প্রাচ্যের রাণী চট্টগ্রামের নামকরণ হয়েছে যেভাবে
চট্টগ্রাম সিটি গেইট, ছবি: Mapio.net
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। বন্দরনগরী নামে পরিচিত শহর, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত। বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত পাহাড়, সমুদ্রে এবং উপত্যকায় ঘেরা চট্টগ্রাম শহর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যে প্রাচ্যের রাণী হিসেবে বিখ্যাত। এখানে দেশের সর্ববৃহৎ বন্দর ছাড়াও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এটি এশিয়ায় ৭ম এবং বিশ্বের ১০ম দ্রুততম ক্রমবর্ধমান শহর।
এশিয়া মহাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহরটির রয়েছে প্রায় চার হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য। চট্টগ্রাম একদিকে যেমন ইতিহাস এবং ঐতিহ্যে ভরপুর নগরী, তেমনি দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম প্রাচীনকাল হতেই এক গুরুত্ব পূর্ণ নগরী হিসেবে স্থান পেয়েছে, যে কারনে চট্টগ্রামে বার বার ক্ষমতার পালা বদল হয়েছে।
চট্টগ্রাম শহরের ঐতিহ্যবাহী চন্দনপুরা জামে মসজিদ, ছবি: Quora
এই ক্ষমতার পালাবদলের ফলে চট্টগ্রাম নগরী একেক সময়ে একেক ধরণের সংস্কৃতি চর্চা করেছে যার ফলে এই নগরী তে আজও বিভিন্ন ধরনের রীতি নীতি বর্তমান। এই নগরী টি হিন্দু,মুসলিম, খ্রিস্টান,বৌদ্ধ সব ধর্মের রাজা বাদশাহ গণ ই শাসণ করেছে। ফলে এ নগরী টি বিভিন্ন ধর্মের সংস্কৃতির এক অনন্য মিশেল নিয়ে আজও বেড়ে উঠছে।
নামকরণের ইতিহাস
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপার লীলাভূমি হচ্ছে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম জেলাটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। চট্টগ্রাম এর নামকরণ নিয়ে কোন সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায় না। চট্টগ্রামের অনেক রকমের নাম থাকার কারনে কোন নামকরণের কোন উৎসের কোন একটি বিষয় নিয়ে কিছু সংখ্যক ঐতিহাসিকও একমত হতে পারেন নি। বরং বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিভিন্ন ধরণের মতবাদ পেশ করেছেন।
বর্তমান চট্টগ্রামের পূর্ববর্তী নাম ছিল চাঁটিগাও বা চাঁটগাঁও, এ দুই নাম হতে চট্টগ্রামের নাম হয়েছে বলে অনেক ঐতিহাসিক মনে করে থাকেন। ত্রয়োদশ শতকের দিকে গৌড় বিজয়ের পর ইসলাম প্রচারের জন্য ১২ জন আউলিয়া এ অঞ্চলে আসেন। কিন্তু সে সময় ধারণা করা হতো এ অঞ্চলে জ্বীন বা পরীর প্রচুর উপদ্রব ছিল। এসব জ্বীন পরী দের তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য এসব আউলিয়া গণ বড় আকারের চেরাগ বা বাতি কোন উচু স্থানে জ্বালিয়ে রাখতেন।
চেরাগী পাহাড়: যেখানে চেরাগ জ্বালানো হয়, ছবি:Quora
ঐ চেরাগ বা বাতির আলো যতদূর পর্যন্ত যেত, সে পর্যন্ত জ্বীন-পরী আসতে পারত না বলে লোক মুখে প্রচলিত। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় চেরাগ বা বাতি কে বলা হয় চাঁটি বা চাঁট এবং গ্রাম কে বলা হয় গাঁও। এ থেকে ঐ অঞ্চলের নাম হয় চাঁটিগাঁও বা চাঁটগাঁও, যা থেকে পরবর্তী তে চট্টগ্রাম নাম টি হয়েছে।
আবার কোন কোন ঐতিহাসিক বলেন যে, খ্রিস্টীয় ৯৫৩ সালে আরাকানের রাজা বৌদ্ধ রাজা চট্টগ্রাম বিজয় করে একটি স্মৃতি স্তম্ব তৈরি করে যান, যার মধ্যে তিনি লিখে যান “চিৎ-ত-গৌং” যার অর্থ হচ্ছে যুদ্ধ করা অন্যায়। এই উৎস থেকেও চট্টগ্রামের নামকরণ হতে পারে বলে মনে করা হয়।
আবার একজন ঐতিহাসিক মত প্রকাশ করেন যে, চট্টগ্রাম নাম টি এসেছে আরবি শব্দ “শ্যাত বা শাত” যার অর্থ খন্ড বা ব-দ্বীপ এবং গঙ্গা থেকে। 'শ্যাত আল গঙ্গা' অর্থ্যাৎ এটি দ্বারা গঙ্গা নদীর মোহনায় অবস্থিত নগর কে বোঝানো হয়েছে। যা পরবর্তী তে চট্টগ্রাম নামধারণ করেছে।
নবাব মীর কাসিম আলী খান, ছবি: উইকিপিডিয়া
ভারতবর্ষে মুঘল শাসণ শুরু হবার পরে, ১৬৬৬ সালে মুঘলরা আরাকান রাজাকে পরাজিত করে চট্টগ্রাম দখন করে নেন এবং মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। মুঘলরা এর নাম দেন “ইসলামাবাদ”। পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের কাছে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয়ের পর ১৭৬০ সালে মীর কাসেম আলী খান চট্টগ্রাম কে ইংরেজদের নিকট হস্তান্তর করেন। ইংরেজরা “ইসলামাবাদ” কে পরিবর্তন করে এর নাম রাখেন “চিটাগাং”। বর্তমানে বাংলাতে চট্টগ্রাম লেখা হয় এবং ইংরেজিতে চিটাগাং লেখা হয়।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.