মার্কিন-তালেবান ভাই ভাই
হেলমান্দের একটি পপি ক্ষেতে কাজ করছেন আফগান কৃষকরা:
আফগানিস্তানে আমেরিকা অবস্থান করছে ২০০১ সাল থেকে। তারও আগে থেকে আফগানিস্তান আফিম/পপি চাষের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইরান এই তিন দেশের সীমান্তে গড়ে উঠেছে পপি চাষের জন্য বিখ্যাত। আর এই পপি চাষের পাশাপাশি আরেকটি বিষয়ের উত্থান হয়েছে সেটা হলো আমেরকা উৎপাদিত জঙ্গীগোষ্ঠী।
মূলত এই পপি চাষের প্রসার শুরু করেছে আল কায়েদা। তারা যখন সোভিয়েতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তখন পপি বিক্রী করে অধিক অর্থ উপার্জনের জন্য এই মাদকের দিকে তারা ঝুঁকে পড়ে। তালিবান সরকার যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে গোল্ডেন ক্রিসেন্ট গড়ে উঠে।
২০০১ সালে আমেরিকা এই চাষ বন্ধ করার ঘোষণা দিলেও বিভিন্ন অনুসন্ধানে জানা যায় মার্কিনিরাই এই চাষের হোতা। শুধু তাই নয় তালেবানরাও একইভাবে অর্থ উপার্জন করে। বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কেবল হাপিত্যেশ করছে আফগান সরকার।
আফিম চাষের দিক থেকে বিশ্বের কোনো দেশই আফগানিস্তানকে টেক্কা দিতে পারবে না – তাই এক্ষেত্রে আফগানিস্তানকে ‘বিশ্ব নেতা’ বলা যেতে পারে৷ ২০১৩ সালে দেশটিতে ২ লাখ ৯ হাজার হেক্টর জমিতে পপি ফুলের চাষ হয়েছে৷ এই পপি ফুলের বীজ থেকেই তৈরি হয় আফিম এবং হেরোইন৷ বিশ্বের অন্তত ৯০ ভাগ চেতনানাশক মাদক উৎপাদন হয় আফগানিস্তানে।
আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত পপি ক্ষেত, ছবি: fee.org
আফগানিস্তানে দুটি স্থান সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। এক হেলমান্দ দুই কান্দাহার। এই দুই প্রদেশেই সবচেয়ে বেশি পপি চাষ হয়। আর এই দুই প্রদেশের সংঘর্ষে লিপ্ত আমেরিকা আর তালেবান। আবার তারা উভয়েই সেখানে পপি চাষ করায় কৃষকদের দিয়ে।
সরকারি শত চেষ্টার পরও থামানো যায়নি আফগান কৃষকদের এই প্রবণতা। অপরাপর ফসলগুলোর তুলনায় বেশি লাভজনক হওয়ায় তারা আফিম উৎপাদনে ব্যবহৃত পপি চাষেই বেশি আগ্রহী। বার্তাসংস্থা রয়টার্স অনুসারে, আফগানিস্তানের পপি গাছ থেকেই বিশ্বের মোট হেরোইনের সিংহভাগ উৎপাদিত হয়। দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা, চোরাকারবারি ও তালেবান যোদ্ধাদের সহায়তায় আফগানিস্তানের কৃষকরা প্রতি বছর প্রায় ৯ হাজার মেট্রিক টন হেরোইন বিশ্ব বাজারে সরবরাহ করে।
কান্দাহারের একটি পপি ক্ষেত, ছবি: বাংলা ট্রিবিউন
পপি চাষে আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম কেন্দ্র কান্দাহার প্রদেশ। হেলমান্দের পর এর অবস্থান। কান্দাহারের ২ একর জমিতে পপি বুনেছিলেন ৩৫ বছর বয়সী কৃষক মোহাম্মদ নাদির। রয়টার্সকে তিনি জানিয়েছেন, গম বা অন্যান্য ফসল চাষ করলে তাদের যথেষ্ট লাভ হয় না। তার ক্ষেতে চাষ করা পপি থেকে আয় হবে ৩ হাজার ডলার। অথচ ওই একই জমিতে যদি তিনি গম চাষ করতেন তাহলে তার আয় হতো ১ হাজার ডলার কম। যদিও পপি চাষ করে পাওয়া টাকা তিনি একাই নিতে পারবেন না। জমি পাহারা দেয়ার জন্য তালেবান ও মাদক বিক্রির জন্য দেশি ও আন্তর্জাতিক চোরাকারবারীদেরকে ভাগ দিতে হবে।
তালেবানদের পপি ক্ষেত নষ্ট করছেন আফগান সরকারী কর্মকর্তারা, ছবি: dw
জাতিসংঘের হিসেব মতে আফগানিস্তানে বছরে ৩০০ কোটি ডলারের মাদক বিক্রি হয়। তালেবান জঙ্গিদের আয়ের সবচেয়ে বড় অংশগুলোর একটি আসে এই মাদক বাণিজ্য থেকে। জাতিসংঘের মতে, ২০১৭ সালে আফগানিস্তানে নজিরবিহীন পরিমাণে আফিম উৎপাদিত হয়েছে, যা ২০১৬ সালের তুলানায় ৮৭ শতাংশ বেশি। আফগানিস্তানের মাদক নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয় বলেছে, দেশটির ৩ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় গত বছর পপি চাষ হয়েছে।
পপি চাষ থেকে সরিয়ে আনতে আফগানিস্তানের সরকার কৃষকদের মধ্যে ১০ হাজার টন গমের বীজ ও ২০ হাজার টন ইউরিয়া সার বিতরণ করেছিল। আফগানিস্তানের কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা আকবর রুস্তামি জানিয়েছেন, অনেক কৃষক বীজ সংগ্রহ করলেও শেষ পর্যন্ত সেগুলো জমিতে রোপণ করেনি। তার ভাষ্য, ‘বেশি লাভের আশায় ও তালেবানদের ভয়ে আমাদের নিষেধ অমান্য করে তারা পপি চাষ করছে।’
পপি চাষের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নানা সময় অভিযান চালাতে দেখা যায়। আসলে তারা বেসিক্যলি অভিযান চালায় কারখানা বন্ধ করতে। ওদের চাওয়া সোজা কাঁচামাল আমেরিকায় পাচার করতে। এতে মাদকের বাজারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে আমেরিকানদের কাছে।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.