালী বাসস্টেশনে গাড়ীটি থামানোর চেষ্টা করেন পুলিশ দল। পরে চকরিয়া বানিয়ারছড়া এলাকায় গাড়ী হতে ৪ কোটি টাকার ইয়াবা জব্দ করলেও পাচারকারী এবং গাড়ীটি ছেড়ে দেয়।
পুলিশ এবং একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, গত বৃহষ্পতিবার দুপুরের দিকে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ইজতেমার মুসল্লিবাহী (টেকনাফ স্পেশাল ) একটি গাড়িতে করে ইয়াবার একটি চালান চট্টগ্রামের দিকে আসছিল।
গোপনসূত্রে এ খবর পেয়ে চকরিয়া থানা পুলিশের ওসি প্রভাত চন্দ্র ধরের নেতৃত্বে চকরিয়া খুটাখালী বাসস্টেশন হতে গাড়িটিকে ধাওয়া করে এবং ইয়াবাসহ গাড়টি আটক করেন। পরে আবার ওই পুলিশ সদস্যরা সোর্সসহ কার গাড়ি এবং ইয়াবা নিয়ে বিক্রির জন্য ঢাকায় যাত্রা করলে গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে সীতাকুন্ড হাইওয়ে টহল পুলিশ ভাটিয়ারীর মাদামবিবির হাট এলাকায় হতে আটক করেন। এসময় এর ভেতর থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও নগদ ১০ লাখ টাকা। (ইয়াবা বিক্রির অগ্রিম টাকা)উদ্ধার করে পুলিশ। আরোহীরা নিজেদের চকরিয়ার পুলিশ পরিচয় দিলে হাইওয়ে পুলিশের সন্দেহ হয়। পরে হাইওয়ে পুলিশ সীতাকুন্ড থানা পুলিশের কাছে সোর্পদ করা হয় পুলিশ কর্মকর্তাসহ ইয়াবাবাহী গাড়িটি।
ঘটনা নংঃ২
ধরা খেলেন সিএমপির ওসি,
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রঞ্জিত বড়–য়া নারী কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে গেছেন। শ্লীলতাহানির শিকার এক নারী তার বিরুদ্ধে আদালতে ঠুকে দিয়েছেন মামলা। আদালত তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম রহমত আলীর আদালতে ওসির বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে নুর নাহার দুলি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ওসি ছাড়াও অপর দুই আসামি হলেন, পাহাড়তলীর বাসিন্দা সুলতান আহমদ ও ইমতিয়াজ আহমদ।
আদালত পুলিশ জানায়, মামলাটি আমলে নিয়ে আদালত অতিরিক্ত এসপি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করে আগামী ২৮ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। ওই নারী ওসির বিরুদ্ধে মারধর, শ্লীলতাহানি, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও ঘরে ঢুকে ভাঙচুরের অভিযোগ এনেছেন।
ঘটনা নংঃ৩
বরিশালে ৩ দিনের রিমান্ডে পুলিশ কনস্টেবল,
বরিশাল মহানগর পুলিশের এক কনস্টেবলকে তিনদিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) আদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার বরিশাল মুখ্য মহানগর হাকিম (চিফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট) মো. আলী হোসাইন ওই আদেশ দেন।
রিমান্ডে নেয়া কনস্টেবল হলেন, বরিশাল মহানগর পুলিশ (বিএমপি) লাইনের এএসফ শাখার কনস্টেবল মো. আল আবিদ (২১)। তিনি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার কুড়িয়াখালীর সোনাতলা গ্রামের মো. আ. হাকিমের ছেলে।
বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র এস এম আসিফ জামানকে অপহরণ, মুক্তিপণ গ্রহণ এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে করা মামলায় তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
