'জীবনের ঘানি টেনে সময় পার'
এক.
জব্বার মিয়া মাত্র ৭ বছর বয়স থেকেই ট্রাক স্ট্যান্ডে পড়ে আছে। মা-বাবা দুজই যখন একে একে চলে গেলেন; তখন যে স্থানটি তাকে আপন করে টেনে নেয়, তা-ই মাধবদী ট্রাক স্ট্যান্ড। আসলে কথাটি আপন করা নয়, বলা যায় নিজ স্বার্থে বাধ্য করা। মাত্র ৭ বছরের একটা ছেলে একটা ব্যাস্ততম ট্রাকস্ট্যান্ডের ড্রাইভার ও কন্ডাকটরদের চা-পরটা বয়ে নেয়ার বিশাল কর্মযজ্ঞ সামাল দিয়েছে। একটু বড় হবার পর জেনেছে তাকে টং ঘর ছেড়ে ভ্রমণে নামতে হবে। কোন ট্রাকের হেলপার নেই, ডাক পড়ল জব্বারের। সেও একটু ভালো থাকবার আশায় নিজেকে সঁপে দেয় কোন এক কাট্টা ড্রাইভারের হাতে। রাত-বিরাতে রাস্তায় তীব্র ঝাঁকুনিতে ঘুম ভেঙ্গে যায়। সাথে কল্পনায় আঁকা মা হঠাৎ ঝটকায় স্বপ্নের মাঝেই হারিয়ে যায়। স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়...
দুই.
আজ ৭০ বছরে দাঁড়িয়ে দুইটি বিপত্নিক কণ্যার বোঝা বইতে হাতে নিতে হয়েছে ভিক্ষার থাল। দিন শেষে সে থালার ছিদ্র দিয়ে আকাশ দেখাটা তার অভ্যাস। কখনো সে ফুটো দিয়ে ভরা চাঁদ চোখে পড়ে, কখনও বা নিকশ কালো! মনে আনন্দ কিংবা কষ্ট যা-ই হোক, সত্য কথা হল- থালাটি ভাঙ্গা। আরও বড় সত্য হল- ভাঙ্গা থালাই তার পুঁজি।
তিন,
এ বয়সে এসে হাজারো স্মৃতি হাতড়ে ফেরে জব্বার মিয়া। হিসেব মেলে না। তার কাছে জীবনের ভিন্ন মানে এসে ধরা দেয়। সে ঘানির ভার অত্যধিক। বুকে ওঠা নিঃশ্বাস যন্ত্রণাই দিয়েছে কেবল।
কোনদিন সস্থির এক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবে। এটাই আজ জব্বার মিয়ার জীবনে একমাত্র লক্ষ্য...
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
মন্তব্য: ১০ টি
১৮ জানুয়ারি ’১৬ বিকাল ০৩:০৫
'জব্বার মিয়া দ্রুত শেষ নিস্বাশ ত্যাগ করে শান্তি পাক' - এখন এরচেয়ে সঠিক দোয়া আর পাবেন না।