আয়কর বিবরণী যেভাবে তৈরি করবেন

একটি আদর্শ করব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার গত কয়েক বছরে করনীতি ও ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক সংস্কার এনেছে। আগে কর-বছরের ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর বিবরণী জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। প্রতিবছরই একাধিক দফায় সময় বাড়ানো হতো। এ সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে সরকার উন্নত বিশ্বের মতো কর দিবস চালু করেছে।
ফলে এ বছর থেকে ৩০ নভেম্বর কর দিবস পালন করা হবে। এখন থেকে বছরের ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসের মধ্যে যে কোনো সময় কর বিবরণী জমা দেওয়া যাবে। যেহেতু কর বিবরণী জমা দেওয়ার সময় নানা ধরনের কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হয়, তাই একটু আগেভাগে প্রস্তুুতি নেওয়াই ভালো।
এবার করদাতারা ২০১৬-১৭ আয় বর্ষের কর ও আয়কর বিবরণী জমা দেবেন। ফলে ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ের আয় ও সম্পদের হিসাব দিতে হবে। এর ভিত্তিতে দিতে হবে কর।
শুধু বেতনভাতাই যদি কোনো করদাতার আয়ের একমাত্র উৎস হয়, তবে ওই করদাতার আয়কর বিবরণী তৈরি করা তুলনামূলক সহজ। এ ক্ষেত্রে মূল বেতনের পুরো অংশের ওপরই কর দিতে হবে। সব ধরনের বোনাসের ওপর কর দিতে হবে। বাসাভাড়া বাবদ যে অর্থ পান, তা বেসিকের ৫০ শতাংশ বা ৩ লাখ টাকা, এর মধ্যে যেটি কম হবে তার ওপর কর দিতে হবে না। বাকি অংশের ওপর কর দিতে হবে।
যাতায়াত ভাতা বাবদ বছরে ৩০ হাজার টাকা ছাড় পাওয়া যাবে। এর বেশি এই ভাতা পেলে তার ওপর কর দিতে হবে। তবে গাড়ি ব্যবহার করলে বছরে যাতায়াতাভাতাসহ মোট ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যাবে।
চিকিৎসাভাতা বাবদ বছরে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় মিলবে। এ ছাড়া গ্র্যাচুইটি, পেনশনের টাকায় কর ছাড় রয়েছে। প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকায় কিছু কর ছাড় আছে।
এসব বাদ দিয়ে কোনো ব্যক্তির বছরে আড়াই লাখ টাকা আয় হলে তাকে কোনো কর দিতে হবে না। এর বেশি আয় হলে বাড়তি আয়ের ওপর নির্ধারিত হারে কর দিতে হবে।
আর আড়াই লাখ টাকার বেশি করযোগ্য আয় হলেই ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা কর দিতে হবে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় ন্যূনতম কর ৫ হাজার টাকা, অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪ হাজার টাকা এবং সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে ন্যূনতম কর ৩ হাজার টাকা বহাল রাখা হয়েছে।
এর বাইরে নির্দিষ্ট কিছু খাত যেমন সঞ্চয়পত্র, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, ট্রেজারি বন্ড, বীমা ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করলেও কর রেয়াত পাওয়া যায়।
কর বিবরণী তৈরিতে যেসব কাগজ লাগে : আগের বছরের কর বিবরণী জমার কপি; সংশ্লিষ্ট সার্কেলের রসিদ; জমি, ফ্ল্যাট কেনাবেচার দলিলের ফটোকপি; সঞ্চয়পত্র, এফডিআর, ডিপিএস ভাঙানোর নগদায়ন সনদ; গাড়ির ফিটনেস জমার সময় অগ্রিম কর দেওয়ার রসিদ; উৎসে আয়কর দিলে এর রসিদ; সব ধরনের ব্যাংক হিসাবের বিবরণী; শেয়ার কেনাবেচা ও লভ্যাংশ পাওয়ার দলিল, বেতনভাতার সনদ ইত্যাদি।
কীভাবে কর রেয়াত পাবেন : বিনিয়োগে কর রেয়াত পেতে ৩০ জুনের আগেই নির্দিষ্ট খাতে বিনিয়োগ থাকতে হবে। বাড়িভাড়া থেকে মাসে ২৫ হাজার টাকার বেশি আয় হলে এর ব্যাংক হিসাব বিবরণী সংগ্রহ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ৫ লাখ টাকার বেশি ঋণ বা দান ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রহণ না করলে আয় হিসেবে গণ্য হবে। ৪ লাখ টাকার বেশি আয় হলে অগ্রিম কর হিসাব করে ৩০ জুনের আগে পরিশোধ করা যায়।
মোট সম্পদের পরিমাণ ২৫ লাখ টাকার কম হলে তা আয়কর বিবরণী জমার সময় সম্পদ বিবরণী ঐচ্ছিক করা হয়েছে। এখন এই সীমা কমিয়ে ২০ লাখ টাকা হয়েছে। তবে সম্পদের পরিমাণ যা-ই হোক না কেন, মোটরগাড়ি, ফ্ল্যাট কিংবা গৃহসম্পত্তি থাকলে বার্ষিক কর বিবরণীর সঙ্গে সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।
এ বিষয়ে গোল্ডেন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, করযোগ্য সীমার আয় এক টাকা অতিক্রম করলেই ন্যূনতম কর দিতে হবে। কর রেয়াতের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের পর আয় ঋণাত্মক হলেও ন্যূনতম কর দিতে হবে।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.