ধেয়ে আসছে নতুন মাদক 'খাট'
বিমানবন্দরে আটক হওয়া নতুন মাদক খাট
দেখতে গ্রিন টি এর মতই টুকরো টুকরো সবুজ পাতা। দেখে অনেকেই গ্রিন টি ভেবে গুলিয়ে ফেলতে পারেন। কিন্তু আসলে এটা গ্রিন টি নয়। এটা নতুন মাদক 'খাট'। আফ্রিকার এই মাদকের চাহিদা শুরু হয়েছে বাংলাদেশী মাদকাসক্তদের কাছে। ইতিমধ্যে প্রচুর খাট প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে।
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একের পর এক নতুন ধরনের মাদক ‘খাট’ বা এনপিএসের চালান ধরা পড়ছে। গতকাল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বিমানবন্দরে অভিযান চালিয়ে ১ হাজার ৬০০ কেজি ‘খাট’-এর একটি চালান জব্দ করেছে।
বিমানবন্দরের কার্গো ইউনিটের ফরেন পোস্ট অফিসের মাধ্যমে ইথিওপিয়া থেকে ‘খাট’-এর চালানটি ঢাকায় আসে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সিআইডির সিরিয়াস ক্রাইম শাখা চালানটি জব্দ করে।
গত ৩১ আগস্ট বিমানবন্দর থেকে ৪৬৭ কেজি ‘খাট’-এর চালান জব্দ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নাজিমউদ্দিন (৪৫) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিন নাজিমউদ্দিনের শান্তিনগরের কার্যালয় থেকে আরও ৩৯৪ কেজি খাট জব্দ করা হয়।
আফ্রিকার মানুষ এটিকে চিবিয়ে খায়
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ‘খাট’ অনেকটা চা-পাতার গুঁড়োর মতো দেখতে। পানির সঙ্গে মিশিয়ে তরল করে এটি সেবন করা হয়। এর প্রতিক্রিয়া অনেকটা ইয়াবার মতো। একধরনের গাছ থেকে এই ‘খাট’ বা এনপিএস তৈরি হয়। আফ্রিকার দেশ জিবুতি, কেনিয়া, উগান্ডা, ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, ইয়েমেনে ওই গাছ পাওয়া যায়।
ভেষজ এই উদ্ভিদটি অন্যান্য প্রাণঘাতী মাদকের মতোই ভয়ংকর বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। "খাট" বা "মিরা" নামের এই উদ্ভিদটি নিউ সাইকোট্রফিক সাবস্টেন্সেস বা এনপিএস নামে পরিচিত। অনেকে একে "আরবের চা" বলে থাকে। যেটা আন্তর্জাতিকভাবে সি ক্যাটাগরির মাদক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
খাটের প্রধান আমদানিকারক পূর্ব আফ্রিকার কয়েকটি দেশ।
মাদকসেবীরা এই পাতাটিকে চিবিয়ে বা পানিতে ফুটিয়ে চায়ের মতো খেয়ে থাকে। 'খাট' মূলত পূর্ব আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে উৎপাদন হয়ে থাকে। সেখান থেকে রপ্তানি হয় ইউরোপ আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যসহ অস্ট্রেলিয়ায় ।
খাটের সর্বশেষ চালানটি ইথিওপিয়া থেকে দেশের ২০টি ঠিকানায় 'গ্রিন টি' হিসেবে আনা হয়েছিল। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা।
জাতিসংঘের মাদক এবং অপরাধ ইউনিটের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় গত বছরের মধ্যে ১১০টিদেশ এই খাটকে মাদক হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের দেশে আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। ।
একসময় ব্রিটেনের শতাধিক ক্যাফেতে এই খাট অবাধে বিক্রি হতো। যার বেশিরভাগ ক্রেতা ছিল সোমালি, ইয়েমেনি ও ইথিওপিয়ান নাগরিকরা। তবে এর ভয়াবহতার বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরে ২০১৪ সালেই ব্রিটিশ সরকারসহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ এর আমদানি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
তবে ইথিওপিয়া ও সোমালিয়ার মতো কয়েকটি দেশে এখনও রয়েছে খাটের অবাধ ব্যবহার। এর প্রাকৃতিক স্টিমুলেটিং উপাদান মুহূর্তেই সেবনকারীকে চাঙ্গা করে তোলায় তারা এটিকে চা কফির মতোই মনে করে।
খাটের ৭টি ভয়াবহ প্রভাব:
১. বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাট ফলে সেবনকারী নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। প্রচুর অর্থহীন কথা বলে।
২. বিভ্রান্ত ও নির্লিপ্ত হয়ে যায়। নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে করে।
৩. ঘুমের সমস্যা হয়।
৪. তীব্র মানসিক উদ্বেগ ও আগ্রাসনে আক্রান্ত হয়।
৫. বার বার চাবানোর ফলে দাঁত সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়।
৬. মুখে ক্যান্সার হওয়ারও আশঙ্কা থাকে।
৭. যৌন ক্ষমতা হ্রাস পায়।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.