এহসানরা চলে যায়, আর আমাদের জন্য রেখে যায় লজ্জা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এহসান। যেন তেন নির্যাতন নয় একেবারে মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছিলেন। নির্যাতনের ব্যাপারটা ছিলো পুরোটাই ক্ষমতা দেখানো।
সহপাঠীর কাছ থেকে ক্যালকুলেটর ধার নেওয়া নিয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মারধরের শিকার হন এহসান রফিক। তিনি দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁকে হলের একটি কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। এতে এহসানের একটি চোখের কর্নিয়া গুরুতর জখম হয়। তাঁর কপাল ও নাক ফেটে যায়।
এই নিয়ে পত্র-পত্রিকায় অনেক লেখালেখির সুবাদে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের শাস্তি হয়। সাধারণত ছাত্রলীগ দেশের সব ছাত্রকে অবাধে পিটাতে পারে। এটা তাদের রাষ্ট্রীয় অধিকার। কারণ এই রাষ্ট্র তাদের বাবা শেখ মুজিবের। আর এই রাষ্ট্র চালায় তাদের মা শেখ হাসিনা।
কিন্তু এই এহসানের ঘটনায় বিচার হওয়াতে আমরা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো শাস্তি মূলত পেয়েছে এহসান।
ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রলীগের যে সাত নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছিল, তাঁদের মধ্যে পাঁচজন হলেই থাকছেন। এমনকি যাঁকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের কথা বলা হয়েছে, তিনিও হলে থাকেন। একই ঘটনায় ছাত্রলীগ থেকেও তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু বহিষ্কৃত প্রত্যেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সময় দিচ্ছেন।
অথচ এই ঘটনার পর থেকে আর কোনদিন হলে অবস্থান করতে পারেন নি এহসান। কাগজে কলমে শাস্তি হলো ছাত্রলীগের গুণ্ডাদের। আর শাস্তি মাথা পেতে নিলো এহসান। অবশেষে তার ঢাবির ক্যারিয়ারও শেষ। ঢাবিতে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া তার পক্ষে আর সম্ভব হয়নি।
এহসান আহত হওয়ার পর নিরাপত্তাসংকটের কারণে আবাসিক হলের বরাদ্দ পরিবর্তনের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে সেটি সম্ভব নয় বলে তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়।
এহসানের হল ট্রান্সফার অনেক বড় সমস্যা। অথচ বহিষ্কৃতরা হলে থাকছে এই ব্যাপারে কোন সমস্যাই দেখছে না ঢাবি কর্তৃপক্ষ। এখন প্রশ্ন ঢাবি কর্তৃপক্ষ কি ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি? নাকি ঢাবি কর্তৃপক্ষ নিজেই সন্ত্রাস। তবে আমাদের কাছে মনে হয় ঢাবি নিজেই সন্ত্রাসী। ঢাবিতে এখন ভিসি থেকে শুরু করে সব প্রশাসনিক কর্মকর্তাই সন্ত্রাসের মদদদাতা। তারাই ছাত্রলীগ পোষে। যার প্রমাণ আমরা দেখেছি কোটা সংস্কার আন্দোলনে।
গত মাসের শেষ সপ্তাহে এহসান দেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেছেন।
তার বাবা জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে কী হয়, তা নিয়ে একটু ভীতি কাজ করছিল। কখন আবার কী হয়ে যায়, তা নিয়ে দুশ্চিন্তাও ছিল। এহসান নিজেই চাচ্ছিল না সেখানে যেতে, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল। তাই শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ার পর তাঁকে বাইরে পড়তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এটা আমাদের বাংলাদেশ। এখানে আওয়ামী সন্ত্রাসী ভিন্ন কারো স্থান নেই। হয় সন্ত্রাসীদের মদদ দাও নতুবা পালিয়ে যাও। এহসানরা আমাদের বার বার লজ্জা দিয়ে গেলেও এখন আমাদের লজ্জাও নেই। আমরা বহু আগেই তা বিকিয়ে বসে আছি।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.