একনজরে সবচেয়ে দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ

ডেভিড বেনগুরিয়ার, মোসাদের প্রতিষ্ঠাতা
পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে। তবে গোপনীয়তা, দুর্ধর্ষ গোয়েন্দাবৃত্তির চর্চায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়িয়ে গেছে সব গোয়েন্দা সংস্থাকে। মোসাদ এরকমই একটি সংস্থা। বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সংস্থা মনে করা হয় ইসরায়েলের এই প্রতিষ্ঠানটিকে।
আরব লিগের প্রত্যাখ্যানের মুখে দখলকৃত ভূমিতে ইসরাইলকে ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয় ১৯৪৮ সালের ১৪ মে। ১৯৪৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর Central Institute of Coordination নামে মোসাদের কার্যক্রম শুরু হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৫১ সালের মার্চে। প্রতিষ্ঠার পর থকেই মোসাদকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন রাখা হয়।
ইসরাইলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিয়ান মোসাদ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মনে করতেন গোয়েন্দাবৃত্তি ইসরাইলের ফার্স্ট ডিফেন্স লাইন। টার্গেট দেশ থেকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, সন্ত্রাস দমন ও অপারেশনের পর এগুলো গোপন রাখা হচ্ছে মোসাদের প্রধান কাজ। মোসাদ ইসরাইলের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা। এর কাজের রিপোর্ট ও গোয়েন্দা তথ্য সরাসরি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীকে দিতে হয়।
এর নীতিমালা ও কার্যক্রম অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ, যুক্তরাজ্যের এমআই সিক্স ও কানাডার সিএসআইএস এর অনুরূপ। মোসাদের হেডকোয়ার্টার তেলআবিবে। এর কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা ১ হাজার ২০০। অবশ্য ১৯৮০ সালের শেষ দিকে এ সংখ্যা ২ হাজারের বেশি ছিল। মোসাদ সামরিক সার্ভিস নয়। মিলিটারি র্যাংঙ্কিং এখানে প্রয়োগ করা হয় না। যদিও এর অধিকাংশ কর্মকর্তাই ইসরাইলের ডিফেন্স ফোর্সের।
যেভাবে কাজ করে মোসাদ
কাজের সুবিধার্থে মোসাদকে আটটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিভাগগুলো হচ্ছে তথ্য সংগ্রহ বিভাগ, রাজনৈতিক যোগাযোগ বিভাগ, বিশেষ অপারেশন বিভাগ, ল্যাপ বিভাগ, গবেষণা বিভাগ, প্রযুক্তি বিভাগ। তথ্য সংগ্রহ বিভাগ হচ্ছে মোসাদের সবচেয়ে বড় বিভাগ। গুপ্তচরবৃত্তির সময় এর কর্মীরা বিভিন্ন রূপ নেয়। একই কাজে বহুরূপী আচরণ প্রায়ই লক্ষণীয়।
এ বিভাগের কাজের প্রধান ক্ষেত্র হচ্ছে কূটনৈতিক ও বেসরকারি কর্মকর্তা। মোসাদের মাঠ পর্যায়ের গোয়েন্দাদের কাটসাস বলে। সিআইএ এ পর্যায়ের গোয়েন্দাদের কেইস অফিসার বলে। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে ১৩ থেকে ১৪টি অপারেশন এ বিভাগ এক সাথে করতে পারে। এই বিভাগের অধীনে অনেক ডেস্ক আছে। সেখানে একজন করে ভূ-রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ রয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সক্রিয় স্টেশনগুলোর সাথে এই বিভাগ যোগাযোগ রক্ষা করে। রাজনৈতিক যোগাযোগ বিভাগের কর্মীরা দেশের রাজনৈতিক নেতা, অন্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও যেসব দেশের সাথে ইসরাইলের কূটনৈতিক যোগাযোগ নেই সেসব দেশের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। প্রয়োজনে অর্থ ও নারীসহ নানাবিধ সুবিধা দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। এ ছাড়া অন্য দেশের কূটনৈতিক ও দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সাথেও এই বিভাগের কর্মীরা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখে। বিশেষ উদ্দেশ্যে বিভাগকে মোসাদ মেটসাদা (Metsada) বলে।
গুপ্তহত্যা, আধা-সামরিক অপারেশন, নাশকতামূলক কাজ, রাজনৈতিক কলহ তৈরি, মনস্তাত্বিক যুদ্ধাবস্থা তৈরি বা প্রোপাগাণ্ডা চালানো এই বিভাগের কাজ। মোসাদ গোয়েন্দা কর্মকাণ্ডের প্রতিদিনের তথ্য এবং সাপ্তাহিক ও মাসিক পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট তৈরি করে। গোয়েন্দা তৎপরতা চালানোর সুবিধার্থে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে ১৫টি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।
গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, ধারণা ও তত্ত্ব প্রচার, গবেষণা কাজের জন্য ইসরাইলি ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটি গঠন করা। ইসরাইলের ভেতরে ও বাইরে কাজ করে এমন সব গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে এই কমিউনিটি গঠন করা হয়। এর বর্তমান প্রধান সদস্য হচ্ছে, আমান, মোসাদ ও শাবাক। মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স, এয়ার ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টরেট, নেভাল ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্ট, ইন্টেলিজেন্স কর্পস, চারটি আঞ্চলিক গেয়েন্দা সংস্থা আমান’র অন্তর্ভুক্ত।
মোসাদের কার্যক্রম হচ্ছে দেশের বাইরে। সাবাক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ইসরাইলের অভ্যন্তরে ও দখলকৃত ভূখণ্ডে গোয়েন্দা তৎপরতা চালানোর জন্য। এ ছাড়াও ইসরাইলের পুলিশ বাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেন্টার ফর পলিটিক্যাল রিসার্স এই কমিউনিটির অন্তর্ভুক্ত। সোভিয়েত ব্লকে ইহুদি ধর্ম প্রচারের দায়িত্বে থাকা নেটিভ ও গোপন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও নিয়ন্ত্রণের জন্য গঠিত লেকেম এই কমিউনিটির অন্তর্ভুক্ত ছিল। নেটিভকে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন অন্য বিভাগ হিসেবে নেয়া হয়েছে। আর লেকেম বিভাগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অবশ্য এর কার্যক্রম বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়েছে।
ইসরাইলের নিরাপত্তা প্রশ্নে বিভিন্ন প্রচেষ্টা ও কর্মকাণ্ড মোসাদকে গোয়েন্দাবৃত্তিতে সর্বোচ্চ মান দিয়েছে। দুর্ধর্ষ এই গোয়েন্দা সংস্থার মূল লক্ষ্য হচ্ছে ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলন প্রতিহত করা ও আরব বিশ্বসহ মুসলমানদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা। ইসরাইল প্রসঙ্গে বিতর্কিত বা রাজনৈতিক প্রশ্ন নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী বাদানুবাদ তৈরি হলে এ সংস্থা তার কর্মীদের ওই ব্যক্তি বা সংশ্লিষ্ট কাউকে অপহরণ বা হত্যা পর্যন্ত করত। মোসাদ বরাবরই যেকোনো অপারেশন যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ’র ছদ্মাবরণে করত। এই প্রবন্ধে এমন কিছু ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে যা পাঠকদের মোসাদের অপহরণ কর্মকাণ্ড, হত্যা ও বিভিন্ন ক্রাইম সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.