২৫ টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যে মহানায়ক নেলসন ম্যান্ডেলা
বর্ণবাদবিরোধী লড়াইয়ের এক কিংবদন্তীর নাম নেলসন রোলিহ্লাহ্লা ম্যান্ডেলা। ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই উমতাতার কাছে ম্ভেজো গ্রামে তার জন্ম। ২০১৩ সালে মৃত্যুবরণ করা ম্যান্ডেলার বুধবার (১৮ জুলাই) ১০০তম জন্মবার্ষিকী।
দীর্ঘ ২৭ বছর কারাবাস করেন ম্যান্ডেলা। সংগ্রামী জীবনের ২৭টি জন্মদিন কাটিয়েছেন কারাগারে। ৯৫তম জন্মদিন থেকেই ছিলেন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তার সংগ্রাম ও আত্মত্যাগে উজ্জ্বল জীবনের স্মৃতি বিশ্ব ভুলতে পারবে না সহজে।
ইতিহাসের এই অবিসংবাদিত মহানায়কের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো এই ব্লগ।
১. দক্ষিণ আফ্রিকার থেম্বু রাজবংশে জন্ম ম্যান্ডেলার। এই থেম্বুরা ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ প্রদেশের ট্রান্সকেই অঞ্চলের শাসক। ট্রান্সেকেরই একটি গ্রাম মভেজোতে ম্যান্ডেলা জন্মেছিলেন।
২. তার প্রপিতামহ নগুবেংচুকা ছিলেন থেম্বু জাতিগোষ্ঠীর রাজা। এই রাজার ছেলে ম্যান্ডেলা হলেন নেলসন ম্যান্ডেলার দাদা। দাদি ভিন্ন গোত্রের হওয়ায় রীতি অনুযায়ী ম্যান্ডেলারা রাজবংশে আরোহণের অধিকার হারান।
৩. ম্যান্ডেলার জন্মের সময় নাম রাখা হয় রলিহ্লাহ্লা যার অর্থ দুষ্টু বালক। ডাক নাম নেলসন রেখেছিলেন তার স্কুলের এক শিক্ষিকা।
৪. শিশু বয়সে ম্যান্ডেলা কুনু নামের একটি গ্রামে বেড়ে ওঠেন। ছোটবেলার বেশিরভাগ সময়ই কাটে গবাদি প্রাণী চরিয়ে এবং অন্য ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খেলাধুলা করে।
৫. ম্যান্ডেলা তার পরিবারের প্রথম সদস্য যিনি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন।
৬. ম্যান্ডেলার বয়স যখন ৯ বছর, তখন তার বাবা যক্ষ্মা রোগে মারা যান। শাসক জোঙ্গিন্তাবা তখন তার অভিভাবক নিযুক্ত হন।
তরুন ম্যান্ডেলা
৭. থেম্বু রীতি অনুযায়ী ১৬ বছর বয়সে ম্যান্ডেলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজ গোত্রে বরণ করে নেওয়া হয়। এসময় তার নাম দেওয়া হয় দালিবুঙ্গা।
৮. ম্যান্ডেলা পরিবারের প্রথম সদস্য যিনি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। ৩ বছরের জায়গায় মাত্র ২ বছরেই জুনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষায় পাস করেন।
৯. তরুণ বয়স থেকে ম্যান্ডেলা নিয়মিত দৌড় ও বক্সিং প্র্যাকটিস করতেন।
১০. ম্যান্ডেলা তার নিজের দেশের মানুষের কাছে অনেক বেশি পরিচিত ‘মাদিবা’ নামে। এটি তার গোত্র নাম। নিজের গোত্রে গ্রামীণ জীবন থেকেই তার উত্থান।
১১. মেন্ডেলা ২৭ বছর জেলে কাটালেও তিনি ছিলেন একজন ওস্তাদ রকমের ছদ্মবেশী। জীবনের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ছদ্মবেশে তার জীবন কাটাতে হয়েছিল। ১৯৬২ সালে তাকে যখন বন্দী করা হয় তখন তিনি একজন শোফার বা ড্রাইভারের ছদ্মবেশে ছিলেন।
ম্যান্ডেলার মুক্তির জন্য ছাপানো পোস্টার
১২. জেলে থাকা অবস্থায় মেন্ডেলা অন্যান্য বন্দীদের সচেতন করতেন একজন বন্দীর অধিকার সম্পর্কে। খালি ম্যাচবক্সের গায়ে, টয়লেট পেপারে লিখে লিখে তিনি কৌশলে বন্দীদের কাছে পৌছে দিতেন বিভিন্ন বার্তা। এই উপায়ে একটি বড় মাপের সফল অনশন আন্দোলনও সংগঠিত করেন মেন্ডেলা জেলের ভেতরে।
১৩. মেন্ডেলার শাসনকালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রায় ৩০ লক্ষ ঘরে টেলিফোন ও বিশুদ্ধ পানির সংযোগ, ১৫ লক্ষ শিশুর শিক্ষা, ২০ লক্ষ ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ এবং প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ ঘর নির্মিত হয়েছিল যা প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষকে আশ্রয় প্রদান করে।
