আমার জামাই কিছু করে নাই যে
নিহত কাউন্সিলর একরাম, তার স্ত্রী ও তার দুই মেয়ে।
আজকাল খুন করাটা কোন ব্যাপার নয়। ব্যাপার হলো কে কত নৃশংসভাবে খুন করতে পারে! কীভাবে পৈশাচিক আনন্দ লাভ করতে পারে। বাংলাদেশের সরকারি খুনে বাহিনী এখন শুধু খুন করে না, খুন করার সময় স্বজনদের ফোন করে হত্যার শব্দ শোনায়!
'আমার জামাই কিছু করে নাই যে' এই কথাটা ট্যাগলাইন হয়ে একটি অডিও ফোনালাপ ভাইরাল হয়েছে গতকাল হতে। অডিওটি প্রচার করেছে গোয়েন্দা সংস্থার গুলিতে নিহত একরামের স্ত্রী। গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা একরামের স্ত্রীকে ফোন করে তাদের একরামের খুনের শব্দ সরারসরি সম্প্রচার করেছে।
মাদক বিরোধী অভিযানের নাম করে এখন পর্যন্ত এই রমজান মাসে পুলিশ-র্যাব মিলে খুন করেছে প্রায় ১৩০ জন মানুষকে। এর মধ্যে কে আসলে মাদকের সাথে জড়িত অথবা কে জড়িত নয় তা নির্ণয়ের সুযোগ হয়নি। আর কেউ যদি মাদকের সাথে যুক্ত থাকে তবে তাকে অবশ্যই আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। কোনভাবেই মাদকের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নয়।
নিয়মিত ক্রসফায়ারের ঘটনার মধ্যে ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগে অভিযুক্ত টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর একরামুল হক (৪৬) গত শনিবার টেকনাফ সীমান্তে শনিবার রাতে র্যাবের সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হন। চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যে এমন একজন মানুষের মৃত্যুতে ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা দেশ। তিনি তিনবারের কাউন্সিলর। তার জনপ্রিয়তাও বেশ।
একরামের ঘনিষ্টজন এবং এলাকাবাসী বলছেন, তিনি মোটেও ইয়াবা ব্যবসায়ী ছিলেন না। এদিকে গতকাল ৩১ মে সংবাদ সম্মেলনে একে 'ঠাণ্ডা মাথার খুন' হিসেবে আখ্যায়িত করেন তার স্ত্রী আয়েশা বেগম। আয়েশার মারফত একটি অডিও ক্লিপ ইতিমধ্যেই ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে নিহত একরামের স্ত্রী ও দুই মেয়ে।
একরামকে গুলি করার মুহূর্তের সেই অডিও ক্লিপ শুনলে যে কারও গা শিউরে উঠবে। আয়েশা গত ২৬ মে রাতে তার স্বামীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করছিলেন। সাংবাদিকদের অডিওটির চারটি ক্লিপ দিয়ে নিহত কমিশনারের স্ত্রী অভিযোগ করেন, তার স্বামীকে 'ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে। ' মোট ১৪ মিনিট ২২ সেকেন্ডের অডিও ক্লিপটির এক পর্যায়ে শোনা যায় গুলির শব্দ, মৃত্যুপথযাত্রী একরামের আর্তনাদ আর আয়েশার বুকফাটা চিৎকার!
আয়েশা সাংবাদিকদের বলেন, একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তার ক্রমাগত ফোনের কারণে গত ২৬ মে রাত ৯টার দিকে একরাম বাড়ি থেকে বের হন। রাত ১১টার সময়ও বাড়ি ফিরে না এলে, তার মেয়ে সোয়া ১১টার দিকে ফোন করে। সেসময় একরাম মেয়েকে জানান যে, তিনি একজন মেজর সাহেবের সঙ্গে হ্নীলা যাচ্ছেন।
যে কথা অডিও ক্লিপটিতেও শোনা যায়।
শুরুর একটি ক্লিপে মেয়ের সঙ্গে কথা বলছিলেন। মেয়ের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমি টিএনও অফিসে যাচ্ছি তো, আমি চলে আসব আম্মু। '
'কতক্ষণ হবে?' মেয়ের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন 'বেশিক্ষণ লাগবে না। আমি চলে আসবো ইনশাল্লাহ। '
সেই চলে আসা আর হয়নি একরামের। স্বামীর খোঁজ নেওয়ার জন্যে রাত ১১টা ৩২ মিনিটে আবারও ফোন করেন তার স্ত্রী আয়েশা। ওপাশ থেকে কিছু বিচ্ছিন্ন শব্দ ছাড়া কারও কথা শোনা যাচ্ছিল না। এ প্রান্ত থেকে আয়েশা 'হ্যালো' 'হ্যালো' করে যাচ্ছিলেন। আয়শা বলছিলেন, 'হ্যালো!... হ্যালো!… হ্যালো কে? আমি কমিশনারের সাথে কথা বলতে চাচ্ছি। … আমি উনার মিসেস বলতেছি… হ্যালো! হ্যালো...'
ওপাশ থেকে একইভাবে কিছু শব্দ হতে থাকে অনুচ্চস্বরে। হঠাৎ অস্ত্র লোড করার শব্দ এবং সাথে সাথে গুলি! একটি পুরুষ কণ্ঠের আর্তনাদ 'ওহ'! এরপর আবারও আরেকটি গুলি!
ফোনের এ প্রান্ত থেকে আয়শা 'ও আল্লাহ...' বলে বুকফাটা আর্তনাদ করে ওঠেন! একইসঙ্গে আরও শিশুকণ্ঠের কান্না শোনা যায়। আয়শাকে বলতে শোনা যায়, 'আমার জামাই কিছু করে নাই…আমার জামাই কিছু করে নাই...। আমরা বিনা দোষী। … '
ফোনের অপর প্রান্ত থেকে তখন ভেসে আসে হুইসেলের আওয়াজ। কিছু গালাগালির আওয়াজ। আর এ প্রান্ত থেক আয়শা বলে যাচ্ছিলেন, 'আমার হাজব্যান্ড কিছু করে নাই.... আমার হাজব্যান্ড কিছু করে নাই.....।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.