আফগান কী আবারো গৃহযুদ্ধের দিকে চলেছে?
ট্রাম্পের সময়ে করা চুক্তিকে এগিয়ে নিয়ে বর্তমান আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘোষণা অনুযায়ী আফগানিস্তান থেকে পশ্চিমা দেশগুলোর অবশিষ্ট সেনা তাড়াহুড়ো করে এ মাসেই প্রত্যাহারের যে সিদ্ধান্ত, সেটি তালেবান বিদ্রোহীদের আরও সাহসী করে তুলেছে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে মার্কিনীরা তালেবানদের সুযোগ করে দিতেই করছে এমন লুকোচুরি ও তাড়াহুড়ো। তারা একের পর এক ঘাঁটি খালি করছে অথচ আফগান কর্তৃপক্ষকে অবহিত করছে না। ফলে বেকায়দায় আফগান সরকারি বাহিনী। অন্যদিকে তালেবানরা এই সুযোগে একের পর এক জেলা দখল করছে।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে আফগানিস্তানে তালেবান বাহিনী একের পর এক জেলায় হামলা চালিয়ে সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে। মনোবল হারানো সরকারি সেনারা তাদের ঘাঁটি ছেড়ে হয় পালাচ্ছে, নয়তো আত্মসমর্পণ করছে। এসব ঘাঁটি এখন তালেবান বাহিনীর দখলে।
মার্কিনীদের আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা সেখানে তালেবানদের প্রত্যাবর্তনকে নিশ্চিত করছে। যদিও চুক্তিতে তালেবানরা আল কায়েদাকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অবহিত করেছে তবে এটা যাদের আইওয়াশ মনে হচ্ছে। নতুন করে আল কায়েদা নেটওয়ার্ক পুনর্গঠন এর সুযোগ করে দিবে তালেবানরা । এর ফলে তারা আবারও বিশ্বজুড়ে হামলার ষড়যন্ত্র করতে সক্ষম হবে।
যদিও তালেবান এখনো পর্যন্ত বলে চলেছে যে জোর করে কাবুল দখল করার কোনো ইচ্ছে তাদের নেই। কিন্তু আফগানিস্তানের একটা বিরাট অংশজুড়ে তালেবান এরই মধ্যে নিজেদের এক প্রবল শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
আল-কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেট আফগানিস্তানে আগে থেকেই আছে। আফগানিস্তান খুবই পর্বতময় এবং বন্ধুর একটি দেশ। সেখানে এমন অনেক দুর্গম এলাকা আছে যেখানে সহজেই আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ গোষ্ঠীগুলো লুকিয়ে থাকতে পারে। তবে এপর্যন্ত আফগানিস্তানের নিরাপত্তা সংস্থা এনডিএস যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের বিশেষ বাহিনীর সহযোগিতায় এরকম হুমকির মোকাবেলা করতে পেরেছে।
আফগানিস্তানে হামলা বা বোমা বিস্ফোরণের মতো ঘটনা এখনো ঘটছে। তবে বহুবার এমন ঘটনা ঘটেছে, কোন অনুচরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অথবা আড়ি পেতে শোনা কোন মোবাইল ফোনের আলাপ থেকে হামলার আঁচ পেয়ে আফগান এবং পশ্চিমা বিশেষ বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পেরেছে। এরকম ব্যর্থ করে দেয়া হামলার ঘটনা আমরা প্রকাশ্যে কমই জানতে পারি।
আফগানিস্তানের ভেতরেই বিভিন্ন ঘাঁটি থেকে পশ্চিমা বাহিনী এরকম পরিস্থিতিতে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ব্যবস্থা নিতে পারতো, অনেক সময় হেলিকপ্টারে করে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যেতে পারতো। রাতের গভীরে আচমকা তারা শত্রুকে ধরে ফেলতে পারতো। কিন্তু এসব অভিযানও এখন শেষ হতে চলেছে।
তালেবান এ সপ্তাহে এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ১১ই সেপ্টেম্বরের পর যদি কোন পশ্চিমা সেনা আফগানিস্তানে থেকে যায়, এমনকি কাবুল বিমানবন্দর বা মার্কিন দূতাবাসের পাহারায় থাকা কোন সেনা, সেটিকে তারা দোহা চুক্তির লঙ্ঘন বলে ধরে নেবে। এই চুক্তির অধীনে সব পশ্চিমা সেনার ১১ ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান ছাড়ার কথা। তালেবান হুমকি দিয়েছে, এরকম থেকে যাওয়া বিদেশি বাহিনীর ওপর তারা হামলা চালাবে।
তবে সবচেয়ে বড় যে আশংকা তা হলো আফগানিস্তান দীর্ঘমেয়াদে গৃহযুদ্ধে পতিত হতে যাচ্ছে। আফগানিস্তানের অনেক গোষ্ঠী। তালেবানরা পশতুন জাতিগোষ্ঠীর একটি দল। পশতুনদের মধ্যে তালেবান ছাড়াও আরো অনেক দল রয়েছে। আবার তাজিকদের কেউই তালেবানের সমর্থক নয়। তারা কেউ কাউকে ছাড় দেবে বলে মনে হয় না। এশিয়ায় হয়তো সিরিয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। যার সামাজিক, অর্থনৈতিক সব নেতিবাচক প্রভাবই দক্ষিণ এশিয়ায় পড়বে।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.