পাবলিক টয়লেটে তিন টাকা বাঁচানোর জন্যও 'মুক্তিযোদ্ধার সন্তান' শব্দটি উচ্চারিত হতে শোনা যায়!
এই কথাটি খুবই জোর দিয়ে বলা যায় যে, আমাদের মহান মুক্তির সংগ্রামীদের মধ্যে এমন একজন মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন না, যাঁরা কেবলমাত্র দেশকে শত্রু মুক্ত করা ছাড়া অন্য কোন লাভের আশায় প্রত্যাক্ষ সমরে অংশ নিয়েছিলেন।
আজকে যারা ভিক্ষা করার সময়ও হাত পেতে বলে "আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, আমাকে ভিক্ষা দিন"! এরকম চেতনার সওদা করনেওয়ালাদের আঁতুর ঘর হাতড়ে দেখুন, এরা ৭১ এ যুদ্ধ তো করেইনি, বরং কপট মধ্যপন্থি ছিলো! মুক্তিযুদ্ধের সনদ গলায় ঝুলিয়ে যারা রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা বগলদাবা করতে তৎপর, তাদের অধিকাংশরই মুক্তিযুদ্ধে অবদান নিয়ে বিতর্ক আছে। শুধু তাই নয়, এমন রাজাকারও আছে যারা সময়ের বিবর্তনে একটা সনদ আত্মস্থ করে মুক্তিযোদ্ধা বনে গেছে।
৭১ এর ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলেও আমাদের মুক্তির সংগ্রামীদের তালিকার কাজ শুরু হয় আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে। ১৯৮৪ সালে এরশাদ সরকার সর্বপ্রথম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নের উদ্যেগ নেয়। সে সময় ১,০২,৪৫৮ জন মুক্তিযোদ্ধার সন্ধান পাওয়া গেলেও পরবর্তিতে ১৯৮৮ সালে ভারতীয় প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের হিসেব অনুযায়ী ভারত থেকে প্রদত্ত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিলো ৬৯,৮৩৩ জন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা থাকাকালীন মুক্তিযোদ্ধার নতুন তালিকা প্রণয়ন করা হয়। এতে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয় মোট ১,৮৬,৭৯০ জন। ২০০১-২০০৬ বিএনপি-জামায়াত সরকার মুক্তিযোদ্ধা তালিকা হালনাগাদ করলে মোট মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যায় ২,১০,৫৮১ জন। পরবর্তিতে ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার অভিযোগ করে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে ৭০ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছে। এরপর আবার আওয়ামীলীগ সরকার শুরু করে পুরনো তালিকার নতুন সংযোজন বিয়োজন! সে সময় চাকুরীতে দুই বছর মেয়াদ বাড়ানো এবং সন্তানদের চাকুরীর সুযোগ পাইয়ে দেয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানানোর হিরিক পরে গিয়েছিলো।
যেই দেশে উপসনালয় গুলোতেও চরম দুর্নীতি নজির আছে, যেই দেশে খোদ দুর্নীতি দমন কমিশনও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত, সেই দেশে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরীতে দুর্নীতি হতে পারবে না এমন কথা কিছুতেই বলা যায় না। বিশেষত আমাদের চোখে সামনেই যখন পরীক্ষিত রাজাকারের সন্তান নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার ছেলে বলতে থাকে, তখন এই তত্ত্বের নিশ্চয়তা আরো প্রকট হয়ে ধরা দেয়। আজ যখন সিনেমা হলের টিকিট কাটতে গিয়েও শুধু লাইনে না দাঁড়ানোর জন্য 'মুক্তিযোদ্ধার সন্তান' শব্দটি ব্যবহার হতে দেখি, যখন পাবলিক টয়লেটে ৩টাকা বাঁচানোর জন্যও 'মুক্তিযোদ্ধার সন্তান' শব্দটি উচ্চারিত হতে শোনা যায়, তখন সনদধারী মুক্তিযোদ্ধা আর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার মধ্যেকার সন্দেহ দৃশ্যমান হয়।
