বাংলাদেশে আড়াই কোটি অতিগরিব। এই সংখ্যা বাড়ছেই!
জানেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে অবস্থান করছে। চারদিকে কেবল শান্তির সুবাতাস বইছে। কোন দুঃখ নেই, কোন কষ্ট নেই। ফেরদৌস-রিয়াজরা সরকারের হয়ে প্রচার করছে উন্নত বিশ্বে প্রবেশ করতে আর একটু বাকি। বিটিভি বিজ্ঞাপন বানিয়েছে দেশে কোন গরীব মানুষ নেই। এক লোক মানুষকে কাঙ্গালিভোজের দাওয়াত দিতে গিয়ে দৌড়ানি খেয়েছে।
অথচ বাংলাদেশের চিত্র এরকম নয়। বাংলাদেশের চিত্র হলো এখানে কাঙ্গালিভোজে হাজার হাজার মানুষের হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে মানুষ মৃত্যুবরণ করে। জাকাতের টাকা নিতে গিয়েও হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে মানুষ মারা যাচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক কী বলছে এই প্রসঙ্গে?
অতিগরিব মানুষের সংখ্যা বেশি এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। বাংলাদেশে ২ কোটি ৪১ লাখ হতদরিদ্র মানুষ আছে। বিশ্বব্যাংক ‘পভার্টি অ্যান্ড শেয়ার প্রসপারিটি বা দারিদ্র্য ও সমৃদ্ধির অংশীদার-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে সবচেয়ে বেশি হতদরিদ্র মানুষ আছে, এমন ১০টি দেশের তালিকা তৈরি করেছে। ক্রয়ক্ষমতার সমতা অনুসারে (পিপিপি) যাঁদের দৈনিক আয় ১ ডলার ৯০ সেন্টের কম, তাঁদের হতদরিদ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটা আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যরেখা হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশ্বব্যাংক ২০১৬ সালের মূল্যমান ধরে পিপিপি ডলার হিসাবে করেছে। বাংলাদেশে প্রতি পিপিপি ডলারের মান ধরা হয়েছে সাড়ে ৩২ টাকা। সেই হিসাবে বাংলাদেশের ২ কোটি ৪১ লাখ লোক দৈনিক ৬১ টাকা ৬০ পয়সাও আয় করতে পারেন না। ১৭ কোটির মধ্যে আড়াই কোটির যেখানে এই অবস্থা সেখানে উন্নয়নের মহাসড়কের বয়ান সত্যিই বেমানান।
অতিধনী বৃদ্ধির হারের দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম। ধনী বৃদ্ধির হারে তৃতীয়। এই তথ্য দিয়ে আমাদের সুলেমান সুখনের মত জাতীয় প্রতিবন্ধিরা দেখাতে চায় বাংলাদেশ খুব এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষ সম্পদশালী হচ্ছে। অথচ একটি দেশে ধনী বেড়ে যাওয়া মানে একই সাথে গরিবও বেড়ে যাওয়া। ধনী গরীবের বৈষম্য বৃদ্ধি পাওয়া।
নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের মানুষকে দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠতে হলে দৈনিক কমপক্ষে ৩ দশমিক ২ পিপিপি ডলার আয় করতে হবে। বিশ্বব্যাংক বলছে, এভাবে হিসাব করলে বাংলাদেশে অতিগরিব মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৮ কোটি ৬২ লাখ। আর দারিদ্র্যের হার হবে ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ। এর মানে হলো, টেকসইভাবে গরিবি হটাতে বাংলাদেশের প্রায় ৬ কোটি ২১ লাখ মানুষকে দ্রুত দৈনিক ৩ দশমিক ২ ডলার আয়ের সংস্থান করতে হবে। এই বিশাল জনগোষ্ঠী এখন ঝুঁকিতে আছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতে সবচেয়ে বেশি ১৭ কোটি ৫৭ লাখ হতদরিদ্র আছে। ভারত ছাড়া বাংলাদেশের চেয়ে বেশি হতদরিদ্র মানুষ বসবাস করে নাইজেরিয়া, কঙ্গো ও ইথিওপিয়ায়। তালিকায় থাকা শীর্ষ ১০–এর অন্য ৫টি দেশ হলো তানজানিয়া, মাদাগাস্কার, কেনিয়া, মোজাম্বিক ও ইন্দোনেশিয়া।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আগে দারিদ্র্য কমানোর পূর্বশর্ত ছিল প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে দারিদ্র্য কমাতে হবে। দেশে ৬-৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধিও হয়েছে। এত প্রবৃদ্ধি অর্জনের পর দেখা যাচ্ছে প্রবৃদ্ধি যেমন বেড়েছে, বৈষম্যও বেড়েছে। অন্যদিকে দারিদ্র্য হ্রাসের গতিও কমেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ প্রবৃদ্ধি দিয়ে দারিদ্র্য নির্মূল করা যাবে, এটা ঠিক নয়। তাঁর মতে, প্রবৃদ্ধিতে গরিব মানুষের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। গরিব মানুষের সম্পদ হলো পরিশ্রম। এই শ্রমের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে গরিব মানুষের মজুরি বাড়াতে হবে। আবার কৃষির বাইরের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের জন্য গরিব মানুষের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ওপর নজর দিতে হবে।
গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েলথ-এক্স বলেছে, অতিধনী বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ প্রথম। গত বুধবার একই প্রতিষ্ঠান আরেকটি প্রতিবেদনে বলেছে, ধনী বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ তৃতীয়। আগামী পাঁচ বছর বাংলাদেশের ধনী মানুষের সংখ্যা ১১ দশমিক ৪ শতাংশ হারে বাড়বে।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.