পাকিস্তানে ২৫ তারিখের নির্বাচন কেন গুরুত্বপূর্ণ?
পাকিস্তানের কোটি কোটি ভোটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আগামী ২৫ তারিখের নির্বাচনে ভোট দিতে। জঙ্গি হামলা, বোমা হামলা, সহিংসতা, রাজনৈতিক বিতর্ক সব বিষয়কে নিয়ে ছাপিয়ে একটাই প্রশ্ন ভোটাররা ভোট দিতে পারবে তো?
প্রায় ২০ কোটি মানুষের এই দক্ষিণ এশিয়ার দেশে কী হচ্ছে তা গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের এই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ পারমাণবিক শক্তি সম্পন্ন, এটি বিশ্বের অন্যতম প্রধান উন্নয়নশীল অর্থনীতির একটি আর বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম প্রধান দেশগুলোর একটি।
নির্বাচনে কারা প্রধান প্রার্থী?
নাওয়াজ শরীফ (পিএমএল-এন)
তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের বিরুদ্ধে পানামা পেপার্স তদন্তে দূর্নীতির অভিযোগ উঠলে পাকিস্তানের আদালত তাঁকে সরকারি দায়িত্বে থাকার অযোগ্য ঘোষণা করে। এরপর তিনি লন্ডনে চিকিৎসারত স্ত্রী'র সাথে দেখা করতে যান। তাঁকে ১০ বছরের কারাদন্ড দেয়া হলেও জুলাইয়ের শুরুতে কন্যা মরিয়মকে নিয়ে তিনি দেশে ফেরত আসেন এবং গ্রেফতার হন।
নওয়াজ শরীফ, পাকিস্তানের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। যদিও একবারও তিনি তার মেয়াদ পূর্ণ করতে সক্ষম হন নি।
খোলামেলাভাবে সেনাবাহিনীর সমালোচনা করায় ও ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টার কারণে সেনাবাহিনী তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। তবে কোনো ধরণের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছে সেনাবাহিনী। নওয়াজ শরীফের ছোট ভাই শেহবাজ শরীফ পিএমএল-এন'এর প্রচারণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
ইমরান খান (পিটিআই)
সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার দুই দশক আগে পাকিস্তানের রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়েছেন কিন্তু কখনো সরকার পরিচালনা করেননি।
বিজয়ের গন্ধ নাকে নিয়ে ঘুরছেন ইমরান খান
অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, এবার সেনাবাহিনীর পছন্দের প্রার্থী তিনি আর তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করছে তারা। সেনাবাহিনী ও ইমরান খান অবশ্য এধরণের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে সেনাবাহিনীর সাপোর্ট থাকার কারণে তিনিই এবার সরকার গঠনের সবচেয়ে নিকটে রয়েছেন।
বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি (পিপিপি)
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নেয়া বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসসম্পন্ন পরিবারের সন্তান।
বিলাওয়াল ভুট্টো, কেউ এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে তিনিই হবেন মূল ফ্যাক্টর
তার মা বেনজির ভুট্টো ও পিতামহ জুলফিকার আলী ভুট্টো দু'জনই পাকিস্তানরের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁদের দু'জনকেই হত্যা করা হয়েছে। বেনজির ভুট্টো আততায়ীর হাতে নিহত হন আর তাঁর পিতার মৃত্যু হয় জল্লাদের হাতে।
প্রথমবারের মত সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া ২৯ বছর বয়সী বিলাওয়াল ভুট্টো বলেছেন তিনি তাঁর মা'য়ের স্বপ্নের "শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল, উন্নয়নশীল ও গণতান্ত্রিক পাকিস্তান" প্রতিষ্ঠা করতে চান।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচন?
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে সামরিক ও বেসামরিক শাসনের মধ্যে ক্ষমতা বদল হয়েছে কেবল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সামরিক বাহিনী বেসামরিক শাসনকে কন্টিনিউ করতে দেয় নি। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তবে কোনো একটি বেসামরিক সরকার আরেকটি বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার ঘটনা এবার দ্বিতীয়বারের মত ঘটবে পাকিস্তানে।
তবে পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক সরকারের এই ধারাবাহিকতা উদযাপন করার সুযোগ পাচ্ছেন না খুব বেশী মানুষ। এবারের নির্বাচনের আগে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নাওয়াজ (পিএমএল-এন) ও দেশটির সেনাবাহিনীর মধ্যে চলা অস্থিরতাই ছিল দেশটিতে প্রধান আলোচনার বিষয়।
পিএমএল-এন'এর অভিযোগ, আদালতের সহায়তা নিয়ে দেশটির শক্তিশালী নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে। অনির্দিষ্ট নির্বাচনী আইন ভঙ্গের দায়ে সারাদেশে দলটির প্রায় ১৭ হাজার সদস্যের বিরুদ্ধে আইনি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে দেশটির গণমাধ্যমকেও ব্যাপক ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে এবং তাদের স্বাধীনতায় বাধা দেয়া হয়েছে।
বিভিন্ন জরিপ অনুসারে বলা যায় নওয়াজের মুসলিম লীগের ভোটার বেশি। তবে আবার ইমরানের পিটিআই এর পক্ষে ধর্মীয় গোষ্ঠীর অবস্থান থাকা এবং সেনাবাহিনীর সুদৃষ্টি থাকার কারণে অনেকেই বলছেন ইমরানই জিতে যাবে। তবে বেশিরভাগ মানুষের ধারণা এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে বিলাওয়াল ভুট্টোর। কেউ এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। ভুট্টো যেদিকে সাপোর্ট দিবে তারাই ক্ষমতা গঠন করতে পারবে।
নির্বাচনে জঙ্গী সংস্থার সদস্যদের অংশগ্রহণও পাকিস্তানিদের একটি বড় চিন্তার বিষয়। অনেকেই মনে করেন দেশের পুরোনো ধারামাফিক নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর সুবিধার্থে নির্বাচনী কৌশল সাজানোর চেষ্টা করছে সেনাবাহিনী। এজন্য ধারণা করা হচ্ছে বিজয়ের গন্ধ এখন ইমরানের নাকেই।
তবে নির্বাচনে যারাই জয় পাক, পাকিস্তানের রাজনৈতিক পটভূমিতে নিজেদের দাপট ধরে রাখার চেষ্টা করবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। তবে নওয়াজ যদি সরকার গঠন করে তবে পাকিস্তান আরো অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে এটা বলা বাহুল্য।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.