রবীন্দ্রনাথের শ্যামা প্রেম ও রাষ্ট্রের চরিত্র!
আজ থেকে কয়েক দিন পুর্বে মেজাজটা চরম খিটখিটে ছিল।কিছুই ভাল লাগছিল না।অনেক চেস্টা করেও যখন মেজাজ সাভাবিক করতে পারছিলাম না হুট করেই শরনাপন্ন হলাম আমাদের অনেক এর প্রিয়পাত্র জুকার বার্গের কাছে।তার কাছে আমার মনের অবস্থা তুলে ধরলাম“মেজাজটা চরম খিটখিটে হয়ে গেছে,প্লিজ উত্তরনের উপায় বলুন”।বলা মাত্রই উনি অনেক উপায় আমার সামনে উপস্থাপন করলেন।মনে হচ্ছিল ভদ্রলোকটি তার ভক্তের জন্য কিছু উপায় আগেই উদভাবন করে রেখেছিলেন,যেগুলো খিটখিটে মেজাজকে মুহুর্তের মধ্যেই ভাল করে দেয়।আমার খিটখিটে মেজাজকে ভাল করে দেবার জন্য নিম্নোক্ত উপায় গুলো বাতলে দিলেন।
#বাড়িতে রেখে আসা বউয়ের কাছ থেকে দু-একদিনের জন্য ঘুরে আসো,দেখবে মন ভাল হয়ে গেছে।
#ভাইয়া,বাড়িতে এসে ঘুরে যান দেখেবেন মন ভাল হয়ে গেছে।
#কাজ নাইতো বসে বসে বিটিভির নিউজ দেখ
#start a vegetarian,change ur food habit
#bose bose movie dekhen
#val sirte thako
#কিছু টাকা জলে ফেলে প্রচুর পানি খেয়ে ফাকা যায়গায় গিয়ে যা মু্ঞচায় গালিদে,তারপর স্ট্যাটাস দে।
#একটু আধটু ইরকম হয়েই থাকে,ভাল হলে ঠিক হয়ে যাবে ইত্যাদি সহ আরো হরেক রকমের উপায় বাতলে দিলেন,যাতে মন ভাল হয়ে যায়।তার দেয়া উপায়গুলোর মধ্যে থেকে অনেক গুলো উপায় ভাল লেগেছে।চেয়েছিলাম কিছু পরামর্শ পালন করবো কিন্তু যখনই বলল,বাল ছিড়তে থাকো,মাল খেয়ে ইচ্ছেমত গালিগালাজ পারতে থাক,বউয়ের কাছ থেকে একটু ঘুরে আসো দেখবা মন ভাল হয়ে গেছে তখনই উনার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম।হাজার হাজার মানুষের সামনে আমাকে বেইজ্জতি করলেন,অপমান করলেন।অনেকেই আবার তার অপমান জনক পরামর্শকে পছন্দ দিয়েছেন।উনি যদি একা অপমান করতেন একটা কথা ছিল,অন্যকে দিয়েও করিয়েছেন!মেনে নেওয়া যায় বলুন?
