পিরামিড ও মমিঃ এক অপার বিস্ময়
গ্রেট পিরামিড গিজা, ছবি: National Geographic
পিরামিড সমাধিসৌধ হিসেবেই পরিচিত। সত্যিকার অর্থেই তা। প্রাচীন মিসরীয় ফারাও রাজারা মারা গেলে তাদের জন্য গ্রেট পিরামিড গিজার আদলে পিরামিড নির্মাণ করা হতো এবং এর ভেতর সংরক্ষণ করে রাখত তাদের লাশ। প্রাচীন মিসরীয়দের ধারণা ছিল পিরামিডের ভেতরই রাজার পরবর্তী জীবন অতিবাহিত হবে। আর পরবর্তী জীবন সুখে শান্তিতে অতিবাহিত করার জন্য এগুলোর ভেতর রাখা হতো রত্নাগার। পিরামিডের ভেতর লাশ রেখে আসার সময় অনেক ধনরত্ন ও দিয়ে আসত রত্নাগারে। নিয়মিত সেখানে খাবার দেয়া হতো লাশের জন্য। ফরাওদের স্মৃতিস্তম্ভগুলো পৃথিবীর ওপর এমন সমাধিস্তম্ভ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল যেগুলোতে খাবার দেয়া এবং ভক্তি করা পুণ্য কাজ বলে মনে করা হতো।
পিরামিড বলতে পৃথিবীব্যাপী যেটি পরিচিত সেটি হলো, মিসরের গিজায় অবস্থিত সবচেয়ে উঁচু পিরামিড গিজা। অন্যগুলোর মতো গিজার ভেতর কোনে ফারাও রাজার মৃতদেহ নেই। আর স্বাভাবিকভাবেই এ কারণে কোনো রত্নভাণ্ডার নেই।
পিরামিডের ভেতরে থাকা মমি, ছবি: History on the Net
কিন্তু অনেক চোরের ধারণা ছিল গিজার ভেতরও রয়েছে অঢেল রত্ন ভাণ্ডার। এ কারণে বিভিন্ন সময় সে রত্ন গুলোকে সরিয়ে ফেলার জন্য গিজার ভেতর ঢুকত তারা। কিন্তু গিজার ভেতরকার সুড়ঙ্গগুলোর বিন্যাস ও গতিপথ ছিল খুবই জটিল। ফলে চোরেরা পথ হারিয়ে ফেলত, গিজাকে সঠিক ব্যবস্থাপনায় নেয়ার আগে বহু চোর এবং কৌতূহলীদের লাশ হতে হয়েছে এর ভেতর।
কে নির্মাণ করেছিলেন গিজা!
সব মহলেই এ কথা স্বীকৃত যে, ফারাও রাজাদের মাঝে কেউ গিজা নির্মাণ করেছিলেন। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত অনেক গবেষণা হয়েছে পিরামিড নিয়ে। বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থেও এর কথা রয়েছে। পবিত্র কুরআন ও বাইবেলেও পিরামিডের ইঙ্গিত রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো ফারাও রাজাদের মাঝে কে এই পিরামিড নির্মাণের আদেশ দিয়েছিলেন এবং কে-ইবা এর স্থপতি। ধারণা করা হয় এ সৌধটি ৪ হাজার ৬০০ বছরেরও আগে নির্মিত। ফারাও রাজাদের সংখ্যা হিসাব করলে ১৭০ জন বা এর কাছাকাছি কোনো সংখ্যা হবে।
ফারাও খুফু'র মমি, ছবি:Angelfire
বিভিন্ন মুসলিম চিন্তাবিদ কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী সাল গণনা করে ধারণা করছেন ফারাও রাজা খুফু-ই ছিলেন কুরআনে বর্ণিত সেই ফিরাউন ও খুফুর সভাসদদের মাঝে খুব কাছের লোক এবং তার চাচাত ভাই হামান ছিলেন গ্রেট পিরামিড গিজার প্রকৌশলী। আবার ধারণা করা হয় হামান ছিলেন খুফুর প্রধানমন্ত্রীও।
নির্মাণশৈলী
১৩.৬ একর জমির ওপর ভিত নির্মিত হয়েছে দ্য গ্রেট পিরামিড এর প্রতিটি দিক বর্তমানে পাঁচ একর জমি দখল করে আছে, ৭৫৬ ফুট প্রশস্ত ও ৪৫৭ ফুট উঁচু। এর সমগ্র অবয়ব কম্পাসের পয়েন্ট দিয়ে ওরিয়েন্টেড। ১৯ শতকের আগে এটিই ছিল পৃথিবীর বৃহত্তম স্থাপত্য। ধারণা করা হয় গিজার বয়স ৪ হাজার ৬০০ বছরেরও বেশি।