পাকিস্তানিদের প্রভুত্ব স্বিকার করতে যারা অস্বিকার করেছিলেন তাঁরা অত্যন্ত শক্ত মেরুদন্ডের মানুষ। তাঁদের উত্তরসূরীদের মেরুদন্ডও তাঁদের মতোই শক্ত! একজন প্রকৃত মুক্তির সৈনিক কখনো মুক্তিযোদ্ধকে পুজি করে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিদা গ্রহনের মধ্যমে তাঁর আত্মমর্যাদা বিসর্জন দিবে না। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কখনো নিজের অযোগ্যতা পিতার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন দিয়ে ঢাকতে চাইবে না। কেবল মেরুদন্ডহীনরাই এমন নির্লজ্জতা দেখায়। উন্নত বিশ্বের কোন দেশের প্রেসিডেন্ট সাইকেল চালিয়ে কর্মস্থলে যায়, কে সাধারন যাত্রীদের সাথে বাসে চড়ে, কোন দেশের প্রধানমন্ত্রী লাইনে দাঁড়িয়ে রেশন তোলে, আপনি সেই সব উদাহরন টেনে নিজ দেশের মন্ত্রী-এমপিদের সমালোচনা করেন। আবার দাদা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলো বলে সেই সুবিধা নিয়ে মেধাবীদের ডিঙ্গিয়ে অন্যের অনুগ্রহ ভিক্ষা করেন! এটা আপনার স্ববিরোধী আচরন। আর অবশ্যই মেরুদন্ডহীনতার পরিচায়ক।
আমাদের জন্মযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা ধাত্রীর ভুমিকায় অবতির্ন হয়েছিলেন। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান কোন কিছুতেই শোধ হবার নয়। যাঁদের কারণে আমরা একটি স্বাধীন ভুখন্ড পেয়েছি, একটা স্বাধীন দেশে জন্মাতে পেরেছি, আমাদের এই প্রজন্ম সেই সব জন্মযোদ্ধাদের মাথায় তাজ বানিয়ে রাখলেও তাঁদের অবদান শোধ হবে না। সুপ্রাচীন কাল থেকে এই অঞ্চলে যত মানুষের জন্ম হয়েছে এবং সুদূর ভবিশ্যতেও যত মানুষ জন্মাবে তাদের সকলে জন্য পরম পুজনীয় আমাদের মহান মুক্তির সংগ্রামীরা। পৃথিবীর সকল ঐশ্বর্য্য তাঁদের অবদানের কাছে বড্ড ছোট আর মলিন দেখায়। কিন্তু দেশের কর্মক্ষেত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চলমান কোটা ব্যবস্থায় সেই সব মহান মুক্তির সৈনিকদের নিলামে তোলা হচ্ছে। এটা সম্মান নয়, চরম অপমান। ধরুন আপনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একজন মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচালেন। বিনিময়ে সেই মানুষটি আপনাকে হাজার টাকার একটা বান্ডিল দিতে চাইলো। এই পরিস্থিতিতে আপনি কি খুশি হবেন? যদি আপনি সত্যিকারের ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ হন, তবে এটাকে আপনার উপকারের চরম অপমান জ্ঞান করবেন। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পিতার অবদানের বিনিময়ে চাকুরী কিংবা অন্য কোন অর্থিক সুবিধা প্রদান করাটাও অনেকটা সেই রকম। তাই আমার মনে হয়, কোটাধারীরাও এখন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সাথে শরিক হওয়া উচিৎ! ব্যাপারটা নিতান্তই লজ্জাজনক অবস্থায় চলে গেছে। একান্তই ব্যক্তিগত পর্যায়ে আত্মসম্মানে আঘাত লাগার অবস্থায় দাঁড়িয়েছে।
এবার আসুন কোটা সংস্কারের দাবীতে আন্দোলন কারীদের প্রতি সরকার এবং প্রশাসনেরর বিমাতা সুলভ আচরনের উপর ক্ষানিকটা আলোকপাত করা যাক। ইতিহাসের সব থেকে বড় শিক্ষা হচ্ছে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। তার জন্য শাসক গোষ্ঠীদের দ্বারা প্রায়শই অতিত ভুলের পুনরাবৃত্তি হতে দেখা যায়। ছাত্র জনতাকে ক্ষেপিয়ে দিয়ে অতিতেও কেউ নিজের ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। বরং বহু শক্তিধর লোকও শুধু ছাত্র জনতাকে ঘাটিয়ে নিজের ক্ষমতার পোক্ত মসনদ নড়বড়ে করে দিয়েছিলো। আওয়ামী সরকারকে বলা হয় এদেশের তারুণ্যের আশার বাতিঘর। সরকারের যদি স্মৃতি বিভ্রম না হয়, তবে মনে থাকার কথা যে, ২০০৮ সালে শুধু যুদ্ধপরাধের বিচারের এজেন্ডা নিয়ে দেশের তৎকালীন ৩৩শতাংশ নবীন ভোটারের প্রায় সবটাই তাদের ব্যালট বক্সে পুরেছিলো। তাহলে এটা বললে ভুল হবে না যে, বর্তমান আওয়ামীলীগ দাঁড়িয়ে আছে ছাত্র জনতার পিঠে হেলান দিয়ে। আর যাদের কাধে ভর করে আজকের ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সেদিনের সেই আঠার বছরের প্রথম ভোটাররা আজ ত্রিশের ঘরে। এই নির্লজ্জ কোটা ব্যবস্থার বলি হয়ে যারা হতাশার অনলে ভস্ম হচ্ছে। আজ আওয়ামীলীগ সরকার ছাত্রদের দাবীর প্রতি শ্রদ্ধা না জানিয়ে তাদের পেটুয়া পুলিশ বাহিনী দিয়ে যে নির্মমতার নজির প্রতিষ্ঠা করছে, নিকট ভবিশ্যতে এর মাশুল অবশ্যই গুনতে হবে। সরকার যেন এটাকে জামায়াত-বিএনপির আন্দোলনের মতো ঠুনকো আর গুরুত্বহীন ভেবে ভুল না করে!