তাই স্দ্ধিান্ত নিলাম মনের খিটখিটে ভাব দুর না হলেও তার কাছে যাবোনা এবং তার পরামর্শকে মানবোনা।একলা চল, নীতি গ্রহন করলাম।অফিস শেষ করে সোজা শিল্পকলার দিকে রওনা হলাম।সন্ধ্যা ৬.৩০ টার দিকে পৌছলাম শিল্পকলায়।দেখতে লাগলাম আজ কি কি নাটক আছে।দেখলাম,জাতীয় নাট্যশালায় আছে নাগরিকের বারামখানা এবং পরীক্ষন হলে আছে রবীন্দ্রনাথের শ্যামা প্রেম।সিদ্ধান্ত নিলাম,আজ কোন কথা হবেনা,দেখবো শ্যামা প্রেমা।কথা যা কাজ তাই।টিকেট কেটে ৭.০০টার সময় হলে প্রবেশ করলাম,তিনবার ক্রিং ক্রিং বেল বাজানোর মধ্যে দিয়ে শুরু হল নাটকঃশ্যামা প্রেম
রচনাঃরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
নির্দেশনাঃনূনা আফরোজ
একজন গণিকার মধ্যে প্রেমের জন্য যে ,হাহাকার থাকতে পারে এবং প্রেমের জন্য সবকিছু বিসর্জন দিতে প্রস্তুত থাকতে পারে,রবীন্দ্রনাথের সৌজন্যে সেটা দেখার সৌভাগ্যে হল।আর সেই গনিকাই হল নাটকের মূল চরীত্র শ্যামা সুন্দরী।শ্যামা গাঁয়ের খেটে খাওয়া এক দরীদ্র পরিবারের মেয়ে।ব্রিটিশদের পা চাটা জমিদারদের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে তার পরিবার ধ্বংস হয়ে যাবার পরে, শ্যামা শহরে এসে পেটের দায়ে গনিকার পেশা গ্রহন করতে বাধ্য হয়।একপর্যায় গনিকা পেশার বদৌলতে শ্যামা সুন্দরী অঢেল সম্পদের মালিক হয়ে যান।এভাবে চলতে চলতে একদিন উথ্থিও এর সাথে দেখো হয়ে যায় শ্যামার।যার সাথে জিবনের শৈশবের হাসিখুশিময় সময় কাটিয়েছেন।কখনো বৃস্টিতে ভিজেছেন,কখনো নদীতে একসাথে সাঁতার কেটেছেন,কখনোবা কাঁনামাছি খেলেছেন একসাথে।হাজারো ম্সৃতির রোমাঞ্চে কিছু সময়ের জন্য দুজনেই ফিরে যায় শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলোতে।গ্রামে থাকতেই শ্যামার প্রতি আলাদা একটা টান অনুভব করতো উথ্থিও।পরিনত শ্যামা সুন্দরীকে দেখার পরে যেন,তার চাপা প্রেমটাও বুঝি পরিনত বোধ করতে লাগলো।কিছুদিন পর পরই সে শ্যামার বাসায় আসতো এবং অনেক সময় ধরে গল্প করে যেত।এভাবে কিছুদিন চলার পর উথ্থিও বলেই ফেলল,শ্যামা তোকে ছাড়া আমি যে আর কিছুই চিন্তা করতে পারিনা।আমি তোকে পেতে চাই,সারাজিবনের জন্য পেতে চাই।নিরবতা..!কেউ কোন কথা বলেনা।
শ্যামা সুন্দীর সত্যিকার অর্থে কিছুই করার নেই।কিছুদিন পূর্বেই সে একজনকে কথা দিয়েছে যে,তাকে নিয়ে সে ঘর বাধবে এবং গনিকাবৃত্তি ছেড়ে দুরে কোথাও চলে যাবে।আর যাকে কথা দিয়েছে সে হল বিদেশী সওদাগর বজ্রসেন।শ্যামা সুন্দরী পবিত্র সংসারে মনোনিবেশ করবে বলে,গনিকা বৃত্তি একপ্রকার ছেড়েই দিয়েছেন।বজ্রসেন ও চায়না,শ্যামা আর গনিকাবৃত্তি করুক।বজ্রসেনের জন্যই শ্যামা সুন্দরী দীর্ঘদিনের পেশা গনিকাবৃত্তি ছেড়ে দিয়েছেন বলতে পারেন।ভালবাসার জন্য মানুষ সবই পারে,গনিকাবৃত্তিতো কোন ব্যাপারই নয় তার কাছে।সম্মান ও মর্যাদা এবং একটু সুখে শান্তিতে জিবন-যাপন করার জন্য শ্যামা সুন্দরী ত্যাগ করলেন ব্যাস্যাবৃত্তি/গনিকাবৃত্তি।আর সেই গনিকাবৃত্তি ত্যাগই কাল হয়ে দাড়াল শ্যামার শান্তির পথে।পদে পদে শুরু হল বাঁধা আর বিপত্তি।তার সাথে আবার উথ্থিওর নিঃস্বার্থ ভালবাসা।শ্যামার বুঝতে আর বাকি থাকেনা তার জন্য যদি কেউ জিবন দিতে পারে সে হল উথ্থিও,আর কেউ নয়।এমন কি বজ্রসেন ও নয়।