গ্রিক ভ্রমণকারী হেরোডোটাস খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০-এ মিসর ভ্রমণ করে পিরামিড সম্বন্ধে লিখেন, পিরামিড তৈরি করতে ১ লাখ স্লাভ সৈন্যকে ২০ বছর কাজ করতে হয়েছিল। অনেকে আবার মনে করছেন, পিরামিড নির্মাণকারী শ্রমিকরা স্লাভ বা বিদেশী ছিলান্ এরা মিসরের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দা ছিল না, এদের মাঝে অনেকেই ফারাও রাজাদের স্থায়ী কর্মচারী ছিলেন, যাদের একমাত্র কাজ ছিল পিরামিড নির্মাণ। আর অন্য অনেকেই পিরামিড নির্মাণের কাজে খণ্ডকালীন সময় দিত। গ্রামের বাসিন্দা পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি ছিল অনেক মহিলাও।
সবচেয়ে বড় পিরামিড 'গিজা' ছবি: Wikipedia
পিরামিড পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দুতে একটি উঁচু স্তম্ভ। এটি পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম অক্ষে সমান্তরালভাবে আছে। গ্রেট পিরামিড গিজা ২৩ লাখ পাথরের ব্লক দিয়ে ঢাকা রয়েছে। যেগুলোর প্রতিটির ওজন ২.৫ টন।
পিরামিডকে অবস্থানগতভাবে বলা হয় ভূমির মাঝে এবং সীমান্তের উপাসনাবেদি । প্রশ্ন থেকে যায় একই সাথে মাঝে এবং সীমান্তে এর অবস্থান হয় কিভাবে? গ্রেট পিরামিডের অবস্থান মিসরের গিজায়। এ কারণেই এর নামকরণ করা হয়েছে গিজা। আরবি ‘গিজা’ শব্দের অর্থ ‘সীমান্ত’। নীল নদের সৃষ্ট ব-দ্বীপে এটির অবস্থান। এটি উচ্চতম এবং নিম্নতম মিসরের সীমান্ত। এ কারণে মানুষের তৈরি অন্য যেকোনো স্থাপত্যের চেয়ে অবস্থানগতভাবে পিরামিড গুরুত্বপূর্ণ। পিরামিডের অবস্থান যে ব-দ্বীপে সেই ব-দ্বীপটির অবস্থান আবার গাণিতিকভাবে মিসরের মাঝখানে। তাই গ্রেট পিরামিড গিজাকে অবস্থানগতভাবে বলা হয় মাঝে এবং সীমান্তে।
পিরামিড এবং পবিত্র কুরআন
পিরামিড সম্বন্ধে পবিত্র কুরআনে সরাসরি কোনো ভাষ্য নেই। কিন্তু এমন আয়াত রয়েছে, যেখানে ফিরাউন তার সভাসদদের উঁচু একটি ইমারত নির্মাণ করার আদেশ দিয়েছিলেন।
‘আর ফিরাউন বলল : ‘হে সভাসদবৃন্দ! আমি তো নিজেকে ছাড়া তোমাদের আর কোনো রবকে জানি না। হে হামান! আমার জন্য ইট তৈরি করে একটি সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ করে দাওতো! সম্ভবত আমি এতে আরোহণ করে মুসার রবকে দেখতে পাব, আমি তো তাকে মিথ্যা মনে করি।’ (সূরা আল কাসাস-৩৮)
এ ভাষ্য মতে বুঝা যায়, ফিরাউন নিজেকে ছাড়া আর কোনো খোদার অস্তিত্ত্ব স্বীকার করতে চাননি। তাই মুসা আ:-এর খোদার অস্তিত্ব নেই ঘোষণা করে মুসা আ: কে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করতে চাইছিলেন। আর এ কারণেই হামানকে এমন একটি সুউচ্চ ইমারত তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে আরোহণ করে মুসার আ: খোদাকে দেখার চেষ্টা করা যায়। এ ভাষ্যমতে বুঝা যায় যে, হামান ছিলেন ফিরাউনের প্রধানমন্ত্রী বা আরো কাছের কেউ এবং এ হামানই ছিলেন তার প্রধান প্রকৌশলী। আর হামান পোড়ানো মাটি দিয়ে তেরি ইট বসিয়ে নির্মাণ করেছিলেন পিরামিড। এর ওপরে দিয়েছিলেন পাথরের আস্তরণ। কোনো ঐতিহাসিকদের মতে ফিরাউনই প্রথম ইট ও পাথরের ব্যবহার করেছিলেন।
