রক্ষক যখন ভক্ষক তখন বেড়ার কি দোষ!
তুমি আসবে বলে,দেশটি এখনো গুজরাট হয়ে যায়নী”।

ঠিক এমনী একটি অদ্ভুত শহরের নাম হলো কাক তাড়ুয়ার শহর, যেটি জাপানে অবস্থিত।এই শহরে ঢুকলে আপনি এমন কোন দোকান বা ক্ষেত পাবেন না যেখানে প্রচুর পরিমাণে কাকতাড়ুয়া দেখা যাবেনা। শস্য ক্ষেতকে পোকামাকড়ের হাত থেকে বা পশু-পাখিদের আক্রমনের হাত থেকে বাচানোর জন্য যে কাকতাড়ুয়া আমাদের দেশে ব্যবহার করা হয় তার মূলভাবনা মূলত জাপান থেকেই আমদানী করা।মানুষের মত হাত,পা.মাথা.চোখ ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা কাকতাড়ুয়া।এক কথায় মানুষের প্রতিকৃতি বানিয়ে ক্ষেতের মাঝে মাঝে বসিয়ে দেয়া হয় যাতে কাকতাড়ুয়াকে মানুষ ভেবে পশু পাখি ও পোকামাকড়েরা ভয়ে ক্ষেতে আক্রমন না করে।

কাকতাড়ুয়ার সফলতা, জাপান অতিক্রম করে ছড়িয়ে পরে সারাবিশ্বের ন্যায় আমাদের বাংলাদেশেও।আমাদের দেশে কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার বেশ উল্লেখযোগ্য।কারন একটাই পোকামাকড়ের পাশাপাশি পশুপাখির আক্রমনের হাত থেকে অনেকাংশেই রক্ষা পাওয়া যায়।শস্যক্ষেতকে পশুপাখির হাত থেকে রক্ষার জন্য যে, কাকতাড়ুয়া আপনি বসালেন, তারা যদি রক্ষা করে ভালো কিন্ত রক্ষা না করে যদি উল্টো ধ্বংস করে তাহলে চারিদিকে বেড়া দিয়ে লাভ কি বলেন! এটা কি সম্ভব?হ্যা এই ডিজিটাল জমানায় সবই সম্ভব!আসুন তাহলে একটি গল্প শুনে নেই….?
জাপানের দুটি শহর ইয়োকোহামা ও হিরোশিমা। জানের দুইবন্ধু কিনজু লিটলবয় ও শিকিং,যাদের বসবাস এই শহরদ্বয়ে। লিটলবয়ের বাস ইয়োকোহামায় আর শিকিংয়ের বাস হিরোশিমায়। ছোটকাল থেকেই তাদের মধ্যে খুবই অন্তরঙ্গ সম্পর্ক।পারলে একজন আরেকজনের জন্য জান দিয়ে দেয়। লিটলবয় ব্যবসায় একজন কাকতাড়ুয়া আবিষ্কারক ও বিক্রেতা অপরপক্ষে শিকিং হলো ক্ষুদ্র কৃষক,যার শস্য উৎপাদন ও বিক্রির উপর গোটা সংসার চলে। সময়ের ব্যবধানে কাকতাড়ুয়া ব্যবসায়ীর অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয় অন্যদিকে কৃষক শিকিংয়ের অর্থনৈতিক সফলতার চরম উন্নতি দেখা দিতে থাকে,যা কোন ভাবেই লিটলবয় মেনে নিতে পারেনা। ষঢ়যন্ত্রের প্রহর গুনতে থাকে কিন্ত কোন কূলকিনারা বের করতে পারছিলোনা।এদিকে হঠাৎ করে শিকিংয়ের শস্যক্ষেতে প্রচুর পরিমানে পাখির উপদ্রব দেখা দেয়,যা কোনভাবেই দমন করা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিলনা্। ফলে তার জানের বন্ধু লিটলবয়ের শরনাপন্ন হয় শিকিং!সবকিছু খুলে বলার পর মিচকি হাসতে থাকে লিটলবয় আর মনে মনে বলতে থাকে,এবার আর তোমার রক্ষা নেই শিকিং!আমার যখন দুঃসময় তখন তোমার সু-সময় এটা হয়না। দুই বন্ধুর মাঝে অর্থনৈতিক দুরুত্ব কম হওয়াই ভালো! কি বলো শিকিং? আরে কি চিন্তা করছো লিটলবয়?কিছুনা শিকিং,তুমি চিন্তা করোনা আমি দেখছি কি করা যায়!খুব সুন্দর করে আপ্যায়ন করানোর পরে বিদায়ের সময় লিটলবয় এই বলে শিকিংকে আশ্বাস দেয় যে,এমন ব্যবস্থা করবো, তোমার শস্যক্ষেতে পোকামাকড়তো দুরের কথা কোন পশুপাখি আক্রমনের সাহস পাবেনা।কথাটি শুনে হাসিখুশি মনে বিদায় নেয় শিকিং। এক সপ্তাহ পরে শিকিংয়ের বাসায় অত্যাধুনিক অনেকগুলো কাকতাড়ুয়া নিয়ে হাজির লিটলবয়।সে নিজ হাতে শিকিংয়ের গুরুত্বপুর্ন আবাদী ক্ষেতে কাকতাড়ুয়া গুলো লাগিয়ে দিয়ে যায়। প্রথম দুদিনের সুফল পেয়ে শিকিং ব্যাগভর্তি টাকা পাঠিয়ে দেয় বন্ধুর বাসায়। সকাল থেকে সন্ধ্যা নাগাদ কাকতাড়ুয়া গুলোর হাত নাড়ানারিতে কোন পাখি শস্যক্ষেতে বসতে সাহস পায়নী। ফলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে শিকিং।কিন্তু তৃতীয়দিনেই ঘটে যায় তার উল্টো কাহিনী! তার ছয়টি গুরুত্বপুর্ন ক্ষেতের মধ্যে তিনটি ক্ষেতের ফসল কে বা কারা দুমড়ে মুচড়ে ফেলেছে,রিতিমত মাথায় হাত শিকিংয়ের। রাতের অন্ধকারে কারা তার এই ধরনের বড় সর্বনাশ করলো সেটা অনুসন্ধান করার জন্য শিকিং বাদবাকি তিনটি ক্ষেতে নিজেই পাহাড়া দিতে লাগলো। গভীর রাতে হঠাৎ শিকিংয়ের চোখে পড়লো যে,কাকতাড়ুয়া গুলো জিবন ফিরে পেল এবং আমার শস্যক্ষেত ধ্বংস করতে লাগলো।আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম আর ভাবলাম রক্ষক নামের বন্ধুর দেয়া কাকতাড়ুয়াই যদি ভক্ষক হয় তাহলে বেড়া দিয়ে লাভ কি!?শিকিংয়ের আর বুঝতে বাকি থাকেনা যে,রোবট নামের বিদ্ধংসী কাকতাড়ুয়া আমাকে পথে বসানোর জন্যই আমার ক্ষেতে বসানো হয়েছিল যার রিমোট ছিল প্রানের বন্ধু লিটলবয়ের হাতে! এ যেন আমেরিকার লিটলবয় দিয়ে হিরোশিমাকে গুড়িয়ে দেবার মত অবস্থা। সাবাস কাকতাড়ুয়া, সাবাস বন্ধু লিটলবয়!

