যেভাবে হত্যা করা হলো কুখ্যাত মোনায়েম খানকে
নবম শ্রেণীতে পড়তাম। বাবার বড় ছেলে। বাবা কৃষক। তেজগাঁও সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করে দিয়েছিলেন বাবা। স্কুলে যেতাম এখান থেকে হেঁটে গুলশান ৯ নম্বর। সেখান থেকে বিআরটিসি বাসে করে তেজগাঁও। বাসে করে যেতে যেতে যে জিনিসটা আমাকে টাচ করতো, সেটা হলো ড্রাইভার-হেল্পার সবাই অবাঙালিদের সমাদর করতো আর বাঙালিদের দেখতে পারতো না। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকেই শেখ মুজিবের সবগুলো জনসভায় যেতাম। কলেজে ও ছাত্ররা এসে আমাদের নিয়ে যেত স্কুল থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের মিছিলে যেতাম। তখন স্লোগান শুনতাম – আইয়ুব-মোনায়েম দুই ভাই/ এক রাশিতে ফাঁসি চাই। তখনই মনে হইতো মোনায়েম খান লোকটা তো বাঙালী, সে নিশ্চই খুব খারাপ। নইলে আইয়ুব খানের সঙ্গে মিলিয়ে সবাই তার ফাঁসি কেন চায়?
বনানী কবরস্থানের পশ্চিম দিকে ছিল মোনায়েম খানের বাড়ি। প্রতি শুক্রবার সে তার বউয়ের কবর জিয়ারত করতে আসতো আর রাস্তায় খুব জ্যাম লেগে থাকতো। কখনো কখনো ঘন্টা-দুই ঘন্টাও পেরিয়ে যেত জ্যামে। আমরা এজন্যও তার উপর বিরক্ত ছিলাম।
মার্চের আন্দোলনের সেই উত্তাল দিনগুলো পেরিয়ে হঠাৎ করেই ২৫শে মার্চ চলে এল। অপারেশন সার্চলাইট নামের বীভৎস গণহত্যা চালিয়েছে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী। অত্যাধুনিক ভারী অস্ত্রশস্ত্রে ছড়িয়ে পড়ছে দেশময়, চালিয়ে যাচ্ছে শতাব্দীর অন্যতম ভয়ংকর গণহত্যা! চারিদিকে শুধু ভয় আর আতংক, প্রাণ হাতে পালাচ্ছে মানুষজন। ঠিক সেই সময়টায় ১৯৭১ সালের মে মাসে আমি সেক্টর-২ এর অধীনে ফ্রিডম ফাইটার হিসেবে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট গ্রুপে যোগ দেই। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন খালেদ মোশাররফ। সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন মেজর হায়দার। ক্যান্টনমেন্ট গ্রুপের কমান্ডার ছিলেন এম এ লতিফ, সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন রহিমুদ্দিন। আমাদের দলে ছিল ১৩ সদস্য।
এর মধ্যে আমি ছাড়া আরো তিনজন ছিলো নবম শ্রেণীর ছাত্র। এরা হলো ফেরদৌস, গিয়াসউদ্দিন আর আনোয়ার। ত্রিপুরার পাহাড়ি এলাকার মেলাঘর ছিলো আমাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। ওখানে প্রশিক্ষণের পর আমাদের পাঠানো হবে আমাদের এলাকায়। কিন্তু কুমিল্লা বর্ডারে ক্রস করার সময় পাকিস্তানী আর্মিদের এমবুশে পড়ে যাই। আমরা ফিরে আসি ভারতে। ওখান থেকে আবার মেলাঘর। মেজর হায়দার বললেন, তোমাদের দিয়া গেরিলা অপারেশান হবে না। পাকিস্তানি আর্মিদের এমবুশে পড়ে তোমাদের নৈতিক পরাজয় ঘটেছে। তোমরা শুধু ক্যাম্পে ক্যাম্পে গোলাবারুদ আনা নেয়া করবা।
আমার খুব মন খারাপ হয়ে গেলো। আমরা হইলাম কৃষকের পোলা। যুদ্ধ করতে আইছি, যুদ্ধ করতে না পারলে ক্যামনে হইবো। যুদ্ধে আসার সময়ই আমার জিদ ছিল, যেমন কইরাই হোক একটা বড় কাজ করতে হইবো, না পারলে ইতিহাসে জায়গা হইবো কেমনে?