পবিত্র কুরআনে রয়েছে “ফিরআউন বলল : ‘হে হামান আমার জন্য একটি সুউচ্চ ইমারত বানাও, যেন আমি (ঊর্ধ্বলোকের) পথগুলো পর্যন্ত পৌঁছতে পারি আকাশ মণ্ডলের পথগুলো পর্যন্ত এবং মুসার ইলাহকে উঁকি মেরে দেখতে পারি। আমার চোখে তো এই মুসাকে মিথ্যাবাদী বলে মনে হয়।” (সূরা মুমিন ৩৬-৩৭)
গিজার আরেকটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পিরামিড 'সিংহ মানব', ছবি: Discovering Ancient Egypt
এ বিষয়ে ইমাম বাদাবি লিখেন, ফিরাউন সম্ভবত এমন একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন যেখান থেকে নক্ষত্রমণ্ডলী এবং তারাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা যায়। যেন তিনি সেচ ও কৃষির সঠিক সময় হিসাব করতে পারেন। তা ছাড়া এতে আরোহণ করে মুসা আ: কী সত্যিই আল্লাহর নবী ছিলেন কি না তা জানার আগ্রহ ছিল ফিরাউনের। তিনি নিজেকে যেহেতু একমাত্র স্রষ্টা বলে ঘোষণা দিয়েছেন, তাই তিনি চেয়েছিলেন রাজ্যের জনগণকে জানিয়ে দিতে, তিনি সঠিক ও মুসা আ: ভুল।
বর্তমানে গবেষকরা পিরামিডের ভেতর অনেক সুড়ঙ্গ আবিষ্কার করেছেন। এসব সুড়ঙ্গের গন্তব্য যেখানে, সেখান থেকে খুব ভালোভাবে তারা পর্যবেক্ষণ করা যায় পবিত্র কুরআনে যে উঁচু ইমারতের কথা বলা হয়েছে, যা নির্মাণ করার আদেশ দিয়েছিলেন ফিরাউন, গবেষকও ইসলামি চিন্তাবিদদের মতে গ্রেট পিরামিডই সেই স্থাপত্য। একমাত্র গিজার সাথেই সঠিক সময় সঠিক উচ্চতার দিক দিয়ে কুরআনের ভাষ্যের মিল রয়েছে।
বিশিষ্ট মুফাচ্ছিরে কুরআন ইমাম বাগবি লিখেছেন ‘সুউচ্চ ইমারত নির্মাণ হয়ে যাওয়ার পর আল্লাহ জনগণকে পরীক্ষা করতে চাইলেন। ফিরাউন ও তার সৈন্যদল ইমারতের চূড়ায় আরোহণ করে বেহেশতের উদ্দেশে তীর নিক্ষেপ করলেন। তারপর তীরগুলো রক্তমাখা অবস্থায় যখন ফিরে এলো, তখন ফিরাউন জনগণের কাছে গিয়ে চিৎকার করতে লাগল ‘আমি মুসা আ: এর খোদাকে হত্যা করেছি।’
কুরআনের ভাষ্যমতে একথাটি ইসলামিক পণ্ডিতরা পরিষ্কার করেছেন যে পিরামিড তৈরি করতে প্রথমে ব্যবহার করা হয়েছিল মাটি। পরবর্তী সময়ে চুনাপাথর দিয়ে তা ঢেকে দেয়া হয়। আর এটিও গবেষকরা বের করেছেন যে, খুফু হলো সেই মিসরের রাজা বা ফিরাউন, যার কথা পবিত্র কুরআনে রয়েছে এবং খুফুর ভাই হামান ছিলেন পিরামিডের স্থপতি।
কিভাবে করা হতো মমি
পিরামিড যেমন একটি বিস্ময়ের বিষয় তেমনি পিরামিডের ভেতরে মমি রয়েছে। তাও আধুনিক কালের মানুষকে বিস্মিত করে তুলেছে। মমি, এক আশ্চর্যের নাম। কিভাবে করা হতো মমি, আর এটি করার চিন্তাই বা এল কিভাবে? মমি বলতে বোঝায় পিরামিডের ভেতর সংরক্ষিত লাশ। মিসরীয় মমি বিখ্যাত হলেও চীন দক্ষিণ আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সন্ধান পাওয়া গেছে মমির।