এটা রাজনীতিক আন্দোলন নয় যে, ভাড়াটে পিকেটাররা দিনে পিকেটিং করে সন্ধ্যায় মজুরি নিয়ে বেপাত্তা হয়ে যাবে। এটা ছাত্র জনতার আন্দোলন! এটা স্বাধীন দেশের ভাবী কান্ডারীদের তাদের ন্যায্য অধিকারের যৌক্তিক আন্দোলন। এর বিরাট সুদূরপ্রসারী প্রভাব আছে। এমন যেন না হয়, আজকের এই আন্দোলনকারীদের দাবী মেনে না নেয়ায়, অদুর ভবিশ্যতে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের কপাল চাপড়াতে হয়। কারণ রাজনীতিক আন্দোলনে ক্ষমতাসীনরা একটা বিশেষ মতাদর্শের মানুষকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পায়, কিন্তু এই সিস্টেম বদলানোর আন্দেলনে সরকারের প্রতিপক্ষ গোটা দেশের সর্বস্তরের ছাত্র জনতা। সুতরাং এই আন্দোলনের বিরুদ্ধাচার করে আওয়ামীলীগ নিজেদের জনবিরোধী সরকারের তকমা পাইয়ে দেয়ার ভুল করবে না নিশ্চয়!
তবে কেবল দাবী মেনে নিলেই সরকারের দায়িত্ব শেষ হবে না। একজন মাধ্যমিকের গন্ডি পার হওয়া কনস্টেবল দেশের নিরপরাধ সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারীর উপর বন্দুক তাক করার হিম্মত দেখানোর জন্য গোটা পুলিশ প্রশাসনকে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টিও সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে!
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
আজকে যারা ভিক্ষা করার সময়ও হাত পেতে বলে "আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, আমাকে ভিক্ষা দিন"! এরকম চেতনার সওদা করনেওয়ালাদের আঁতুর ঘর হাতড়ে দেখুন, এরা ৭১ এ যুদ্ধ তো করেইনি, বরং কপট মধ্যপন্থি ছিলো! মুক্তিযুদ্ধের সনদ গলায় ঝুলিয়ে যারা রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা বগলদাবা করতে তৎপর, তাদের অধিকাংশরই মুক্তিযুদ্ধে অবদান নিয়ে বিতর্ক আছে। শুধু তাই নয়, এমন রাজাকারও আছে যারা সময়ের বিবর্তনে একটা সনদ আত্মস্থ করে মুক্তিযোদ্ধা বনে গেছে।
৭১ এর ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলেও আমাদের মুক্তির সংগ্রামীদের তালিকার কাজ শুরু হয় আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে। ১৯৮৪ সালে এরশাদ সরকার সর্বপ্রথম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নের উদ্যেগ নেয়। সে সময় ১,০২,৪৫৮ জন মুক্তিযোদ্ধার সন্ধান পাওয়া গেলেও পরবর্তিতে ১৯৮৮ সালে ভারতীয় প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের হিসেব অনুযায়ী ভারত থেকে প্রদত্ত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিলো ৬৯,৮৩৩ জন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা থাকাকালীন মুক্তিযোদ্ধার নতুন তালিকা প্রণয়ন করা হয়। এতে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয় মোট ১,৮৬,৭৯০ জন। ২০০১-২০০৬ বিএনপি-জামায়াত সরকার মুক্তিযোদ্ধা তালিকা হালনাগাদ করলে মোট মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যায় ২,১০,৫৮১ জন। পরবর্তিতে ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার অভিযোগ করে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে ৭০ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছে। এরপর আবার আওয়ামীলীগ সরকার শুরু করে পুরনো তালিকার নতুন সংযোজন বিয়োজন! সে সময় চাকুরীতে দুই বছর মেয়াদ বাড়ানো এবং সন্তানদের চাকুরীর সুযোগ পাইয়ে দেয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানানোর হিরিক পরে গিয়েছিলো।