তখন মনে হইলো কি মেজর হায়দারের মন জয় করতে না পারলে আর গেরিলা যুদ্ধ হবে না। মেলাঘরে ক্যাম্পের বিশ-বাইশ গজ দুরত্বে একটা ছনের দোচালা বেড়া ঘরে ছিল তার অফিস। মাঝখানে একটা টেবিল নিয়া সব সময় ওইখানে বসে কাজ করতেন তিনি।
প্রত্যেকদিন সকালে লক্ষ্য করতাম এটা। একটানা বাইশ-তেইশ দিন। ঘন্টার পর ঘন্টা। তার দিকে তাকায়া থাকতাম। আমার টার্গেট হইলো সে দেখুক আর বলুক, তুই এখানে খাড়ায়া আছস কেন! কারণ কি? অনেক অপেক্ষার পর একদিন সেই সুযোগ হইলো।
তিনি আমারে বললেন, কিরে এইহানে দাড়ায়া আছস ক্যান।
কিশোর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক
আমি কই, আমারে গেরিলা যুদ্ধে পাঠান।
আমারে কইলো, তোর সাহস কেমুন. কারে মারতে পারবি? শুইন্না কিছুক্ষণ চিন্তা করলাম। তখন তো যুদ্ধ। পাকিস্তানি শত্রুদের মারাটাই হইলো মূল কথা। বললাম, স্পিকার আব্দুল জব্বার খানকে মারতে পারমু।
আমাদের সঙ্গে ছিল জব্বার খানে ছেলে বাদল। তখন জানতাম না বাদল যে জব্বার খানের ছেলে।
ওরে দেখাইয়া বললেন, হেরে চিনস, হের বাপই তো আব্দুল জব্বার খান। পুরা টাস্কি লাইগা গেলাম। হায় হায় এখন কি হইবো। আবার চিন্তা করতে থাকলাম। কিছুক্ষণের পর বললাম, আপনিই কন, কারে মারতাম?
কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর বললেন, মোনায়েম খানরে মারতে পারবি?
সঙ্গে সঙ্গেই মনে হইলো ওর বাড়ি আমি চিনি। আমার বড় চাচায় মোনায়েম খানের বাড়িতে তার সিন্ধি গরুর দুধ দোহান করে। বললাম, মারতে পারলেন কি দিবেন? বললেন, কি চাস? বললাম, কোমরের পিস্তলটা চাই। হেসে বললেন, মারতে পারলে এই পিস্তল তো কিছুই না, বাঙালী জাতি তরে মাথায় লইয়া নাচবো। আমি বললাম, পারবো। মনে মনে বললাম, পারতেই হইবো।
তিনি খুব খুশি হইলেন। আমার পিঠে চাপড়াইয়া দিলেন। এখনো আমি মাঝে মইধ্যে ওই পিঠ চাপড়ানো টের পাই। অনেক সাহস আর দিছিলেন ওই পিঠ চাপড়াইয়া। বললেন, আজকেই তগো ঢাকা ক্যান্টম্যান্ট গ্রুপে পাঠামু।
তখন সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে। ক্যাম্পে গিয়া সবারে বললাম, চলো যাই। হায়দার ভাই ডাকছে সবাইরে। আমগরে অপারেশানে পাঠাইবো।
ঢাকায় আইসা ভাটারায় গেলাম। চাচার বাসা। চাচা হলেন বাবার বড় ভাই। আব্দুল জব্বার। গরুর দুধ দোহানোতে অভিজ্ঞ বলে মোনায়েম খানের বাড়িতে দুধ দোহানোর কাজ করতেন। ওই বাড়িতে চাচার কাজের কারণেই খুব যাতায়াত ছিল। তারেই প্রথম প্রস্তাব দিলাম সহযোগিতা করার জন্য। চাচা বললেন, হায় হায় আমাগো সব বাড়িঘর জালায়া দিবো।