শ্যামা আর কিছুদিনের মধ্যেই বজ্রসেনকে নিয়ে দূরে কোথাও পালিয়ে যাবে।এর মধ্যে জমিদারের কাছ থেকে ফরমান আসলো যে,শ্যামাকে জমিদার বাড়িতে নাচতে হবে মানে তাদের মনোরন্জন করতে হবে।শরীর খারাপের কথা বলে তাদের বিদায় করার চেস্টা করেন কিন্তু তাকে নির্দেশ দেওয়া হয় শরীর ভাল হওয়ার তিনদিন পরেই তাকে নাচতে হবে।তিনদিন অতিবাহিত হওয়ার পরে শ্যামার অনুপষ্থিতি দেখে আবার শ্যামার বাসায় চলে আসেন জমিদারের সেনাপতি।এবারও অনাগ্রহ প্রকাশ করলে,সেনাপতির কাছে বিষয়টি সন্দেহের উদ্রেক করে।পরে অনুসন্ধান করে তারা জানতে পারে যে,বজ্রসেনের সাথে ঘরবাঁধার স্বপ্নই শ্যামাকে গনিকাবৃত্তি থেকে বিরত রাখছে।জমিদারের আদেশ অমান্য করাকে সাভাবিক ভাবে নেয়নি মহামান্য জমিদার।শ্যামার সুখ শান্তি কিভাবে নষ্ট করা যায় এবং বজ্রসেনকে শায়েস্তা করা যায় সেই দিকে মনোনিবেশ করলেন সমগ্র জমিদারী শাসকবর্গ।
বজ্রসেন ছিলেন একজন বিদেশী সওদাগর।ফলে তাকে ফাসানোর কৌশল আটতে খুব একটা বগে পেতে হয়নি জমিদারকে।বজ্রসেনের নামে সমন জারি করা হল যে,সে একজন বিদেশী গোয়েন্দা।আমাদের রাজ্যের ক্ষতি সাধনের জন্য ষঢ়যন্ত্র করছে।কাজেই বজ্রসেন একজন রাষ্ট্রদ্রোহী ষঢ়যন্ত্রকারী।তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অথবা মুন্ডু আলাদা করে মৃত্যদন্ড প্রদান করা হবে।এ ঘোষনা শোনার পরে,শ্যামার নাওয়া-খাওয়া হারাম হয়ে যায়।তাকে নিয়ে পালিয়ে যাবে,সুযোগ নেই।সমস্ত শহরের পয়েন্টে পয়েন্টে তল্লাশী বসানো হয়েছে,অপরিচিত বিদেশী ব্যক্তি পাওয়া মাত্রই গ্রেফতার করা হবে।নিজের সাথে নিজেই কথা বলছে আর ভাবছে কি করা যায়।ভাবতে ভাবতেই তার কাজের মেয়ে খবর নিয়ে আসলো যে বজ্রসেন কে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হবে।যেন গোটা আসমানটাই শ্যামা সুন্দরীর মাথায় এসে আঁচরে পড়লো।এখন কি করবে ভাবতে ভাবতেই বজ্রসেনকে নিয়ে শ্যামার সামনে হাজির হল সেনাপতি।শ্যামার মুখভঙ্গি দেখে নিশ্চিত হন সেনাপতি,, যে এটাই বজ্রসেন।অনেক স্বর্নমুদ্রা প্রদান সহ যা চাইবে সেনাপতি তাই দিবেন,তবুও শ্যামা বজ্রসেনকে ছেড়ে দিতে বলেন।অপারগতা প্রকা্শ করেন সেনাপতি।তবে একটা বিকল্পের কথা বলেন যার মাধ্যমে বজ্রসেনকে বাঁচানো যাবে।সেটা হল আজ রাতের মধ্যেই যদি কেউ বজ্রসেন পরিচয় দিয়ে আত্ববিসর্জন দিতে রাজি হয় তাহলে বজ্রসেনকে ছেড়ে দেবেন।শ্যামা আরো বিপদে পড়ে যান,কে এমন আছে?যে তার ভালবাসার মানুষকে বাচানোর জন্য নিজের জিবন দিতে প্রস্তুত!যদি কেউ থাকে সে হল উথ্থিও।ভালবাসার মানুষ শ্যামার মুখ ফসকে বের হওয়া কথা উথ্থিও শুনে ফেলেন।জিবনের শেষবারের মত কিছু কথা বলে উথ্থিও রওনা হন শ্যামার জন্য জিবন উৎসর্গ করতে,শ্যামার কোন বাঁধাই মানলেন না উথ্থিও।জমিদারের কাছে যখন পরিচয় দিলেন যে আমিই আসল বজ্রসেন আর ইনি হলেন উথ্থিও।উথ্থিওয়ের পরিচয়ের মধ্যদিয়ে প্রানে বাচলেন বজ্রসেন অপর দিকে বজ্রসেনের পরিচয় প্রদান করে ফাঁসির কাষ্ঠে আত্ব বিসর্জন দিলেন উথ্থিও।হায়রে ট্রাজেডি!
