'শহীদ' শব্দটি তাই আমাদের কাছে কেবল একটি শব্দ নয়, একটি চেতনার নাম।
কিন্তু বাঙালির জাতীয় জীবনে 'শহীদ' শব্দটির আলাদা একটা তাৎপর্য আছে। পাক হানাদার এবং তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশ মাতৃকার ডাকে যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বাংলা মায়ের ত্রিশ লক্ষ সন্তানকে আমরা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে শহীদ বলে থাকি। আভিধানিক অর্থের বহু ঊর্ধে উঠে 'শহীদ' শব্দটি তাই আমাদের কাছে কেবল একটি শব্দ নয়, একটি চেতনার নাম।
এবার আসা যাক সমসাময়িক ঘটনায়। গত শুক্রবার ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটনের মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাউজানের গহিরায় রোটনের বাড়িতে আসেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারন সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় ও চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও ছিলো। বিকেলে তিনি রোটনের মায়ের কবরে পুষ্পার্ঘ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তার আগে পাশের সালাহউদ্দিন কাদেরের কবরে লাগানো শহীদ লেখা নামফলক অপসারণ করেন।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের কারো কারো যুদ্ধাপরাধ নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, কিন্তু সাকা চৌধুরীর যুদ্ধাপরাধ নিয়ে কোন বিতর্ক নেই। সেটা সাকা বহুবার দম্ভের সাথে নিজ মুখে স্বীকারও করেছে। ৭১এ সাকা বাহিনীর হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার কিছু মানুষ এখনো সে সব নৃশংসতার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। ইসলাম অনুসারে দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ। তাহলে এর বিপরীতে যার দেশপ্রেম নেই, বহিঃশত্রু দ্বারা দেশ আক্রান্ত হলে যে শত্রুর পক্ষে অবস্থান নিয়ে শত্রুর মিশন বাস্তবায়নে সহযোগীর ভুমিকা নিয়ে দেশের অবর্ননীয় ক্ষতি করে, তার নিশ্চয় ইমানও পরিপূর্ণ নয়! তাহলে এরকম একটা দেশ এবং ধর্মের শত্রুর নামের আগে ইসলামের এমন তাৎপর্যপূর্ন 'শহীদ' শব্দটি লিখা কেবলমাত্র রাষ্ট্রীয় চেতনা বিরোধীই নয়, বরং ধর্মেরও চরম বিকৃতি!
তাই সাকা চৌধুরীর কবরে নামফলক তুলে দিয়ে ছাত্রলীগ জ্ঞাতসারে দলের কাজ কারলেও তাদের কাজটি অজ্ঞাতসারে ধর্মের পক্ষেই বেশি গিয়েছে।
দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে বলা হয়েছিলো,
যুদ্ধকালে চট্টগ্রাম অঞ্চলে নজিরবিহীন নিষ্ঠুরতার জন্য ‘সাকা চৌধুরী কোনো উদারতা পাওয়ার যোগ্য নয়’! এরকম একটা জঘন্য মানুষের জন্য উপরের কথাটি আমার কাছে যথোপযুক্ত মনে হয়েছে। হত্যা, ধর্ষণ, লুটতারাজের নেতৃত্ব দান এবং মুক্তির সংগ্রামে পাকিস্তানীদের দোসর হয়ে স্বদেশী বাঙালি নিধনের মতো রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধে দেশের সর্বোচ্চ আদালাত থেকে দন্ডিত একজন রাষ্ট্রদ্রোহীর নামের পাশে রাষ্ট্রীয় এবং ধর্মীয় এই তাৎপর্যপূর্ণ 'শহীদ' শব্দটি লাগানো তাই ধর্মের সাথে সাথে নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রদ্রোহীতা এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালত অবমাননাও। সাকার মতো একটা পাকিস্তানি পেতাত্মা, কুলাঙ্গারের কবর থেকে 'শহীদ' লেখা নামফলক অপসারন করে ছাত্রলীগ একই সাথে ধর্ম, দেশ এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সম্মান পুনরুদ্ধার করেছে।
হিন্দু পুরাণ মতে মানুষের কল্যানে অশুরদের ধ্বংস করতে অস্ত্র তৈরীর জন্য দেবতাদের বুকের হাড় দান করেছিলো দধিচী নামক একজন সাধক। নিজের জীবনের বিনিময়ে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য বুকের হাড় দান করেছিলো সে। বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে আত্মোৎসর্গকারী শহীদরা দধিচীর চেয়ে বড় সাধক। শুধু দেশ মাতৃকার মুক্তির জন্য, শুধু রেখে যাওয়া প্রজন্মকে গোলামির শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার জন্য পাক হানাদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদরদের বিরুদ্ধে জন্মযু্দ্ধে আত্মোৎসর্গ করেছিলো এদেশের ত্রিশ লক্ষ সূর্য্য সন্তান। জাগতিক কোন ঐশ্বর্য্যে তাঁদের এই ঋন শোধিবার নয়। শহীদ শব্দটি দিয়ে আমরা কেবল এই মহাপ্রাণ মানুষগুলোকে সম্মানিত করি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, যে রাজাকার হায়েনাদের বিরুদ্ধে সমরক্ষেত্রে বাঙালির এই মহাপ্রাণ মানুষগুলো আত্মদান করেছিলো, আজ সেই নষ্ট বীর্যে জন্মানো পাক জারজদের নামের পাশেও এই শব্দটি লেখা হয়। বিষয়টিকে লঘু করে দেখার কোন অবকাস নেই।
রহমান বর্ণিল।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
২৬ সেপ্টেম্বর ’১৮ সকাল ১০:৫৯
সুমন:
কবরে হামলা করে ছাত্রলীগ তার জাত চিনিয়েছে তারা কত বড় হারামজাদা। আর চট্টগ্রামে বহু বছর রাজনীতি করেছেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। কই কেউ তো তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনে নাই। একটা জনপ্রিয় লোকেরে ধরে এনে বলা হলো সে যুদ্ধাপরাধী আর অমনি সে যুদ্ধাপরাধী হয়ে গেলো?
ফালতু কথা বলতে আসছেন। ক্ষমতা থেকে সরে যে অন্যায় আপনারা করেছেন তার জন্য বিএনপি'র কিছু করা লাগবে না। সাধারণ মানুষ ঝাড়পেটা করে বাংলাদেশ থেকে তাড়াবে আপনাদের। এখন তো টিকে আছে পুলিশ হারামখোরদের অস্ত্রের জোরে। যেদিন অস্ত্রের জোর থাকবে না সেদিন আইসেন।
আর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আমাদের হৃদয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রামকারী একজন শহীদ হিসেবেই থাকবেন। কোটি মানুষের হৃদয় থেকে মুছে ফেলা সম্ভব না।