কোতয়ালী মডেল থানায় গত ১২ জানুযারি ওই মামলা করেন ছাত্রের বাবা বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর এজিএম মো. ওয়াহিদুজ্জামান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতয়ালী মডেল থানার এসআই অরবিন্দ বিশ্বাস পূর্বপশ্চিমবিডিকে জানান, মামলার দুই আসামি কনস্টেবল আবিদ ও নগরীর গোরস্থান রোডের গোলাম রহমান বাবুলের ছেলে গোলাম আল রাজী রনীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
উভয়ই বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। মামলার প্রকৃত রহস্য ও চোরাই মালামাল উদ্ধার, জড়িত অন্য আসামিদের পরিচয় সংগ্রহ, গ্রেফতারের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ এবং সঙ্গে নিয়ে অভিযানে যেতে উভয়কে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হয়। আদালত আবিদের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বাদীর আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ ইমন পূর্বপশ্চিমকে জানান, বিএম কলেজের ছাত্র আসিফ জামান গত ১১ জানুয়ারি তার ফুফাতো ভাই সৌখিনকে বাজাজ পালসার ব্রান্ডের মোটরসাইকেলে করে বরিশাল পলিটেকনিক কলেজে পৌঁছে দেয়।
কলেজ গেটে তার পথরোধ করে আটকে নগরীর গোরস্থান রোড এলাকার আতাহার আলী খন্দকারের নির্জন বাড়ির বাগানে নেন। সেখানে তার কাছ থেকে মোটরসাইকেল রেখে দিয়ে চাঁদা দাবি করেন। পরে তার ব্যবহৃত মোবাইল কেড়ে নিয়ে বাদী ছাত্রের বাবার কাছে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।
এর ফাঁকে বাদীর ছেলে সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে আসেন। তখন বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করা হয়। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই দুজনকে আটক করে। বাদীর ছেলের মোটরসাইকেল ও মোবাইল সেটসহ অন্য আসামিরা পালিয়ে গেছেন।
আর পুলিশ সম্পর্কে বলতে গিয়ে দেশের বিশিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গরা বলেছেন,
ড. তারেক শামসুর রেহমান
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক,
‘বিচারহীনতাই পুলিশকে এ অবস্থায় এনেছে। এর আগে পুলিশ মাদক বিক্রিসহ ছোট খাটো অপরাধ করেছে। বিচার না হওয়ায় এখন ধীরে ধীরে বড় অপরাধের দিকে হাত বাড়াচ্ছে। এদেরকে দ্রুত থামাতে না পারলে এরা নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাবে।’
‘শুধু পুলিশ না, সকল অপরাধীকেই বিচরের আওতায় এনে সুষ্ঠ বিচার করতে হবে। কিন্তু সেটা তো হচ্ছে না। ছোটখাটো সাজা দিয়েই শেষ। এমন হলে তারা অপরাধী হবে না তো কি হবে?’
‘আমি মনে করি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অপরাধী নয়। কিন্তু তাদের পর্যাপ্ত মোটিভেশনের অভাবে নিচের দিকের লোকরা অপরাধপ্রবন হচ্ছে। তাই গোটা বাহিনীকে এ দায় থেকে রক্ষা করতে হলে তাদের সঠিক আদর্শিক প্রশিক্ষণ দরকার। আর ঊর্ধ্বতনদের মনিটরিং বাড়ানো দরকার।’
‘এ ছাড়াও পুলিশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার সকল ব্যবস্থা গ্রহন, সকল কাজের দায়বদ্ধতা ফিরিয়ে আনা ও ছোট বড় সকল অপরাধের বিচার করা দরকার।’
ড. এনামুল হক
পুলিশের সাবেক মহা পুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি)
‘আমি এই বিষয়ে গত দুই বছরে অনেক টক শো করেছি। সাক্ষাৎকার দিয়েছি। কথা বলেছি। এখন আর সাক্ষাৎকার দেই না। কারণ কোনো লাভ হয় না। তারপরও শুধু এটুকুই বলতে চাই- পুলিশ শুধু বেপরোয়া হয়নি, আমরা সবাই বেপরোয়া হয়েছি। সবাই যার যার অবস্থান থেকে উপরে থাকার জন্য অথবা বড় হওয়ার জন্য বেপরোয়া হয়েছি।সেখানে পুলিশ হলে দোষ কোথায়?’
