কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হতে যাচ্ছেন এরদোগান
আগামীকাল ২৪ জুন তুরস্কের নির্বাচন। তুরস্ক পশ্চিমা বিশ্বের সাথে তালমিলিয়ে রাশিয়া আর আমেরিকার সাথে সখ্যাত রেখেছে ১৯৫২ সাল থেকে এবং ন্যাটো জোটের সাথে আছে।
নানান পরিসংখ্যান আর বিশ্বরাজনৈতিক বিশ্লেষকদের নজর কেড়েছে তুর্কির এই নির্বাচন।
ওআরসি রিসার্চ সেন্টার নামে একটি গবেষণা সংস্থার সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুযায়ী, আগামীকাল ২৪ জুন তুরস্কে জাতীয় নির্বাচনের প্রথম দফা ভোট প্রেসিডেন্ট এরদোগান ৫৩.৪ শতাংশ ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জরিপটিতে তুরস্কের ৩৭ প্রদেশের মোট ৩,৪১০ জন মানুষ অংশগ্রহণ করে। গত ২৪ মে থেকে ১ জুনের মধ্যে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য একজন প্রার্থীকে ৫১ শতাংশ ভোট পেতে হবে।
এরদোগানের ঠিক পিছনে অবস্থান করছেন রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মোহররেম ইন্স। জরিপ অনুযায়ী তিনি ২৪ শতাংশ ভোট পেতে পারেন। ওআরসি মতে, মেরাল আকসেনারের গুড পার্টি (আইপি) ১১.৫ শতাংশ ভোট পাবে, পিকেকেপন্থী পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (এইচডিপি) সালাহাতিন ৮ শতাংশ এবং ফেলিসিটি পার্টির (এসপি) তেমেল কারামুলাগ্লু ২.১ শতাংশ ভোট পাবে।
রিমরেস রিসার্স সেন্টার নামে আরেকটি গবেষণা সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, এরদোগান সর্বোচ্চ সমর্থন পেতে পারেন। তবে, তাকে দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে হতে পারে। সংস্থাটির জরিপ অনুযায়ী, প্রথম রাউন্ডে এরদোগান ৪২.২ শতাংশ, ইন্স ২৪.৬ শতাংশ, আকসেনার ১৬.৯ শতাংশ, দেমিরতাজ ১২.৩ শতাংশ, কারামুলাগ্লু ৩.৮ শতাংশ ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এএন্ডজি গবেষণা সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার আদিল গুর বলেছেন, যে ৫৫-৬০ শতাংশ ভোটার নির্বাচনে এরদোগানকে সমর্থন করবেন। নির্বাচনে দ্বিতীয় রাউন্ড যাওয়ার কোনো প্রয়োজন হবে না।
নির্বাচনে এরদোগান পিপলস জোটের প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন। এটি ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) ও ন্যাশনাল মোভমেন্ট পার্টির সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে।
তবে তুরস্কের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান প্রথম-রাউন্ডে সম্ভবত চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছেন না এবং তার ক্ষমতাসীন একে পার্টি ২৪ জুনের ভোটে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে পারেন বলে আভাস দিয়েছে একটি জরিপ সংস্থা। তা সত্ত্বেও এরদোগানই নতুন প্রেসিডেন্সিয়াল ক্ষমতা লাভ করতে যাচ্ছেন বলে মনে করছে জরিপ সংস্থাটি। সম্প্রতি‘পুলস্টার গেজেসি’ নামে সংগঠনের জরিপের ফলাফলে এই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
গেজেসি’র এই জরিপ গত ২৫ ও ২৬ মে তারিখে পরিচালিত হয়। এতে ৬,৮১১ উত্তরদাতা অংশ নেন। জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডে এরদোগান ৪৮.৭ শতাংশ ভোট পাচ্ছেন। অন্যদিকে, প্রধান বিরোধী প্রার্থী মুহররেম ইন্স পাচ্ছেন ২৫.৮ শতাংশ ভোট।
এরদোগান এবং ইন্সের পরেই অবস্থান করছেন মেরাল আকসেনার। তিনি ভোট পাচ্ছেন ১৪.৪ শতাংশ। দেশটির সাবেক এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যাশনালিস্ট মোভমেন্ট পার্টি (এমএইচপি) থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর গত বছর ‘আইয়ি’ বা ‘গুড’ পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। তার সাবেক দল এমএইচপি বর্তমানে ক্ষমতাসীন একে পার্টির সঙ্গে জোট গঠন করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।
ফলাফলে আরো দেখা যায়, কারাগারে আটক থাকা কুর্দিপন্থী পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (এইচডিপি) প্রার্থী সেলাহাত্তিন ডেমিরতাজ ১০.১ শতাংশ সমর্থন পাচ্ছেন। তুরস্কের অন্যতম পরিচিত রাজনীতিবিদ ডেমিরতাজ যদিও তিনি কারারুদ্ধ অবস্থায় প্রচারণা চালাচ্ছেন, তারপরেও সংসদে প্রবেশের জন্য ১০ শতাংশ ভোটের যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেটি অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে।
গেজেসির জরিপে দেখানো হয়েছে, একে পার্টি ও এমএইচপি মিত্র জোট ৬০০ আসনের পার্লামেন্টে সামান্য কিছু ভোটের ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছেন না। নির্বাচনে তাদের জোট ৪৮.৭ শতাংশ সমর্থন পাচ্ছেন। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী জোট প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি), আইয়ি পার্টি এবং সাদাত পার্টি মিলে ৩৮.৯ শতাংশ ভোট পাচ্ছেন। অন্যদিকে, সেলাহাত্তিন ডেমিরতাজের এইচডিপি ১১.৫ শতাংশ ভোট পাচ্ছেন।
পার্লামেন্ট নির্বাচনে এইচডিপি’র কর্মক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ দলটির কোনো জোট বা অংশীদার নেই। যদি এটি ১০ শতাংশ ভোটের বাধ্যবাধকতা অতিক্রম করতে ব্যর্থ হয়, তবে তার আসনগুলি দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা দলের পক্ষে চলে যাবে। এতে সম্ভবত এরদোগানের ক্ষমতাসীন একে পার্টি বেশি লাভবান হবে। কারণ দেশটির পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণপূর্বের কুর্দিশ অঞ্চলে একে পার্টি বেশ শক্তিশালী।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.