১৪. ২৭ বছর কারাদণ্ড থেকে মুক্তি পেয়ে মেন্ডেলার প্রথম প্রশ্নগুলির একটি ছিল, “ক্রিকেট তারকা ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান কি এখনো বেঁচে আছেন?” প্রশ্নটি তিনি করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান স্টেটসম্যান পত্রিকার এক সাংবাদিকককে।
১৫. নেলসন মেন্ডেলা জেল থেলে মুক্তি পেয়ে অনেক কাঁদতে চেয়েও তার চোখ দিয়ে কোনো অশ্রু ঝরে নি। কারণ, জেলখানায় জোর করে তাকে দিয়ে যেসব কাজ করানো হত এসব তার চোখের “টিয়ার গ্ল্যান্ড” কে স্থায়ীভাবে নষ্ট করে দেয়।
“46664” এর প্রচারাভিজানে ম্যান্ডেলা
১৬. নেলসন মেন্ডেলার একটা অনুতাপও ছিল এই : তিনি রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন এইডস ইস্যু নিয়ে কোনো কাজ করে যেতে পারেন নি। পরবর্তীতে তিনি “46664” নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন এইডস বিষয়ে মানুষকে সচেতন ও এইডস প্রতিরোধ করতে।
১৭. তার ছেলে ম্যাকগাথো মেন্ডেলা মারা যান এইডস-এ। এ মৃত্যুর পর নেলসন মেন্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষের এইডস নিয়ে যত কুসংস্কার যেমন: এটা ঈশ্বরের অভিশাপ/এইডস রোগীদের স্থান নরকে- এসব ধারণা প্রতিহত করতে সচেষ্ট হোন।
১৮. নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হওয়া ছাড়াও তিনি ২৫০ টি পুরস্কার, ৫০ এর অধিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানজনক ডিগ্রী গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন বিদেশী হিসেবে কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়া প্রথম ব্যক্তি এবং রাশিয়ার (সোভিয়েত ইউনিয়ন) নাগরিকত্ব পাওয়া শেষ ব্যক্তি।
ম্যান্ডেলার মুক্তির দাবীতে তার সমর্থকদের বিক্ষোভ
১৯. বহু সড়ক, রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে নেলসন মেন্ডেলার নামে। এমনকি জীববিজ্ঞানীরা একটি প্রাগৈতিহাসিক কাঠঠোকড়ার নাম দিয়েছে Australopicus NelsonmandelaI.
অবাক হচ্ছেন? শুধু এই-ই না। লিডস ইউনিভার্সিটিরর পদার্থবিদরা একটা আণবিক কণার নাম দিয়েছে Mandela Particle বা মেন্ডেলা কণিকা।
২০. উইলিয়াম আর্নেস্ট হেনলি’র “Invictus” বা “অজেয়” কবিতাটির দ্বারা মেন্ডেলা প্রচণ্ড প্রভাবিত ছিলেন। জেলে থাকাকালীন অন্যান্য বন্দীদের তিনি এ কবিতা পড়ে শোনাতেন এবং প্রচন্ড উৎসাহিত করতেন জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে।
বিশ্বকাপ হাতে নেলসন ম্যান্ডেলা
২১. আমেরিকার সিআইএ ১৯৬২ সালে নেলসন মেন্ডেলার অবস্থানের তথ্য দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারকে দেয়। এই তথ্যের ভিত্তিতে মেন্ডেলাকে বন্দী করা হয় এবং আদালতের রায়ে তার ২৭ বছরের কারাদণ্ড হয়।
২২. ১৯৮০ এর দশকে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নেলসন মেন্ডেলাকে প্রচন্ড পরিমাণে অপছন্দ করত। পার্লামেন্টের সদস্যদের কেউ কেউ চাইতেন তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হোক, কেউ চাইতেন তাকে জনসম্মুখে গুলি করে মারা হোক। ব্রিটেনের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার মেন্ডেলাকে একজন সন্ত্রাসী ভাবতে পছন্দ করেন।
নেলসন ম্যান্ডেলা ও তার ৩য় স্ত্রী গ্রাসা মেশেল
২৩. গ্রাসা মেশেলই একমাত্র মহিলা যিনি দুটি দেশের ফার্স্টলেডি ছিলেন। তিনি মোজাম্বিকের প্রেসিডেন্ট স্যামোরা মেশেলের স্ত্রী ছিলেন এবং পরবর্তীতেতে নেলসন মেন্ডেলাকে বিয়ে করে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার ফার্স্টলেডি হোন।
২৪. মেন্ডেল তার রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে মহাত্মা গান্ধীর দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে সশস্ত্র সংগ্রামে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হন।
২৫. ম্যান্ডেলা তিনবার বিবাহ করেন। তার ছয় সন্তান, ২০ নাতি-নাতনী ও অনেক প্রপৌত্র রয়েছে।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.