রাষ্ট্র নামক যন্ত্রটি যে,নীপিড়ক,নির্যাতক ও খুনী তা আবার প্রমান হল রবীন্দ্রনাথের শ্যামা প্রেম নাটক দেখার পরে।সামান্য স্বার্থের কারনে শ্যামার শান্তি নষ্ঠ করলো,বজ্রসেনের মত নিরাপরাধ একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ড জারি করলো।বজ্রসেনকে মেরে ফেল্লে তাও বলতে পারতাম শুধুমাত্র একজন নিরাপরাধ ব্যক্তি বজ্রসেনকে মেরে ফেলা হল!যেটি করা হল,একজন নিরাপরাধ বজ্রসেনকে মুক্তি দেবার জন্য রাষ্ট্রের সেনাপতি হাজার হাজার স্বর্নমুদ্রা শ্যামার কাছ থেকে হাদিয়া নিল,শ্যামার সুন্দর নারী শরীরকে দুমরে মুচরে খেল অতপর আরেকজন নিরাপরাধ ব্যক্তি উথ্থিওকে বজ্রসেন সাজিয়ে মৃত্যুদন্ড প্রদান করলো এবং বজ্রসেনকে উথ্থিও সাজিয়ে বেখুসুর খালাস দেওয়া হল।রাষ্ট্রের কাছ থেকে এর চেয়ে নিরপেক্ষ বিচার প্রত্যাশা করাটা বাতুলতা ছাড়া আর কিছুইনা।রাষ্ট্র বুঝি এমনই হয়!
সক্রেটিসকে হেমলক খাইয়ে হত্যা করা আর কর্নেল তাহেরকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যার মধ্যে আমি পার্থক্যে দেখিনা।
কবি গুরু,তোমার কথাই সঠিক।রাষ্ট্র এমনই হয়!
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
#বাড়িতে রেখে আসা বউয়ের কাছ থেকে দু-একদিনের জন্য ঘুরে আসো,দেখবে মন ভাল হয়ে গেছে।
#ভাইয়া,বাড়িতে এসে ঘুরে যান দেখেবেন মন ভাল হয়ে গেছে।
#কাজ নাইতো বসে বসে বিটিভির নিউজ দেখ
#start a vegetarian,change ur food habit
#bose bose movie dekhen
#val sirte thako
#কিছু টাকা জলে ফেলে প্রচুর পানি খেয়ে ফাকা যায়গায় গিয়ে যা মু্ঞচায় গালিদে,তারপর স্ট্যাটাস দে।
#একটু আধটু ইরকম হয়েই থাকে,ভাল হলে ঠিক হয়ে যাবে ইত্যাদি সহ আরো হরেক রকমের উপায় বাতলে দিলেন,যাতে মন ভাল হয়ে যায়।তার দেয়া উপায়গুলোর মধ্যে থেকে অনেক গুলো উপায় ভাল লেগেছে।চেয়েছিলাম কিছু পরামর্শ পালন করবো কিন্তু যখনই বলল,বাল ছিড়তে থাকো,মাল খেয়ে ইচ্ছেমত গালিগালাজ পারতে থাক,বউয়ের কাছ থেকে একটু ঘুরে আসো দেখবা মন ভাল হয়ে গেছে তখনই উনার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম।হাজার হাজার মানুষের সামনে আমাকে বেইজ্জতি করলেন,অপমান করলেন।অনেকেই আবার তার অপমান জনক পরামর্শকে পছন্দ দিয়েছেন।উনি যদি একা অপমান করতেন একটা কথা ছিল,অন্যকে দিয়েও করিয়েছেন!মেনে নেওয়া যায় বলুন?
