মেক্সিকোতে নির্বাচন উপলক্ষে চলছে রক্তের বন্যা
পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মাদকের প্রসার ও সন্ত্রাসের প্রকোপ মেক্সিকোতে। এত বেশি সেখানে মাদক সন্ত্রাস যে, চলমান বিশ্বকাপে তাদের ফুটবল দলের খেলোয়াররাও মাদক মামলার আসামী। এমনকি দলনায়ক রাফায়েল মারকুয়েজও যুক্তরাষ্ট্রের একটি মাদক মামলার আসামী।
আগামীকাল সেখানে নির্বাচন। আইন শৃংখলার পরিস্থিতি সেখানে বেজায় খারাপ। মেক্সিকোতে রোববারের সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় ১৩০ জনের বেশি প্রার্থী প্রাণ হারিয়েছেন।
মেক্সিকোতে নির্বাচন করা মানেই মৃত্যুদণ্ড ভোগ করা। ২০১৭ সাল ছিল মেক্সিকোর সবচেয়ে রক্তাক্ত বছর। গত বছর খুন হয় ৩০ হাজার মানুষ। এসব খুনের একটি বড় অংশই ঘটেছে মাদক সম্রাটদের হাতে। শুধু খুন নয়, দুর্নীতিও মেক্সিকো গ্রাস করে রেখেছে। ওকাম্পো শহরের মেয়র প্রার্থীকে হত্যা করার পর খুনের দায়ে সেখানকার সকল পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী।
এরকম আরেকজন প্রার্থী নিহত হওয়ার পর ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তার বিধবা স্ত্রী । নিজেই নেমেছেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। ৩৫ বছর বয়সী হোসে রেমেডিওস, আরেক শহরের মেয়র পদের প্রার্থী ছিলেন। ছয় সপ্তাহ আগে রাজনৈতিক এক সভা শেষে প্রকাশ্য দিনের আলোয় তাকে হত্যা করা হয়।
তার স্ত্রী কারমেন ওর্তিয। স্বামীর মৃত্যুর পর বদলে গেছে তার জীবনের গতিধারা।
"কারমেন বলেন, "আমার কাছে আমার স্বামী ছিল আমোদের ঘরের ভিত্তি। আমি তাকে বলতাম, তুমি কখনো ভেঙে পড়লে আমাদের পুরো ঘর ভেঙে পড়বে। তাকে মেরে ফেলার পর দুই তিনদিন আমি বিছানা থেকে উঠতেই পারিনি। কিন্তু একটা সময় আমারা বাচ্চারা এসে বলতে থাকে তারা ক্ষুধার্ত। তখন আমি আর পারিনি। আমাকে উঠে দাঁড়াতে হয়েছে।"
কারমেন এবং তার তিন শিশু সন্তানকে এখন সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষীরা সর্বদা অনুসরণ করে। যখন সে তাদের স্কুলে দিয়ে আসে কিংবা নিয়ে আসে। এমনকি সে যখন তার স্বামীর সমাধিস্থলে যায় তখনো তার সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা থাকে। কারমেন নিজের স্বামীর জায়গায় লড়াই করতে মাঠে নেমেছেন।
"আমার নিজেকে অসম্পূর্ণ মনে হয়, কিন্তু কোনও সন্দেহ নেই, আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম আরও দৃঢ়চেতা হিসেবে। কারণ আমি কখনো কল্পনাও করতে পারিনি আমাকে আমার স্বামীর ভূমিকাও পালন করতে হবে।" কারমেন জনসভায় সাধারণ মানুষকে সচেতন করছেন অধিকারের বিষয়ে।মাদকের বিরুদ্ধে তিনি কথা বলেন।
তিনি জনসভাগুলোতে বলেন, "আমি এখানে আপনাদের কাছে এসেছি তার স্বপ্নগুলো পূরণ করতে। নিরাপত্তা-হীনতার কারণে আমি ক্লান্ত এবং আমি জানি আপনারাও। আমরা আমাদের সমাজে শান্তি ও সহাবস্থান ফিরিয়ে আনতে চাই।"
তবে মনোবল শক্ত করে নির্বাচনের লড়াইয়ে নামলেও কারমেনের মন থেকে শঙ্কার মেঘ পুরোপুরি মিলিয়ে যায়নি। তিনি বলেন, "এখন আমার সামনে আশঙ্কা কেবল একটি পিতার অবর্তমানে আমার সন্তানদের সুষ্ঠুভাবে গড়ে তোলা।"
কারমেন জানান, তার স্বামী একটি শান্তির ও নিরাপদ শহর গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। স্ত্রী হিসেবে প্রয়াত স্বামী যে কাজটি শুরু করেছিল সেই কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে চলেছেন একলা কারমেন।
আরেক জন প্রার্থী মারিও চ্যাভেজ। তিনিও মেক্সিকোর একটি শহরের মেয়র পদের প্রার্থী। দুইবার তার ওপর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা হামলা করেছিল। তিনি বলেন, "তারা আমাকে বহুবার খুন করতে চেয়েছে। আমি শুনেছি তারা এই ক্যাম্পেইন শেষ হওয়ার আগেই আমাকে মেরে ফেলার জন্য ঘাতকদের ভাড়া করেছে। বিবিসি থেকে জানতে পারি, এই প্রার্থী তার নিজের জন্য দেহরক্ষী চেযে আবেদন করেছেন কিন্তু এখনো মেলেনি।
তিনি বলেন,"আমার মনে হয় যেসব মানুষ ক্ষমতা হাতে পায়, তারা হয় অপরাধীদের সাথে যুক্ত হয়ে যায় নাহলে নিজেরাই অপরাধী সংগঠন গড়ে তোলে লোকজনকে আতঙ্কিত ও বাধ্য রাখার জন্য। তারা অনেকেই আমার বিপক্ষে কারণ তারা চায় না যে আমি মেয়র নির্বাচিত হই। আমার ভয় আছে কিন্তু এইসব মানুষদের জন্য কিছু করতে চাই। তাই আমি লড়াই চালিয়ে যাবো। মানুষ সত্যিকার পরিবর্তন চায়।"
যাই হোক আমরা চাই মেক্সিকোতে আগামী দিনগুলো ভালো মানুষদের হোক। আগামীকালের নির্বাচনে যারা মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছে তারাই বিজয়ী হোক। সন্ত্রাসীরা, অমানুষেরা নিপাত যাক। ভালো কিছু হোক মেক্সিকোর জন্য।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.