যুবরাজের চাওয়া ক্ষমতা, ইসরাইলের দরকার স্বীকৃতি
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি আরবের স্থিতিশীল রাজা হওয়ার জন্য ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। অন্যদিকে ইসরাইল তার মাধ্যমে সৌদি আরবের কাছ থেকে বৈধ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায় করতে চাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে অন্য মুসলিম দেশগুলোও দখলদার ইহুদিবাদী রাষ্ট্রটিকে স্বীকৃতি দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।
মার্কিন সাময়িকী দি আটলান্টিককে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসরাইলের বিষয়ে মোহাম্মদ বিন সালমান অত্যন্ত খোলামেলাভাবে তার মনোভাব প্রকাশের পর এমনটি ধারণা করছেন পর্যবেক্ষকরা।
সাক্ষাৎকারে যুবরাজ বলেন, ইসরাইলের সঙ্গে সৌদি আরবের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে এবং আমরা যদি ইসরাইলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ও শান্তি স্থাপন করতে পারি, তা হলে মিসর, জর্দানসহ পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদভুক্ত আরব দেশগুলো ব্যাপক লাভবান হবে। মোহাম্মদ বিন সালমান এমন একসময়ে এ ঘোষণা দিলেন, যখন ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলি দখলদারি থেকে নিজেদের হারানো ঘরবাড়ি উদ্ধারে দুই সপ্তাহের ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচি পালন করছেন।
গত শুক্রবার থেকে গাজা-ইসরাইল সীমান্তে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে এরই মধ্যে ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ২০ জন নিহত এবং এক হাজার ৭০০ জন আহত হয়েছেন।
মুসলিমবিশ্বসহ পশ্চিমা বৃহৎ শক্তিগুলোও এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যেই ইসরাইলের পক্ষে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। গত ডিসেম্বরের পর থেকে তিনি ইসরাইলের পক্ষে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ডিসেম্বরে দখলীকৃত পূর্ব জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন। পাশাপাশি আগামী মে মাসে মার্কিন দূতাবাস তেলআবিব থেকে সেখানে স্থানান্তরের ঘোষণা দেন।
ট্রাম্পের ওই ঘোষণার বিরুদ্ধে পুরো মুসলিমবিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও সুন্নি মুসলিমবিশ্বে নেতৃত্বের দাবিদার সৌদি আরব কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি বরং রিয়াদ ট্রাম্পের ঘোষণার প্রতি সমর্থন দেয়।
এ কারণে ট্রাম্পের ওই ঘোষণার নিন্দা জানাতে তুরস্কের ইস্তানবুলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সৌদি আরব যোগ দেয়নি। সৌদি চাপে জর্দানও ইস্তানবুল বৈঠক বর্জন করে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া এবং নিজেকে নেতৃত্বের যোগ্য প্রমাণ করার জন্য ইহুদিবাদীদের সমর্থন লাভের চেষ্টা করছেন।
তিনি সম্প্রতি ওয়াশিংটন সফরকালে ইহুদিবাদী লবিং গ্রুপের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ইসরাইলের হাত যখন ফিলিস্তিনিদের রক্তে রঞ্জিত, ঠিক তখন সৌদি যুবরাজ ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে দখলদার ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিলেন।
সৌদি যুবরাজ সালমান আসলে নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের খেলার পুতুলে পরিণত হয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকে। তাদের মতে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট যা বলছেন যুবরাজ মোহাম্মদ তাই বাস্তবায়ন করছেন। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলবিরোধী প্রতিরোধ সংগ্রাম জোরদার হওয়ায় নেতানিয়াহু ও ট্রাম্প আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এ কারণে তারা ইরান, হাশত আশ্ শাআবি, হামাস, হিজবুল্লাহ, আনসারুল্লাহর মতো প্রতিরোধ সংগ্রামের বিরোধী হিসেবে পরিচিত সৌদি আরবকে দিয়ে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন, যাতে অন্য দেশও ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে এগিয়ে আসে।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.