তাই স্দ্ধিান্ত নিলাম মনের খিটখিটে ভাব দুর না হলেও তার কাছে যাবোনা এবং তার পরামর্শকে মানবোনা।একলা চল, নীতি গ্রহন করলাম।অফিস শেষ করে সোজা শিল্পকলার দিকে রওনা হলাম।সন্ধ্যা ৬.৩০ টার দিকে পৌছলাম শিল্পকলায়।দেখতে লাগলাম আজ কি কি নাটক আছে।দেখলাম,জাতীয় নাট্যশালায় আছে নাগরিকের বারামখানা এবং পরীক্ষন হলে আছে রবীন্দ্রনাথের শ্যামা প্রেম।সিদ্ধান্ত নিলাম,আজ কোন কথা হবেনা,দেখবো শ্যামা প্রেমা।কথা যা কাজ তাই।টিকেট কেটে ৭.০০টার সময় হলে প্রবেশ করলাম,তিনবার ক্রিং ক্রিং বেল বাজানোর মধ্যে দিয়ে শুরু হল নাটকঃশ্যামা প্রেম
রচনাঃরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
নির্দেশনাঃনূনা আফরোজ
একজন গণিকার মধ্যে প্রেমের জন্য যে ,হাহাকার থাকতে পারে এবং প্রেমের জন্য সবকিছু বিসর্জন দিতে প্রস্তুত থাকতে পারে,রবীন্দ্রনাথের সৌজন্যে সেটা দেখার সৌভাগ্যে হল।আর সেই গনিকাই হল নাটকের মূল চরীত্র শ্যামা সুন্দরী।শ্যামা গাঁয়ের খেটে খাওয়া এক দরীদ্র পরিবারের মেয়ে।ব্রিটিশদের পা চাটা জমিদারদের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে তার পরিবার ধ্বংস হয়ে যাবার পরে, শ্যামা শহরে এসে পেটের দায়ে গনিকার পেশা গ্রহন করতে বাধ্য হয়।একপর্যায় গনিকা পেশার বদৌলতে শ্যামা সুন্দরী অঢেল সম্পদের মালিক হয়ে যান।এভাবে চলতে চলতে একদিন উথ্থিও এর সাথে দেখো হয়ে যায় শ্যামার।যার সাথে জিবনের শৈশবের হাসিখুশিময় সময় কাটিয়েছেন।কখনো বৃস্টিতে ভিজেছেন,কখনো নদীতে একসাথে সাঁতার কেটেছেন,কখনোবা কাঁনামাছি খেলেছেন একসাথে।হাজারো ম্সৃতির রোমাঞ্চে কিছু সময়ের জন্য দুজনেই ফিরে যায় শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলোতে।গ্রামে থাকতেই শ্যামার প্রতি আলাদা একটা টান অনুভব করতো উথ্থিও।পরিনত শ্যামা সুন্দরীকে দেখার পরে যেন,তার চাপা প্রেমটাও বুঝি পরিনত বোধ করতে লাগলো।কিছুদিন পর পরই সে শ্যামার বাসায় আসতো এবং অনেক সময় ধরে গল্প করে যেত।এভাবে কিছুদিন চলার পর উথ্থিও বলেই ফেলল,শ্যামা তোকে ছাড়া আমি যে আর কিছুই চিন্তা করতে পারিনা।আমি তোকে পেতে চাই,সারাজিবনের জন্য পেতে চাই।নিরবতা..!কেউ কোন কথা বলেনা।
শ্যামা সুন্দীর সত্যিকার অর্থে কিছুই করার নেই।কিছুদিন পূর্বেই সে একজনকে কথা দিয়েছে যে,তাকে নিয়ে সে ঘর বাধবে এবং গনিকাবৃত্তি ছেড়ে দুরে কোথাও চলে যাবে।আর যাকে কথা দিয়েছে সে হল বিদেশী সওদাগর বজ্রসেন।শ্যামা সুন্দরী পবিত্র সংসারে মনোনিবেশ করবে বলে,গনিকা বৃত্তি একপ্রকার ছেড়েই দিয়েছেন।বজ্রসেন ও চায়না,শ্যামা আর গনিকাবৃত্তি করুক।