জামাতের নতুন চাল!

জামাত এখন চাল নিয়ে বাজারে এসেছে। তারা আগামী ৩০ বছর নাকি ইলেকশনে অংশ নেবে না। যদিও তাদের নিবন্ধনই নেই। জামাত নিজের নামে ইলেকশন এমনিতেই করতে পারে না। তদুপরি তাদের এই পরিকল্পনা নতুন ষড়যন্ত্রের জন্ম দিবে। তারা যদি ইলেকশনে এটেইন না করে তবে আওয়ামী লীগ আর তাদের শত্রু থাকবে না। বরং তাদের একচ্ছত্র ভোট পাওয়ার জন্য তাদের সাথে সুসম্পর্ক করবে।
জামাত খুবই ধুরন্ধর একটি দল। আগামী তিরিশ বছর তারা নির্বাচন না করে রাজনৈতিক ঝামেলায় না গিয়ে তাদের দলিয় শক্তি মজবুত করবে। এখন তারা বেশ ভঙ্গুর অবস্থায় আছে। এভাবে চলতে থাকলে তারা এই দেশ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তাই তারা এই কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে।
এখন তারা আওয়ামী লীগ থেকে প্রকাশ্য কার্যক্রমের বৈধতা নিয়ে নিবে। জাতীয় রাজনীতিতে নাক গলাবে না। ভেতরে ভেতরে টাকা ও সুযোগ সুবিধা দিয়ে তাদের কর্মীদের আবারো চাঙা করবে। আওয়ামীলীগও তাদের সাপোর্ট নিতে চেষ্টা করবে। কারণ জামায়াত কর্মীরা নিজেদের ইচ্ছেমত ভোট দেয় না, দিতে পারে না। তারা দলিয় সিদ্ধান্তে ভোট দেয়।
আওয়ামী লীগ যদি তাদের প্রতিপক্ষ না ভাবে তবে আওয়ামী লীগ চাইবে তাদের ভোটগুলো গ্রহণ করার জন্য। এই আশায় বসে আছে জামাত। তবে তাদের এই অপকৌশলের ফাঁদে পড়া যাবে না আওয়ামী লীগকে। তাদের এসব ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। জামাতকে বাঁচিয়ে দিলে এরাই জীর্ণ সাপ থেকে মহা অজগর হয়ে ৭৫ এর মতো ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারে। সাপকে কখনো বিশ্বাস করতে নেই।
সংস্কার, নতুন দল ইত্যাদি করে তারা বাঁচতে চেয়েছিলো। সেটা ব্যর্থ হওয়ায় এখন এই পলিসি। মুক্তিযুদ্ধ আর সংস্কার ইস্যুতে দলত্যাগ করেন আরেক শীর্ষ নেতা ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। পরিস্থিতি সামলাতে কমিটিও হয়েছিল জামায়াতে।
পুরনো শীর্ষ নেতাদের বেশির ভাগের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে যুদ্ধাপরাধের মামলায়। কারো কারো স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। বাকিরা কারাগারে। এক দশক ধরে কার্যত জামায়াত নিষিদ্ধ। দলের নিবন্ধন নেই। তারপরও দলটি নির্বাচনের ময়দানে ছিল। কখনো স্বতন্ত্র, কখনো ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছিলেন দলটির নেতারা। তবে সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনের পর নতুন কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়নি জামায়াত।
এখন প্রচলিত রাজনীতির পরিবর্তে সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেদের নিয়োজিত রাখবেন নেতাকর্মীরা। দলীয় সাহিত্য জনগণের কাছে তুলে ধরা হবে। এক গোয়েন্দা রিপোর্টেও ৩০ বছর ভোটের রাজনীতি থেকে দূরে থাকার জামায়াতের নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালে দিন বদলের ডাক দিয়ে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসে। এরপর থেকেই বিতর্কিত, সাজা হওয়া এবং যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াতে ইসলাম বেকায়দায় পড়ে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের। পরে তাদের যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
ওই মামলায় দলের আমীর ও সাবেক মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল এবং সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মুজাহিদসহ ৫ শীর্ষ নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। সাবেক আমীর গোলাম আযম কারাগারে মারা গেছেন। এ ছাড়াও আদালতের সাজা মাথায় নিয়ে সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা একেএম ইউসুফ, নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুস সোবহান মারা গেছেন। আমৃত্যু কারাদণ্ড নিয়ে কারাগারে আছেন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। সাজা কার্যকরের অপেক্ষায় আছেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে দলটি মাঠ পর্যায়ে দুর্বল হয়ে যায়। এ ছাড়াও দলটির কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ব্যাপক নজরদারি গড়ে তোলে এবং তাদের বেআইনি কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেয়। এ কারণে গত আশি এবং নব্বইয়ের দশকে যেভাবে দলটি সারা দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছিল তা এ সরকারের সময় পায়নি। এতে দলটির অধিকাংশ নেতারা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান।
এর মধ্যে আদালতে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয় ২০১৩ সালের পহেলা আগষ্ট। নিবন্ধন বাতিলের ফলে মাঠ পর্যায়ের নেতা ও সমর্থকদের মধ্যে হতাশা নেমে আসে। তারা প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ থেকে বিরত থাকে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, উপজেলা নির্বাচন করেনি নিবন্ধন হারানো জামায়াত। এ ছাড়াও একাধিক সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও পৌরসভার নির্বাচনেও অংশ নিতে দেখা যায়নি দলটির নেতাদের। নতুন দল খোলার ব্যাপারে গণমাধ্যমগুলোতে সংবাদ প্রকাশিত হলেও এ ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। কেন তারা নির্বাচনে অংশ নিবে না সে ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ের নেতারা কোনো তথ্য দেননি। তবে দলের গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের কাছে ভোটে অংশ না নেয়ার তথ্যটি জানা যায়।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.