যেই দেশে উপসনালয় গুলোতেও চরম দুর্নীতি নজির আছে, যেই দেশে খোদ দুর্নীতি দমন কমিশনও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত, সেই দেশে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরীতে দুর্নীতি হতে পারবে না এমন কথা কিছুতেই বলা যায় না। বিশেষত আমাদের চোখে সামনেই যখন পরীক্ষিত রাজাকারের সন্তান নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার ছেলে বলতে থাকে, তখন এই তত্ত্বের নিশ্চয়তা আরো প্রকট হয়ে ধরা দেয়। আজ যখন সিনেমা হলের টিকিট কাটতে গিয়েও শুধু লাইনে না দাঁড়ানোর জন্য 'মুক্তিযোদ্ধার সন্তান' শব্দটি ব্যবহার হতে দেখি, যখন পাবলিক টয়লেটে ৩টাকা বাঁচানোর জন্যও 'মুক্তিযোদ্ধার সন্তান' শব্দটি উচ্চারিত হতে শোনা যায়, তখন সনদধারী মুক্তিযোদ্ধা আর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার মধ্যেকার সন্দেহ দৃশ্যমান হয়।
পাকিস্তানিদের প্রভুত্ব স্বিকার করতে যারা অস্বিকার করেছিলেন তাঁরা অত্যন্ত শক্ত মেরুদন্ডের মানুষ। তাঁদের উত্তরসূরীদের মেরুদন্ডও তাঁদের মতোই শক্ত! একজন প্রকৃত মুক্তির সৈনিক কখনো মুক্তিযোদ্ধকে পুজি করে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিদা গ্রহনের মধ্যমে তাঁর আত্মমর্যাদা বিসর্জন দিবে না। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কখনো নিজের অযোগ্যতা পিতার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন দিয়ে ঢাকতে চাইবে না। কেবল মেরুদন্ডহীনরাই এমন নির্লজ্জতা দেখায়। উন্নত বিশ্বের কোন দেশের প্রেসিডেন্ট সাইকেল চালিয়ে কর্মস্থলে যায়, কে সাধারন যাত্রীদের সাথে বাসে চড়ে, কোন দেশের প্রধানমন্ত্রী লাইনে দাঁড়িয়ে রেশন তোলে, আপনি সেই সব উদাহরন টেনে নিজ দেশের মন্ত্রী-এমপিদের সমালোচনা করেন। আবার দাদা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলো বলে সেই সুবিধা নিয়ে মেধাবীদের ডিঙ্গিয়ে অন্যের অনুগ্রহ ভিক্ষা করেন! এটা আপনার স্ববিরোধী আচরন। আর অবশ্যই মেরুদন্ডহীনতার পরিচায়ক।
আমাদের জন্মযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা ধাত্রীর ভুমিকায় অবতির্ন হয়েছিলেন। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান কোন কিছুতেই শোধ হবার নয়। যাঁদের কারণে আমরা একটি স্বাধীন ভুখন্ড পেয়েছি, একটা স্বাধীন দেশে জন্মাতে পেরেছি, আমাদের এই প্রজন্ম সেই সব জন্মযোদ্ধাদের মাথায় তাজ বানিয়ে রাখলেও তাঁদের অবদান শোধ হবে না। সুপ্রাচীন কাল থেকে এই অঞ্চলে যত মানুষের জন্ম হয়েছে এবং সুদূর ভবিশ্যতেও যত মানুষ জন্মাবে তাদের সকলে জন্য পরম পুজনীয় আমাদের মহান মুক্তির সংগ্রামীরা। পৃথিবীর সকল ঐশ্বর্য্য তাঁদের অবদানের কাছে বড্ড ছোট আর মলিন দেখায়। কিন্তু দেশের কর্মক্ষেত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চলমান কোটা ব্যবস্থায় সেই সব মহান মুক্তির সৈনিকদের নিলামে তোলা হচ্ছে। এটা সম্মান নয়, চরম অপমান। ধরুন আপনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একজন মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচালেন। বিনিময়ে সেই মানুষটি আপনাকে হাজার টাকার একটা বান্ডিল দিতে চাইলো। এই পরিস্থিতিতে আপনি কি খুশি হবেন? যদি আপনি সত্যিকারের ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ হন, তবে এটাকে আপনার উপকারের চরম অপমান জ্ঞান করবেন। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পিতার অবদানের বিনিময়ে চাকুরী কিংবা অন্য কোন অর্থিক সুবিধা প্রদান করাটাও অনেকটা সেই রকম। তাই আমার মনে হয়, কোটাধারীরাও এখন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সাথে শরিক হওয়া উচিৎ! ব্যাপারটা নিতান্তই লজ্জাজনক অবস্থায় চলে গেছে। একান্তই ব্যক্তিগত পর্যায়ে আত্মসম্মানে আঘাত লাগার অবস্থায় দাঁড়িয়েছে।