বজ্রসেনের জন্যই শ্যামা সুন্দরী দীর্ঘদিনের পেশা গনিকাবৃত্তি ছেড়ে দিয়েছেন বলতে পারেন।ভালবাসার জন্য মানুষ সবই পারে,গনিকাবৃত্তিতো কোন ব্যাপারই নয় তার কাছে।সম্মান ও মর্যাদা এবং একটু সুখে শান্তিতে জিবন-যাপন করার জন্য শ্যামা সুন্দরী ত্যাগ করলেন ব্যাস্যাবৃত্তি/গনিকাবৃত্তি।আর সেই গনিকাবৃত্তি ত্যাগই কাল হয়ে দাড়াল শ্যামার শান্তির পথে।পদে পদে শুরু হল বাঁধা আর বিপত্তি।তার সাথে আবার উথ্থিওর নিঃস্বার্থ ভালবাসা।শ্যামার বুঝতে আর বাকি থাকেনা তার জন্য যদি কেউ জিবন দিতে পারে সে হল উথ্থিও,আর কেউ নয়।এমন কি বজ্রসেন ও নয়।
শ্যামা আর কিছুদিনের মধ্যেই বজ্রসেনকে নিয়ে দূরে কোথাও পালিয়ে যাবে।এর মধ্যে জমিদারের কাছ থেকে ফরমান আসলো যে,শ্যামাকে জমিদার বাড়িতে নাচতে হবে মানে তাদের মনোরন্জন করতে হবে।শরীর খারাপের কথা বলে তাদের বিদায় করার চেস্টা করেন কিন্তু তাকে নির্দেশ দেওয়া হয় শরীর ভাল হওয়ার তিনদিন পরেই তাকে নাচতে হবে।তিনদিন অতিবাহিত হওয়ার পরে শ্যামার অনুপষ্থিতি দেখে আবার শ্যামার বাসায় চলে আসেন জমিদারের সেনাপতি।এবারও অনাগ্রহ প্রকাশ করলে,সেনাপতির কাছে বিষয়টি সন্দেহের উদ্রেক করে।পরে অনুসন্ধান করে তারা জানতে পারে যে,বজ্রসেনের সাথে ঘরবাঁধার স্বপ্নই শ্যামাকে গনিকাবৃত্তি থেকে বিরত রাখছে।জমিদারের আদেশ অমান্য করাকে সাভাবিক ভাবে নেয়নি মহামান্য জমিদার।শ্যামার সুখ শান্তি কিভাবে নষ্ট করা যায় এবং বজ্রসেনকে শায়েস্তা করা যায় সেই দিকে মনোনিবেশ করলেন সমগ্র জমিদারী শাসকবর্গ।
বজ্রসেন ছিলেন একজন বিদেশী সওদাগর।ফলে তাকে ফাসানোর কৌশল আটতে খুব একটা বগে পেতে হয়নি জমিদারকে।বজ্রসেনের নামে সমন জারি করা হল যে,সে একজন বিদেশী গোয়েন্দা।আমাদের রাজ্যের ক্ষতি সাধনের জন্য ষঢ়যন্ত্র করছে।কাজেই বজ্রসেন একজন রাষ্ট্রদ্রোহী ষঢ়যন্ত্রকারী।তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অথবা মুন্ডু আলাদা করে মৃত্যদন্ড প্রদান করা হবে।এ ঘোষনা শোনার পরে,শ্যামার নাওয়া-খাওয়া হারাম হয়ে যায়।তাকে নিয়ে পালিয়ে যাবে,সুযোগ নেই।সমস্ত শহরের পয়েন্টে পয়েন্টে তল্লাশী বসানো হয়েছে,অপরিচিত বিদেশী ব্যক্তি পাওয়া মাত্রই গ্রেফতার করা হবে।নিজের সাথে নিজেই কথা বলছে আর ভাবছে কি করা যায়।ভাবতে ভাবতেই তার কাজের মেয়ে খবর নিয়ে আসলো যে বজ্রসেন কে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হবে।যেন গোটা আসমানটাই শ্যামা সুন্দরীর মাথায় এসে আঁচরে পড়লো।এখন কি করবে ভাবতে ভাবতেই বজ্রসেনকে নিয়ে শ্যামার সামনে হাজির হল সেনাপতি।শ্যামার মুখভঙ্গি দেখে নিশ্চিত হন সেনাপতি,, যে এটাই বজ্রসেন।