মসজিদ প্রতিষ্ঠায় নারী
বিনত বিবি মসজিদ
বাংলাদেশের মসজিদের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বেশকিছু মসজিদ এদেশের নারীদের দ্বারা বা তাদের সাহায্য-সহযোগিতায় অথবা তাদের ওসিলায় নির্মিত। তন্মধ্যে কোন কোনটি তাদের নামেও পরিচিত। সুলতানী, মুঘল ও ব্রিটিশ শাসনামলের সুবেদার বা আঞ্চলিক শাসকগণ অনেক সময় তাদের মা, স্ত্রী ও কন্যাদের নামে মসজিদ নির্মাণ করেন। আবার বাংলাদেশের স্থানীয় জমিদার অথবা ধনাঢ্য ব্যক্তিরাও মসজিদ নির্মাণ করেন মা, বোন ও স্ত্রীর নামে।
বাংলাদেশের প্রাচীন মসজিদগুলোর অন্যতম ঢাকার ‘বিনত বিবি মসজিদ’। পুরনো ঢাকার নারিন্দায় এই মসজিদটি অবস্থিত। ১৪৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মসজিদটি দুই গম্বুজ বিশিষ্ট। মসজিদের প্রবেশ দ্বারে খোদিত লিপি থেকে জানা যায়, ১৪৫৭ সালে মরহামত কন্যা বখত বিন বা বিনাত বিবি এ মসজিদ নির্মাণ করেন। ঢাকার আরো একটি প্রাচীন মসজিদ হলো সিংটোলার সিতারা বেগম মসজিদ। বাংলাবাজার প্যারিদাস রোডের পাশে অবস্থিত মসজিদটি। ১৮১৯ খ্রিষ্টাব্দে সিতারা বেগম নির্মাণ করেন। ঢাকার নীলক্ষেত এলাকায় ১১১৮ হিজরি সালে মরিয়ম সালেহা মসজিদটি নির্মিত হয়। এটি বাবুপুরা শাহসাহেব বাড়িতে অবস্থিত।
পটুয়াখালী জেলার বিবি চিনি মসজিদ
অন্যদিকে ধানমন্ডির হাতীরপুল এলাকার বাইতুল মুবারক মসজিদটির নির্মাতা গোলেছা বিবি। ৩,০০০ বর্গফুট মসজিদটি ১৯৬০ সালে নির্মিত। বাহাদুর শাহ পার্ক মসজিদটি নির্মাণ করেন নান্নী বিবি। নির্মাণকাল ১২৩১ হিজরি, আয়তন ৩,০০০ বর্গফুট। বেগমগঞ্জ আছিয়া মসজিদ ১৯৬৮ সালে নির্মাণ করেন আছিয়া বেগম। ভাটিখানা মসজিদ কাদের বিবি ১৭৫৭ সালে নির্মাণ করেন।
আরমানিটোলা বাঘের মসজিদ
আরমানিটোলা বাঘের মসজিদটি ১৬৬৯ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দা বিবি নির্মাণ করেন। জিন্দাবাহার কামরাঙ্গা মসজিদ নির্মাণ করেন আকতারুন্নেছা। এছাড়া ফখরুন নেছা ১৮৬০ সালে হাজারীবাগে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। লক্ষ্মীবাজার শাহ সাহেব বাড়ি মসজিদটির নির্মাণকাল ১৮৫০ সাল। এক গম্বুজ বিশিষ্ট দ্বিতল এ মসজিদের নির্মাতা লুত্ফুননেছা। রঙ্গী বিবি ঢাকার ইব্রাহীমপুর বাইতুস সালাম মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদটি ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং আয়তন ৬০০ বর্গফুট। জুরাইন বুড়ির মসজিদ ১৯৬৬ সালে স্থাপিত। জনৈকা বিধবা মহিলা কর্তৃক এ মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়।
তেজকুনীপাড়ায় রয়েছে পীরমা কর্তৃক স্থাপিত “পীরমা জামে মসজিদ।” মসজিদটি ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত। মিরপুর নবাবেরবাগ উত্তরপাড়া জামে মসজিদটি ১৯১০ সালে মালেকা খাতুন কর্তৃক নির্মাণ করা হয়। আবার তেলীপাড়া মসজিদটির নির্মাতা মাকতি বিবি। ১,৩০০ বর্গফুট আয়তনের মসজিদটির নির্মাণকাল ১২৮১ হিজরি সন। ইনতুন নেসা বিবি শ্যামপুর আলী বহর মসজিদটি ১৯১০ সালে নির্মাণ করেন। একলাছ বিবি ও উলাছি বিবি ১৯২০ সালে খিলবাড়ী মসজিদটি নির্মাণ করেন। রাহেলা খাতুন বাংলা ১৩৪৪ সালে দক্ষিণ শাহজাহানপুরে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। ফয়জুন বিবি ১৯৪০ সালে কাজলায় “বায়তুল জান্নত” মসজিদ নির্মাণ করেন। গোলেছা বিবি ১৯৬০ সালে ধানমন্ডি বায়তুল মোবারক মসজিদ নির্মাণ করেন।
সুফিয়া বেগম ১৯৬৫ সালে খিলক্ষেত নতুন বাজার মসজিদ নির্মাণ করেন। সমিরুন নেসা ও নুরজাহান খাতুন ১৯৬৪ সালে চিড়িয়াখানা মসজিদ নির্মাণ করেন। কুলসুম বিবি ১৯৭৪ সালে শাহজাহানপুরে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। মাজেদা খাতুন ১৯৭৮ সালে কাজলারপাড় মসজিদ নির্মাণ করেন। কুরশিয়া বেগম ১৯৮৪ সালে রামপুরা দারুস সালাম মসজিদ নির্মাণ করেন। নুরবানু ১৯৩৮ সালে নিউ ইস্কাটন ছোট মসজিদ নির্মাণ করেন। মজিরুন নেসা ১৯৮৩ সালে মিরপুর শাহমকসুদুল আওলিয়া মসজিদ নির্মাণ করেন।
ঢাকার বাইরেও কয়েকটি মসজিদ নারীদের দ্বারা বা তাদের নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেমন-নারায়ণগঞ্জ জেলায় রয়েছে ‘বিবি মরিয়ম মসজিদ। এটি মুঘল আমলে নির্মিত। মুন্সীগঞ্জের শহর জামে মসজিদ ১৮৮২ সালে নির্মাণ করেন আক্রামুন নেসা। বগুড়ার ‘বিবির মসজিদ’ ১৬২৮ সালে নির্মাণ করা হয়। বিবি বেগুনী মসজিদটি বৃহত্তর খুলনা এলাকায় সুলতানী আমলে নির্মিত হয়। পটুয়াখালী জেলার ‘বিবি চিনি’ মসজিদও মুঘল আমলে প্রতিষ্ঠিত। ‘বিবি মেহের মসজিদটি’ ১৮১৯ সালে ময়মনসিংহে নির্মাণ করা হয়। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আরো হয়তো অনেক মসজিদ আমাদের নারীদের দ্বারা বা তাদের ওসিলায় নির্মিত হয়েছে। ইসলামের প্রসারে ও মসজিদ নির্মানে বাংলার নারীদের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.