একজন ফারাও রাজার মমি, ছবি: bdview24.com
মমি হলো কোনো ব্যক্তি বা পশু-পাখির মৃত্যুর পর তার সংরক্ষিত দেহ। মানুষ মারা যাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবে লাশ রাখলে তাতে ব্যাক্টেরিয়া ও অন্যান্য জীবাণু আক্রমণ করে। নষ্ট করে দেয় নরম চামড়াকে। মমি সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন লাশকে ব্যাক্টেরিয়ামুক্ত রাখার। আর ব্যাক্টেরিয়ার জন্ম হয় পানির উপস্থিতিতে। তাই মৃতের দেহকে যদি দ্রুত পানিমুক্ত করা যায় তবে ব্যাক্টেরিয়া ভিড়তে পারে না। সেটা হোক শুকিয়ে বা বিভিন্ন ক্যামিকেল ব্যবহার করে।
প্রাচীন মিসরিয়রা দেহতে এক ধরনের ক্যামিকেল দিয়ে রোদে শুকাত এবং ধোঁয়ার মাধ্যমেও পানি শুকিয়ে নিত। এ কাজে তারা সুগন্ধিও ব্যবহার করত।
মিসরীয়দের বিশ্বাস ছিল যে, তারা মারা যাওয়ার পর যদি তাদের লাশ মমিতে পরিণত হয়, তবে পরবর্তী সময়ে জীবন হবে শান্তির। তাই নিজেকে মমিতে রূপান্তরের ব্যাপারে আগ্রহী হয়েই তারা ক্ষান্ত হতো না, বরং চাইত মৃত্যুর পরও ধন-সম্পদের মাঝে ডুবে থাকার মতো নিরাপদ আশ্রয়। এসব কারণেই মমি প্রক্রিয়াকরণ ছিল ব্যয়বহুল। সবার সামর্থও ছিল না। তাই ফারাও রাজা, রানী ও তাদের উচ্চপদস্থ দাফতরিক কর্মকর্তাদের মমি প্রক্রিয়া এবং সমাধিস্থ করণ হতো জাঁকজমকভাবে।
মমি করার পদ্ধতিটি ছিল দীর্ঘমেয়াদি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সুগন্ধি ক্যামিক্যাল দিয়ে একটি দেহ মমি করতে ৭০ দিন লেগে যেত। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতো অনেক ধাপে। প্রথমে দেহকে ভালোভাবে ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করা হতো। দ্বিতীয় ধাপে দেহের বাম দিকে চেরা হতো লম্বালম্বিভাবে এবং অভ্যন্তরীণ নাড়ীভুঁড়িগুলো বের করে কেবল হার চামড়া অবশিষ্ট রাখত। মাথার মগজ বের করা হতো নাকের ভেতর হুক ঢুকিয়ে। এরপর যত্ন সহকারে তা ব্যাক্টেরিয়ারোধক স্থানে শুকানো হতো। পরবর্তী সময়ে দেহের প্রতিটি অঙ্গকে আলাদা আলাদাভাবে গুছিয়ে সরু ফালির মাধ্যমে সোজা করে রাখা হতো। সরু ফালিগুলো লাশের অবয়ব ঠিক রাখার কাজ করত।
এরপর এগুলোকে একটি ধারক বা জারে রাখা হতো। মমি করার জন্য চার ধরনের কেনো পিক জার ছিল। এগুলো হলো কেবিসেনুয়েফ, দুয়ামুটেফ, হেপি ও ইমসেটি। কেবিসেনুয়েফের ওপরের অর্থাৎ মাথার অংশ ছিল বাজপাখি আকৃতির, দুয়ামুটেফ ছিল শিয়ালের মতো, হেপি বেবুনাকৃতির এবং ইমসেটি মানবাকৃতির। কেনো পিক জারে কিছুদিন রাখার পর সুগন্ধি ক্যামিকেল লাগানোর জন্য নির্দিষ্ট স্থানে নেয়া হতো। সেখানে দেহটাকে কাপড় জাতীয় সরু ফালি দিয়ে ভালোভাবে ব্যান্ডেজ করার কাজ করা হতো। ব্যান্ডেজে অনেক ভাঁজ দেয়া হতো। এসব ভাঁজের ফাঁকে ফাঁকে সুগন্ধি তো থাকতই, পাশাপাশি স্বর্ণ দিয়ে ঢেকে দিত দেহ অক্ষত রাখার জন্যে। প্রতিটি আঙুলে লাগানো হতো স্বর্ণের ক্যাপ।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.