প্রতিটি পুলিশী রাষ্ট্রের নিরাপত্তা কর্মীদের সাথে লিটলবয়ের কাকতাড়ুয়ার মাঝে আমি কোন পার্থক্য দেখিনা।দেখিনা এজন্য যে,দীপনকে দিনেদুপুরে জনবহুল একটা মার্কেটে ঢুকে খুন করে,শাটার বন্ধ করে তালা মেরে চলে গেলেও রাষ্ট্র প্রধানের চোখে পরেনা।দেখিনা এজন্য যে,একুশে বইমেলার মত জনবহুল যায়গায় হাজারো মানুষের মাঝে পুলিশের সামনে যখন অভিজিত রায়কে চাপাতি দ্বারা কুপিয়ে হত্যা করা হয় তখনো খুনীদের কে দেখতে পায়না রাষ্ট্র! দেখতে পাবে কি করে,কাকতাড়ুয়া নামের নিয়ন্ত্রিত রোবট পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনী যে তারই তৈরি,যার রিমোট কন্ট্রোল করা হয় গণভবন থেকে!
এ জন্যই বলি,রক্ষক যখন ভক্ষক তখন বেড়ার কি দোষ!
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
২৬ ডিসেম্বর ’১৫ বিকাল ০৫:৫৬
সবই ঠিক আছে। কিন্তু গণভবন থেকে কেন রিমোট টেপা হবে? তার তো যৌক্তিক ব্যাখ্যা লাগবে। আপনি তো শত্রু থেকে বন্ধুর দিকেই বন্দুক তাক করালেন! ছাগুপনা করে কত দিন?
২৬ ডিসেম্বর ’১৫ সন্ধ্যা ০৬:০০
বুদ্ধিজীবিদের নানামুখী শত্রু তৈরি হয়। এটা আগেও ছিলো এখনও আছে। ব্লগারকে ধন্যবাদ গুরুত্বপূর্ণ ব্লগের জন্য।
২৬ ডিসেম্বর ’১৫ সন্ধ্যা ০৬:০৭
@এদলাল- কথায় বলে ল্যাঞ্জা ইজ ভেরি ডিফিকাল্ট টু হাইড! শেষে তো বের করতে হল!!
২৬ ডিসেম্বর ’১৫ সন্ধ্যা ০৬:৪৮
গণভবন বেঁচে থাক হাজার বছর!আমার কাছে হাওয়া ভবন ও গণভবন সব একই ভবন লাগে!ষঢ়যন্ত্রের আকড়া।