অনেক স্বর্নমুদ্রা প্রদান সহ যা চাইবে সেনাপতি তাই দিবেন,তবুও শ্যামা বজ্রসেনকে ছেড়ে দিতে বলেন।অপারগতা প্রকা্শ করেন সেনাপতি।তবে একটা বিকল্পের কথা বলেন যার মাধ্যমে বজ্রসেনকে বাঁচানো যাবে।সেটা হল আজ রাতের মধ্যেই যদি কেউ বজ্রসেন পরিচয় দিয়ে আত্ববিসর্জন দিতে রাজি হয় তাহলে বজ্রসেনকে ছেড়ে দেবেন।শ্যামা আরো বিপদে পড়ে যান,কে এমন আছে?যে তার ভালবাসার মানুষকে বাচানোর জন্য নিজের জিবন দিতে প্রস্তুত!যদি কেউ থাকে সে হল উথ্থিও।ভালবাসার মানুষ শ্যামার মুখ ফসকে বের হওয়া কথা উথ্থিও শুনে ফেলেন।জিবনের শেষবারের মত কিছু কথা বলে উথ্থিও রওনা হন শ্যামার জন্য জিবন উৎসর্গ করতে,শ্যামার কোন বাঁধাই মানলেন না উথ্থিও।জমিদারের কাছে যখন পরিচয় দিলেন যে আমিই আসল বজ্রসেন আর ইনি হলেন উথ্থিও।উথ্থিওয়ের পরিচয়ের মধ্যদিয়ে প্রানে বাচলেন বজ্রসেন অপর দিকে বজ্রসেনের পরিচয় প্রদান করে ফাঁসির কাষ্ঠে আত্ব বিসর্জন দিলেন উথ্থিও।হায়রে ট্রাজেডি!
রাষ্ট্র নামক যন্ত্রটি যে,নীপিড়ক,নির্যাতক ও খুনী তা আবার প্রমান হল রবীন্দ্রনাথের শ্যামা প্রেম নাটক দেখার পরে।সামান্য স্বার্থের কারনে শ্যামার শান্তি নষ্ঠ করলো,বজ্রসেনের মত নিরাপরাধ একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ড জারি করলো।বজ্রসেনকে মেরে ফেল্লে তাও বলতে পারতাম শুধুমাত্র একজন নিরাপরাধ ব্যক্তি বজ্রসেনকে মেরে ফেলা হল!যেটি করা হল,একজন নিরাপরাধ বজ্রসেনকে মুক্তি দেবার জন্য রাষ্ট্রের সেনাপতি হাজার হাজার স্বর্নমুদ্রা শ্যামার কাছ থেকে হাদিয়া নিল,শ্যামার সুন্দর নারী শরীরকে দুমরে মুচরে খেল অতপর আরেকজন নিরাপরাধ ব্যক্তি উথ্থিওকে বজ্রসেন সাজিয়ে মৃত্যুদন্ড প্রদান করলো এবং বজ্রসেনকে উথ্থিও সাজিয়ে বেখুসুর খালাস দেওয়া হল।রাষ্ট্রের কাছ থেকে এর চেয়ে নিরপেক্ষ বিচার প্রত্যাশা করাটা বাতুলতা ছাড়া আর কিছুইনা।রাষ্ট্র বুঝি এমনই হয়!
সক্রেটিসকে হেমলক খাইয়ে হত্যা করা আর কর্নেল তাহেরকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যার মধ্যে আমি পার্থক্যে দেখিনা।
কবি গুরু,তোমার কথাই সঠিক।রাষ্ট্র এমনই হয়!
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
মন্তব্য: ৪ টি
১৭ ডিসেম্বর ’১৫ রাত ১১:৪৯
অনেক বড় ব্লগ। এক নি:স্বাসে পড়লাম। আপনার এটিকে রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসের রিভিউ বলতে চাই। নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে-এই এক্সিলেন্ট কাহিনী সমৃদ্ধ উপন্যাস আগে পড়ি নি কেন? আসলেই দারুণ। শুরু এবং শেষের আপনার উপসংহার, আমাদের সামনে এক তিক্ত সত্যকে উপস্থাপন করেছে।