‘সুতরাং সংশোধন সবাইকেই হতে হবে।শুধু পুলিশের সংশোধনে কোনো সমাধান আসবে না।’
মো. নূর খান
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তদন্ত ও তথ্য সংরক্ষন ইউনিটের পরিচালক
‘পুলিশ এখন হঠাৎ করে বেপরোয়া হয়নি। অনেক আগে হয়েছে। ধীরে ধীরে পাল্লা দিয়ে পুলিশের অপরাধ বাড়ছে। এর কারণগুলো হলে- নিয়োগ বাণিজ্য, দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নিয়োগ ও ব্যবহার, সরকারকে আমরা এনেছি পুলিশের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হওয়া ও অনেকটা টেন্ডারবাজের মত হয়ে উঠা। এ ছাড়া সিভিল টিম একটি বড় সমস্যা। মনিটরদের দূর্বল মনিটরিং এবং দলীয় ও আঞ্চলিকতাকে প্রাধান্য দেওয়ায় পুলিশের মধ্যে বেপরোয়াভাব কাজ করে।’
‘বিশেষ করে ক্ষমতাবানদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকায় ঊর্ধ্বতনদের না মানা- এটা বর্তমানে বেশি বেড়ে গেছে। প্রতিদিন বাড়তি আয় করতে হয় এবং ঊর্ধ্বতনদের ভাগ দিতে হয়, নিয়োগের ঘুষ পোষাতে অপরাধ করতে হয়। এর ফলে পুলিশের মধ্যে চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে।’
‘এ ছাড়া সিন্ডিকেট তৈরি, পদোন্নতিতে আঞ্চলিকতা ও দলীয় প্রাধান্য, রাতে টহল ও টহল দেখভাল করা হয় না। ফলে পুলিশ মনমত কাজ করে।’
‘শুধু পুলিশ না, সারা দেশের সকল ক্ষেত্রে এ সমস্যা। সর্বপরি সরকারের সদিচ্ছার অভাবও একটি বড় সমস্যা।’
‘এই সংকট থেকে সমাধানে পুলিশকে সম্পুর্ন আইনের মধ্যে আসতে হবে ও আইন অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে। সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে ট্যাস্কফোর্স গঠন করে তিনমাস তদন্ত করে সমাধানের ব্যবস্থা নিতে হবে। ট্যাস্কর্ফোসে থাকবে সাবেক বিচারপতি, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি ইত্যাদি। তারা তদন্ত করে দেখুক কেন এমন ঘটছে, কারা করছেন, পরে সে অনুযায়ি ব্যবস্থা নিক।
‘দেশে যাই ঘটুক, সব দায়ভার কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারের (রাজনীতিবিদদের) ভাগেই পড়ে। তাই নিজেদের র্স্বার্থেই এর সমাধান প্রয়োজন।’
দেশের রাজা পুলিশ যা শুরু করেছে, শেষ পর্যন্ত হয়তো সরকারের চেয়ার নিয়েই টানাটানি শুরু করে দিবে।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
১৯ জানুয়ারি ’১৬ সকাল ১১:৩৯
আপনেরে কানে কানে একটা প্রশ্ন করি, আপনাগো হালিম স্যার কি আ-লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দূর্ণীতি শুরু করছে? আপনাগো হেড মাস্টার কি এই সরকারের সময় দূর্ণীতি শিখছে? উত্তর যদি 'না' হয় তাইলে জাইনা রাখেন পুলিশও এইসব অপকর্ম এই সরকারের আমলে শিখে নাই। তাই বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন বইলা আসলে যুদ্ধাপরাধীগো ওপর জনগণের ন্যায্য প্রতীশোধের কথা কইলে লোকে থুথুই ছিটাইবো।
লোকে কিন্তু কানে কানে না, প্রকাশ্যেই কয়- ল্যাঞ্জা ইজ ভেরি ডিফিকাল্ট টু হাইড। কিছু কাঠাল পাতা ছিটাইছি শ্যাষ করেন।
১৯ জানুয়ারি ’১৬ সন্ধ্যা ০৭:১৬
সাধক:
ট্রিগার হ্যাপি পুলিশিং আমাদের জন্য খারাপ হতে বাধ্য। আমরা আইনের রক্ষকদের আইনের বর্ম পড়েই দেখতে চাই।