ফ্রিম্যাসন কারা? তাদের কাজ কী?
ফ্রিম্যাসন লোগো, এই লোগো এবং এর কাছাকাছি লোগো তাদের আস্তানায় অঙ্কিত থাকে সাধারণত
ফ্রিম্যাসনারি বিশ্বের প্রাচীনতম গুপ্ত গোষ্ঠী। যে গোষ্ঠীর উদ্ভব হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের জেরুজালেমের টেম্পল অব সলোমন-এর কারিগরদের ভিতর। যে গোষ্ঠীটি সাধন করে বিশ্বের প্রাচীনতম রহস্যময় জ্ঞান, যে গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত মধ্যযুগের কুখ্যাত নাইট টেম্পলারদের বিচিত্র অনৈক কর্মকান্ড; যে গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত ষোড়শ শতকের ইউরোপের জ্ঞানদীপ্তির যুগ বা ‘এজ অভ এনলাইটমেন্ট’ এবং সপ্তদশ শতকের ‘ম্যাসনিক গিল্ড’ বা ‘রাজমিস্ত্রিদের সংঘ’। সেই গোষ্ঠীই সপ্তদশ এবং অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং সমাজবিপ্লবের পিছনে সক্রিয় ছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অদৃশ্য নিয়ন্তা বলে মনে করা হয় যে ফ্রিম্যাসনারি গোষ্ঠীটিকে। ধারণা করা হয় সেই গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন প্রখ্যাত ফরাসি লেখক ভলতেয়াল, জার্মান সঙ্গীতবিদ মোজার্ট, মার্কিন বৈজ্ঞানিক বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন থেকে শুরু করে বর্তমান কালের প্রেসিডেন্ট বুশ। এটা মূলত ইহুদীদের সংগঠন হলেও এটা এখন আর ইহুদীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এদের মূল কাজ হলো ইশ্বরের বিরুদ্ধে শয়তানকে সহায়তা করা। তাই তারা শয়তানের পূজা বা উপাসনা করে।
শয়তান বা অপদেবতা এদের উল্লেখ সব ধর্মে আছে যারা কিনা মানুষকে খারাপ পথে প্রলুব্ধ করে। আপনি ভাবছেন শয়তান এর উপসনা এ আবার কেউ করে নাকি। হ্যাঁ শয়তান এর উপসনার গ্রন্থ কোডেক্স জিগাস যা কিনা শয়তান নিজে লিখেছিল এমনটাও উল্লেখ আছে। প্রথম স্যাটানিক চার্চ তৈরি হয় অ্যামেরিকার সানফ্রানসিসকোতে ৩০শে এপ্রিল ১৯৬৬ সালে এটির নাম ছিল দ্যা ব্ল্যাক হাউস এবং এর প্রতিষ্ঠা করেন এ্যালান সজান্দর লাভিয়ের এবং তিনি ছিলেন এটির প্রধান ধর্ম যাজক। লাভিয়ের মৃত্যু বরন করেন ১৯৯৭ সালে।
তার পরে দীর্ঘ ৩ বছর খালি পড়ে থাকে প্রধান যাজক এর আসনটি ২০০১ সালে আবার নিযুক্ত করা হয় প্রধান যাজকের পদটি এবার প্রধান যাজক নিয়োজিত হয় পিটার এইচ গিলমোর। গিলমোর নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি স্থান পরিবর্তন করে সদর দপ্তর হেলস কিচেন, ম্যানহাটন, নিউ ইয়র্ক সিটিতে স্থানান্তরিত করেন।
পিটার গিলমোর যাজক হওয়ার পর ৬০০ টি ক্লাব এগিয়ে আসে ধর্ম প্রচার ও গির্জার বিবৃত মিশন শয়তান-বাদ এবং আধ্যাত্মিক বিজ্ঞান গবেষণার প্রসারণের জন্য। বিভিন্ন কারণে তাদের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি হয়। তৈরি হয় নতুন অংশ ইলুমিনাতি, কমিটি অফ ৩০০, রোসিক্রুসিয়নিজম, অরডো টেম্পল ওরিয়েন্টিস এবং ফ্রিমেসনারি এছাড়াও আরও আছে।
বর্তমানে আছে প্রায় ৬০ লক্ষ ফ্রিম্যাসন। অথচ এদের সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানি
সকল গোত্রের প্রধান হল এই ফ্রিমেসনারি যা কিনা বর্তমান বিশ্বের সর্ব ক্ষমতাধর ব্যক্তি এর সদস্য বা প্রতিনিধি শুনতে অবাক লাগে তাই না? হ্যাঁ বিষয় টা আরও অবাক করার মত এবং আপনি হয়তো ভাবতে পারেন এগুলো সাজানো, তবে আপনি এটা নিয়ে গুগল,উইকি করতে পারেন।
পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি দেশ বর্তমান ফ্রিমেসনারি মেম্বার, এবং আপনি অবাক হবেন এটা জেনে যে গণতান্ত্রিক সকল রাষ্ট্র ফ্রিমেসনারির অংশ। ফ্রিমেসন সংগঠনের লক্ষ্য হল সকল ক্ষমতার একত্রিত জোট গঠন ও একনায়কত্ব। হ্যাঁ তবে ক্ষমতাবান ও অঢেল বিত্তশালীরা জয়েন করার অধিকার বহন করে এই কমিউনিটিতে ফ্রিমেসন এখন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড তবে সিক্রেট কমিউনিটি।
ফ্রিমেসন কমিউনিটির বিজনেস,ওয়েব,এপার্টমেন্ট,চ্যানেল সব কিছু মানুষের সামনে তবে এর পেছনে যে ফ্রিমেসন তার কোন প্রকাশ্যতা নেই, পৃথিবী জুড়ে সকল দেশে ফ্রিমেসন চালিত ক্লাব আছে।
একজন ফ্রিমেসন মেম্বার হতে চাইলে অনেকগুলো ধাপ আপনাকে পার করতে হবে এবং যেকোনো সাধারণ মানুষ চাইলেই এর সদস্য হতে পারে না। ফ্রিমেসন এর মেম্বার হতে চাইলে দরকার হবে অন্য ফ্রিমেসনের ইনভাইটেশন, এখানেই শেষ নয় ইনভাইটেশন ছারাও জয়েন করতে পারেন তাদের অফিশিয়াল ওয়েব থেকে।
এখানে কিছু কন্ডিশন থাকে যেগুলো হল এমন আপনার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা যাবে না, আপনার এডুকেটেড হতে হবে,আপনার আস্তিক হতে হবে আরও কিছু এগুলো করলে শুধু হওয়া যাবে নিউবাই মেম্বার এট ব্রাদারহুড। কেউ যদি ফ্রিমেসনারিতে যোগ দিতে চায় তাহলে এনএসডব্লিউ এবং অ্যাক্টের ইউনাইটেড গ্র্যান্ড লজের সাথে যোগাযোগ করতে হবে, যা অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অবস্থিত এবং এটি ফ্রিমেশনরির গভর্নিং বডি।
জর্জ ওয়াশিংটন নিজেই ছিলেন একজন ফ্রিম্যাসন
আপনি যদি যোগদান করতে আগ্রহী হন তাহলে আপনাকে সদস্যপদ কো-অর্ডিনেটরের সাথে যোগাযোগ করতে হবে এবং আপনাকে ফ্রাইমেশন হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলি সম্পর্কে জানানো হবে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে – সদস্যপদ সহায়তার প্রকল্প (এমএএস) হিসাবে পরিচিত – এভাবে আপনি যোগ দিতে পারেন লজ সদস্যদের সাথে। এবং দেখা করার আগে ইউনাইটেড গ্র্যান্ড লজের প্রতিনিধিদের সাথে একটি প্রাথমিক সাক্ষাৎকারে যোগ করতে বলা হবে।
একবার এই প্রক্রিয়াটি শুরু হয়ে গেলে আপনাকে একটি সাক্ষাৎকারে অংশ নিতে হবে এবং আপনার অ্যাপ্লিকেশনের সাথে সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নগুলি জিজ্ঞাসা করা হবে। এটি একটি আদর্শ পদ্ধতি এবং কোনও সম্ভাব্য সদস্যকে লজের সদস্যদের সাথে দেখা করার সুযোগ দেয় এবং ফ্রিম্যাসনরি সম্পর্কে তার কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারে। যেহেতু আপনি এবং লজ সাক্ষাৎকারের সাথে সন্তুষ্ট, তবে ফ্রিমামসনরিতে আপনার ভর্তির জন্য একটি তারিখের ব্যবস্থা করা হবে। আপনাকে কোন এক ক্লাবে ডাকা হবে এবং এখানে প্রবেশ এর পর আপনার জন্য অপেক্ষা করবে রমরমা কিছু কাজ যেমন রোজ একটা খারাপ কাজ করা,নির্দিষ্ট দিনে পশু হত্যা করা,পশু বা মানব রক্ত পান করা, কারো ক্ষতি করা এবং আরও অনেক।