এরপর ওই বাড়ির চাকর শাহজাহান আর মোখলেসের লগে খাতির করলাম। শাহজাহান হলো ওই বাড়ির রাখাল ওর সঙ্গে গল্প করতাম। গরু কতটুকু দুধ দেয়, বেতন কতো, চাকরিতে আরাম কেমন, এত বড় মানুষের বাসায় কাজ কইরা সুবিধা কেমন ইত্যাদি জিজ্ঞেস করতে গিয়া বুঝলাম তারা খুবই ক্ষেপা মোনায়েম খানের ওপর। বলে, সে এমুন লোক, গরু দুধ দোহানোর সময় মোড়া লইয়া বইয়া থাকে, বেতন তো দেয়ই না। পালায়া গেছি তিনবার। পুলিশ দিয়া ধইরা আনছে। কত মুক্তি বাহিনী আছে, ওরা কি একবারও এদিকে আইবার পারে না।
বুঝতে পারলাম একে দিয়েই কাজ হইবো। বললাম, বিকেলে গরু বাইন্দা ছুটি হইলে আইয়া পড়েন। গুলশানে দুই নম্বরের আরমান রেস্টরেন্টে। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পরিচয় করাইয়া দিমু।
দুই দিন তারে ঘুরাইলাম। তার ইচ্ছার তীব্রতা কতটুকু বোঝার জন্য। দেখলাম সে সত্যি সত্যিই চায়। পরে তারে বললাম, মুক্তি বাহিনী লাগবো না, আমার লগেই অস্ত্র আছে। আমিই পারুম। তৃতীয় দিন তার অবস্থা বুঝে তার সঙ্গে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। অস্ত্র নিলাম ভারতীয় স্টেনগান-৩৬, এইচ.জি.হ্যান্ড গ্রেনেড আর একটা ফসফরাস। ফসফরাসের ব্যবহার হইলো আগুন লাগানোর জন্য।
শাহজাহানের সাথে গরু ঢোকানোর সময় ঢুকলাম। গরু ঢোকানোর একটা আলাদা গেইট আছে। ওই গেইটের সঙ্গে মূল বাড়ির আরেকটা ছোট্ট গেইটের সঙ্গে সংযোগ আছে। পাশেই ছিল কলাবাগান। ঢুইকাই আমি কলাবাগানে লুকাইয়া থাকলাম। ভেতর থেকে ঘুইরা আইসা শাহজাহান বললো আজকে কাজ হইবো না। উনি অসুস্থ, উপরে উইঠা গেছে। ওনার ছেলে উঠার সিড়ির প্রথম ঘরটাতেই থাকে, অস্ত্রশস্ত্র নিয়াই থাকে। যাওয়াটা ঠিক হইবো না।
বর্তমানে যেইটা কবরস্থান, এর পূর্বে পার্শ্বেই ছিল খ্রিষ্টান্দের গির্জা। ওখানে ইটের স্তুপ ছিল। বের হয়ে অস্ত্রের ব্যাগটা ওইখানে রাইখা আসলাম।
পরদিন আবার প্রস্তুতি নিয়া ঢুকলাম। গরু ঢোকানোর গেইটের মধ্যে একটা ২০০ ওয়াটের বাল্ব জ্বলছিল। প্রথমে ওটা ভেঙে ফেললাম। আমার অবস্থান যেন না বোঝা যায় সেজন্যই বাল্ব ভেঙে ফেলছিলাম। উল্টা হইলো কি, বাল্ব ভাঙায় শোরগোল পইড়া গেল, চোর ঢুকছে, চোর ঢুকছে। তাড়াতাড়ি বাড়ির উত্তর পাশ দিয়া লাফ দিয়া বাইরাইয়া আসলাম। কোনোক্রমে বেঁচে গেলাম। মনটাই খারাপ হয়ে গেল। এরপর দুই দিন শাহজাহান আর মোখলেসের সঙ্গে দেখা করি নাই।
ভাটারায় এখন যে মন্দিরটা আছে, এই মন্দিরটার পেছনেই ছিল জমিদারদের কাচাড়ি বাড়ি। ওখানে বনেদি হিন্দুরা বসে তাস খেলতো। এরকম দিশাহীনভাবে ঘুরছিলাম। সেদিনটা ছিল ১৩ অক্টোবর। কি করবো, কি হবে কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এ সময়ে আমাকে একজন ডাকলো মোজাম্মেল ভাই বলে। আমি তো খুবই অবাক। কারণ এলাকার লোকজন আমারে ডাকে নূর মোহাম্মদ নামে। বাইরের লোকেই কেবল ডাকে মোজাম্মেল নামে। ঘাড় ঘুরাইয়া দেখি শাহজাহান।
দুই দিন আমি না যাওয়ায় ওরা ভাবছিল আমি তাদের বিশ্বাস করতে পারি নাই। বললো, আপনি কি বিশ্বাস করতে পারতেছেন না?
