বাংলাদেশের আলমগীর যেভাবে পাকিস্তানী পপ শিল্পী হলো
কোক স্টুডিওতে 'আমায় ভাসাইলিরে আমায় ডুবাইলিরে' গানটা শুনে চমকে উঠলাম বেশ কয়েক বছর আগে। এত সুন্দর করে বাংলা গান গায় অথচ সে পাকিস্তানী কিছুতেই মিলাতে পারতাম না। ক্যামনে সে পারে? শুধু এই গান নয় তার অনেক বাংলা গান আছে।
তার ব্যাপারে আগ্রহ তৈরি হলো। আবিষ্কার করতে চাইলাম কে সে? জেনে অবাক হলাম সে মূলত বাংলাদেশী। তার জীবনটা ছিল পুরোটাই সিনেমাটিক।
আমায় এত রাতে কেনে ডাক দিলি প্রাণ কোকিলারে, রূপালী নদীরে রূপ দেইখ্যা তোর হইয়াছি পাগল, আল্লাহ মেঘ দে পানি দে ছায়া দে রে, আমায় ভাসাইলিরে আমায় ডুবাইলিরে, আমার হাড় কালা করলাম রে- এমন আরও অনেক জনপ্রিয় বাংলা গানের ভিন্ন উপস্থাপনা করেছিলেন সঙ্গীত শিল্পী আলমগীর হক। গায়কী স্টাইল এবং উপস্থাপনার ভিন্নতার কারণে আলমগীরের কণ্ঠেই গানগুলো সবচেয়ে বেশি শ্রোতা সমাদৃত হয়।
এসব গান গেয়েই মূলত বাংলাদেশের গান পাগল মানুষের কাছে আলমগীর হয়ে উঠেন জনপ্রিয়। তাই দেশের মাটিতে কখনও আলমগীর পা রাখলে শ্রোতাদের কাছ থেকে এসব গান শোনারই আবদার বেশি আসে। ছোটবেলায় ঢাকার শাহীন স্কুলে তার প্রাথমিক শিক্ষা শেষ হওয়ার পর তিনি মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি সম্পন্ন করেন তিনি।
এরপর আমেরিকায় যাওয়ার জন্য পাকিস্তান চলে যান। যার সহযোগিতায় আলমগীরের আমেরিকা যাওয়ার কথা ছিল তাকে গিয়ে আলমগীর করাচীতে পেলেন না। এটা তখন যখন আমরাও পাকিস্তানের অংশ ছিলাম। তাই অনেকটাই বিপদে পড়ে যেতে হল। সঙ্গী হিসেবে তখন ছিল শুধু একটি গিটার। হাতে তেমন টাকা-পয়সাও ছিল না।
কোনো রকম খেয়ে করাচির এক পার্কে গাছের নিচে তাকে রাত পার করতে হতো তখন। করাচি ইউনিভার্সিটির মাঠে তখন একটি ছোট্ট রেস্টুরেন্ট ছিল। রেস্টেুরেন্টের সেই মালিককে আলমগীর তখন পরামর্শ দিলেন। বললেন, ‘আমি গান গাইব, আর তা শুনে আগ্রহী শ্রোতারা গানও শুনতে আসবে, খাওয়া দাওয়াও করবে। আপনার ব্যবসা ভালো হবে।’ রেস্টুরেন্টের মালিক রাজি হলেন।
তবে এর বদলে আলমগীর শুধু রাতের খাবারই পেতেন। এভাবে দু’তিনদিন যাবার পর একজন টেলিভিশন প্রযোজক ওখানে এলেন। দেখলেন আলমগীরের গিটার বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে তার গায়কী স্টাইল। ভালো লাগল তার। তিনি তাকে পরেরদিন টিভিতে অডিশনের জন্য ডাকলেন। আলমগীর গেলেন। ঘটনাচক্রে একটি টক শোতে তখন নির্ধারিত গিটার বাদক আসেননি। আলমগীরকে সেই দায়িত্ব দেয়া হল। আর তাতেই যেন ঘুরে গেল তার ভাগ্যের চাকা।
সেখানেই উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি কম্পোজার সোহেল রানা। তিনি বাচ্চাদের জন্য গান তুলে দেয়ার কথা বলেন আলমগীরকে। মাত্র দশ মিনিটে আলমগীর দুটি গান তুলে দেন। আর এরপর থেকেই কম্পোজার সোহেল রানার সঙ্গে আলমগীরের কাজ শুরু হয়। ঘটনাচক্রে একদিন আলমগীর সোহেল রানার অনুপস্থিতিতে একটি টিভি শোতে শুধুই গিটার বাজিয়ে স্প্যানিস আর ইংলিশ গান গাইলেন।
গাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এমনভাবে নিজেকে মঞ্চে উপস্থাপন করলেন তাতেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আলমগীরের নাম। এই একটি মাত্র টিভি শোতে অংশগ্রহণ করেই পাকিস্তানে পপ ধারার প্রবর্তক হিসেবে আলমগীরের নাম ছড়িয়ে পড়ে। না, আর কোনদিন তাকে পার্কে ঘুমাতে হয়নি, খাবারের জন্য তাকে কষ্টও করতে হয়নি। তিনি একের পর এক গান গাইতে লাগলেন। এভাবেই বাংলাদেশের আলমগীর তিনি হয়ে উঠলেন পাকিস্তানের পপ সম্রাট।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.