আসুন জানি ফ্রিমেসনদের কয়েকটি আইন
১- তারা একে অপরকে কখনো সত্যের সাক্ষ্য দেবে না।
একজন মেসন যখন মেযন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিচ্ছে তখন সত্যি কথা বললে অন্যদের কাছে এটি মিথ্যা এবং নিজেদের একজনকে বাঁচানো অনেক বড় পাপ।শুধু মিথ্যের সাক্ষী মেসনদের কাছে গ্রহণযোগ্য
২- তাদের একটি গোপন হ্যান্ডশেইক আছে।
যদিও কিছু সদস্য জনসাধারণের কাছে এটি অস্বীকার করে, ফ্রিমেশনে কিছু একটি গোপন কি-ওয়ার্ড আছে। ধারণা করা হয়, এমন একটি শব্দও রয়েছে যেখানে ফ্রিমেসন গুরুতর বিপদ মোকাবেলা করতে পারে – অন্যান্য সদস্যদের তাদের সাহায্যের জন্য ডাকতে এই কোড-ওয়ার্ড তারা ব্যাবহার করে। মোর্মনবাদের প্রতিষ্ঠাতা, জোসেফ স্মিথ, তার মৃত্যুর আগে শেষ মুহূর্তে এরকম কিছু শব্দ উচ্চারণ করেছেন।
৩-কিছু গোপন পাসওয়ার্ড।
মেসন সদস্যদের কিছু গোপন পাসওয়ার্ড আছে যেগুলো তারা ব্যাবহার করে তাদের ভিতর গত কোন অনুষ্ঠানে এবং মানুষ হত্যা করতেও তাদের পারমিশন কোড ব্যবহার করতে হয়। সাধারণত কোন অনুষ্ঠান পরিচালনায় এবং এতে জয়েন করার জন্য to-bala-kaina এরকম একটি গোপন ওয়ার্ড তারা ব্যাবহার করে।
৪- সূর্যের পূজা বা উপসনা।
ফ্রিমেসন পুনর্জন্মে বিশ্বাসী, এবং শক্তির পূজারি তাই তাদের সূর্য পূজার একটি ফেস্টিভাল আছে কোথায় এবং কখন এই উৎসব তারা করে তা শুধু একজন ফ্রিমেসন মেম্বারই জানবে এটি সম্পূর্ণ গোপন ফেস্টিভাল।
৫-ধর্মে বিশ্বাসী ও নাস্তিকতার প্রতিবাদ।
একজন নাস্তিক কখনো ফ্রিমেসন হতে পারবে না। কারণ ফ্রিমেসনরা ধর্মে বিশ্বাস করে এবং একেশ্বরবাদে।
৬- তারা বিভিন্ন দেশে রাজনীতি ও অর্থব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
ইংল্যান্ডে প্রায় অর্ধ মিলিয়ন ব্যাংকিং, রাজনীতি এবং সরকার অসামঞ্জস্যভাবে জড়িত ফ্রিমেসনের সাথে । এমনকি হাসপাতাল এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও ফ্রিমেসন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
৭- কোন মেয়ে বা মহিলা কখনো ফ্রিমেসন হতে পারবে না।
ডলারে ইলুমিনাতি চিহ্ন
আশ্চর্য হল আমরা নিজেরাও জানিনা আমরা প্রতি পদে পদে ফ্রিমেসন কে সাহায্য করে চলছি। ফ্রিমেসন এর প্রধান উদ্দেশ্য ঈশ্বরকে/আল্লাহকে হারাতে শয়তানকে সাহায্য করা। প্রতিটা ধর্মে এমন একটি বিস্ট বা দানবের কথা বলা আছে যে কিনা পৃথিবী ধ্বংস আগে অবতীর্ণ হবে (যেমন দাজ্জাল) এবং এই বিস্টের থাকবে একটি মাত্র চোখ। এবং এই এক চোখের সাইনকে বলা হয় ইলুমিনাতি সাইন, এই সাইন আমরা অ্যামেরিকার ডলারেও দেখি।
মুসলিমরা যেমন ইমাম মাহদী ও ঈশা আঃ এর জন্য অপেক্ষা করে তেমনি ফ্রিম্যাসনরা একচোখা দাজ্জালের জন্য অপেক্ষা করছে।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.