শাহজাহান আবার তার ক্ষোভের কথা বলল মোনায়েম খানের বিরুদ্ধে। সে মনেপ্রাণে চায় আমি যেনো মোনায়েম খানকে মারতে পারি। শাহজাহানের কথা শুনে আমার মনে হইলো, মরি আর বাঁচি যাই হোক আমার আজকে যাইতেই হবে এবং যা করার আজকেই করতে হইবো।
আমি তাকে বসাইয়া রেখে গেলাম আরেকজনকে খুঁজতে। বাড়িতে গেলাম। আমার চাচাতো ভাই আনোয়ারকে খুঁজতে, অর্থাৎ যারেই পাই একজনকে নিয়ে যেতে চাই। আনোয়ারকে নিয়ে আসলাম। তখন সন্ধ্যা পৌনে সাতটা। কলাবাগান দিয়েই ঢুকলাম, আগে যেভাবে ঢুকেছিলাম। সঙ্গে গির্জায় অস্ত্রগুলো নিয়ে আসলাম।
শাহজাহান গরু বাইন্ধা, ভেতর থেইকা ঘুইরা আইসা কইলো. আজকে সব ঠিক আছে। ড্রইংরুমে বইসা কথা বলতাছে মোনায়েম খান, শিক্ষামন্ত্রী আমজাদ হোসেন খান, আর তার মেয়ের জামাই জাহাঙ্গীর আদেল।
আমি শাহজাহান আর মোখলেসকে বললাম, তোমাদের কাপড়-চোপড় যা প্রয়োজনীয় জিনিস আছে, সব নিয়া বাইর হইয়া যাও, কারণ ঘটনা ঘটার পর মরুক আর বাঁচুক, তোমাগোরেই প্রথম ধরবো।
জিজ্ঞেস করলাম, মোনায়েম খান কোনজন? ভালোমতো তো চিনি না।
শাহজাহান বলল, মাঝখানে বওয়া, মাথায় টুপি পরা, ওইটাই মোনায়েম খান।
ওই সময় কড়া নিরাপত্তা চলছিল মোনায়েম খানের বাড়িতে। গেটে বেলুচ পুলিশ, গেটের বাইরে তাঁবু খাটিয়ে আরেক প্লাটুন পুলিশ। আর তার একটু দুরে অস্ত্রধারী মিলিটারীরা। তবে এত কিছুতে ভয় ছিল না। কারণ আজকে যা করার করতেই হবে। কোনো প্রকার চিন্তা-ভাবনা না কইরাই আগাই গেলাম ড্রইংরুমের দিকে। পুরা কাজ করতে সময় লাগলো বড়জোর দুই মিনিট।
ড্রইংরুমের দরজা খোলা।
শাহজাহান যেভাবে বলেছে, সেভাবেই তারা কথা বলছে মাথা নিচু করে। টুপি পরা মোনায়েম খানকে লক্ষ্য করেই স্টেনগান চালালাম। ম্যাগজিন ছিল মাত্র দুটি। ট্রিগারে চাপ দিলাম। ভুর ভুর করে গুলি বাইর হইলো। একটা শব্দ শুনলাম, ও মাগো বইলা মোনায়েম চিৎকার দিলো। আর বাকি দুইজন ছোটাছুটি করতেছে, সোফার তলায়- দরজার কোণায়। আমি আরেকটা ম্যাগজিন ঢুকাইলাম। কিন্তু কাজ করলো না। এর মধ্যে মিলিটারি গুলি করতে করতে গেইট দিয়া ঢুকতেছে।