এবার আসুন কোটা সংস্কারের দাবীতে আন্দোলন কারীদের প্রতি সরকার এবং প্রশাসনেরর বিমাতা সুলভ আচরনের উপর ক্ষানিকটা আলোকপাত করা যাক। ইতিহাসের সব থেকে বড় শিক্ষা হচ্ছে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। তার জন্য শাসক গোষ্ঠীদের দ্বারা প্রায়শই অতিত ভুলের পুনরাবৃত্তি হতে দেখা যায়। ছাত্র জনতাকে ক্ষেপিয়ে দিয়ে অতিতেও কেউ নিজের ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। বরং বহু শক্তিধর লোকও শুধু ছাত্র জনতাকে ঘাটিয়ে নিজের ক্ষমতার পোক্ত মসনদ নড়বড়ে করে দিয়েছিলো। আওয়ামী সরকারকে বলা হয় এদেশের তারুণ্যের আশার বাতিঘর। সরকারের যদি স্মৃতি বিভ্রম না হয়, তবে মনে থাকার কথা যে, ২০০৮ সালে শুধু যুদ্ধপরাধের বিচারের এজেন্ডা নিয়ে দেশের তৎকালীন ৩৩শতাংশ নবীন ভোটারের প্রায় সবটাই তাদের ব্যালট বক্সে পুরেছিলো। তাহলে এটা বললে ভুল হবে না যে, বর্তমান আওয়ামীলীগ দাঁড়িয়ে আছে ছাত্র জনতার পিঠে হেলান দিয়ে। আর যাদের কাধে ভর করে আজকের ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সেদিনের সেই আঠার বছরের প্রথম ভোটাররা আজ ত্রিশের ঘরে। এই নির্লজ্জ কোটা ব্যবস্থার বলি হয়ে যারা হতাশার অনলে ভস্ম হচ্ছে। আজ আওয়ামীলীগ সরকার ছাত্রদের দাবীর প্রতি শ্রদ্ধা না জানিয়ে তাদের পেটুয়া পুলিশ বাহিনী দিয়ে যে নির্মমতার নজির প্রতিষ্ঠা করছে, নিকট ভবিশ্যতে এর মাশুল অবশ্যই গুনতে হবে। সরকার যেন এটাকে জামায়াত-বিএনপির আন্দোলনের মতো ঠুনকো আর গুরুত্বহীন ভেবে ভুল না করে!
এটা রাজনীতিক আন্দোলন নয় যে, ভাড়াটে পিকেটাররা দিনে পিকেটিং করে সন্ধ্যায় মজুরি নিয়ে বেপাত্তা হয়ে যাবে। এটা ছাত্র জনতার আন্দোলন! এটা স্বাধীন দেশের ভাবী কান্ডারীদের তাদের ন্যায্য অধিকারের যৌক্তিক আন্দোলন। এর বিরাট সুদূরপ্রসারী প্রভাব আছে। এমন যেন না হয়, আজকের এই আন্দোলনকারীদের দাবী মেনে না নেয়ায়, অদুর ভবিশ্যতে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের কপাল চাপড়াতে হয়। কারণ রাজনীতিক আন্দোলনে ক্ষমতাসীনরা একটা বিশেষ মতাদর্শের মানুষকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পায়, কিন্তু এই সিস্টেম বদলানোর আন্দেলনে সরকারের প্রতিপক্ষ গোটা দেশের সর্বস্তরের ছাত্র জনতা। সুতরাং এই আন্দোলনের বিরুদ্ধাচার করে আওয়ামীলীগ নিজেদের জনবিরোধী সরকারের তকমা পাইয়ে দেয়ার ভুল করবে না নিশ্চয়!
তবে কেবল দাবী মেনে নিলেই সরকারের দায়িত্ব শেষ হবে না। একজন মাধ্যমিকের গন্ডি পার হওয়া কনস্টেবল দেশের নিরপরাধ সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারীর উপর বন্দুক তাক করার হিম্মত দেখানোর জন্য গোটা পুলিশ প্রশাসনকে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টিও সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে!
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.