পেছনে চাইয়া দেখি আনোয়ার নাই। আমি দৌড় দিয়া বাইর হইয়া দেয়াল টপকাইয়া কবরস্থানের দিকে ঢুইকা পড়লাম। পেছনে খালি গুলির শব্দ। পুরা বাড়ি ঘেরাও কইরা ফালাইছে। কবরস্থানের পাশেই লেক। লেক সাতরাইয়া পার হইতে গিয়া ক্লান্ত হইয়া পড়ি। একটা কোষা নৌকা বাঁধা ছিল। সেটা দিয়া গুলশান লেকের পাশ পর্যন্ত আসলাম। গলার সমান পানি ব্রিজের নিচে। ওপর দিয়া না যাইয়া, ব্রিজের নিচ দিয়া বারিধারা বালুর চরে আইসা উঠলাম। পরে একটু স্থির লাগলো। একটা চায়ের দোকানে আইলাম। আমার কাঁধে স্টেনগান দেইখা সে দোকান বন্ধ কইরা দৌড় দিলো।
ক্যাম্পে ফিরা যাইতে ইচ্ছা হইলো না। গলায়, পায়ে-হাতের বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াতে গিয়ে কেটে গেছে। মনে হইলো, আজকে যাই হোক, সব কিছুই তামা কইরা ফেলুক পাকিস্তানি মিলিটারি। আজকে আমি বাড়ি যামু। বাড়ি যাইয়া ঘুমামু।
বাড়িতে গেলাম। তখনো জানি না, মোনায়েম খান সত্যি সত্যি মরছে না বাঁইচা আছে। বাড়ি গিয়াই ঘুমাই গেলাম। পরদিন ১৪ অক্টোবর সকাল সাতটা সোয়া সাতটার দিকে বড় চাচা, জব্বর চাচা আমারে চিৎকার কইরা ঘুম ভাঙাইলো। বলল, সকালের খবরে বলছে যে, গতকাল রাতে দুস্কৃতকারীর হাতে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খান গুলিবিদ্ধ হন নিজ বাসভবনে। আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল হাসপাসতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। সেই প্রথম জানলাম খবরটা। আমার যে কি ভাল্লাগতাছিলো আর হালকা লাগতেছিলো তা বলে বোঝনো যাবে না।
চাচা আমারে বাসা থাইকা চইলা যাইতে কইলো। না গেলে এ বাড়ির সবাইরে খুন কইরা ফেলব মিলিটারি।
আমি বাড়ি ছাড়লাম। ক্যাম্পে আসলাম। মেজর হায়দাররে জানালাম। আমারে জড়াইয়া ধরলেন। বললেন, এখন কি পিস্তলটা লাগবো?
আমারে বুকে জড়াইয়া রাখলেন অনেক্ষণ। এরপর পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের আগ পর্যন্ত আমি বনানী গুলশান এলাকার দায়িত্ব পালন করি। স্বাধীনতার পর সরকার আমারে বীর প্রতীক ঘোষণা করে।
উপরের এই সাক্ষাৎকারটা একাত্তরের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হকের। কি অসমসাহসে জীবনটা বাজি রেখে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণরকে হত্যা করেছিলেন, ভাবতেও আজ গায়ের রোম দাঁড়িয়ে যায়!
বিঃ দ্রঃ সাক্ষাৎকারটি আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
মন্তব্য: ১ টি