ব্যাপক আর্থিক ধরা খেল ফেসবুক

মাত্র ৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার গেছে খোয়া! বাংলাদেশি মুদ্রায় তা ২ লাখ ৯৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। মাত্র এক দিনে শেয়ারবাজারে ঠিক এই পরিমাণ বাজারমূল্য হারিয়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক। ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হওয়ার অভিযোগ ওঠার পর ওয়ালস্ট্রিটে নড়বড়ে হয়ে যায় ফেসবুকের অবস্থান। বিশ্লেষকেরা বলছেন, নতুন অভিযোগে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে ফেসবুক। এতে একদিকে যেমন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটির ওপর ব্যবহারকারীদের আস্থা কমে যেতে পারে, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ব্যবসায়িক সুনাম।
অভিযোগ উঠেছে, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অ্যাপ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল ফেসবুক। ওই অ্যাপের মাধ্যমে কোটি কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা। সেই তথ্য পরে ব্যবহার করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের কাজে। এ কাজের সঙ্গে জড়িত এক অধ্যাপক সম্প্রতি মুখ খোলায় প্রকাশ্যে এসেছে সবকিছু। এখন পুরো বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদেরা। তদন্তও শুরু হয়ে গেছে।
এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর গতকাল সোমবার ফেসবুকের শেয়ারের দামে ধস নামে। প্রতি শেয়ারের দাম ১৭২ ডলার ৫৬ সেন্টে নেমে গেছে। এক দিনেই ফেসবুকের শেয়ারের দাম কমেছে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। গত কয়েক বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম এতটা কমে যাওয়া নজিরবিহীন। শুধু ফেসবুক নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানও। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নাসদাকের শেয়ারের দাম কমেছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ হারে। অ্যালফাবেট বা গুগলের শেয়ারের দাম কমেছে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। আমাজনের দাম কমেছে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। অ্যাপলের প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে আগের চেয়ে ২ শতাংশ কম দামে। অন্যদিকে, মাইক্রোসফটের শেয়ারের দাম ২ দশমিক ২ শতাংশ কমে গেছে।
ফেসবুকের এই কেলেঙ্কারিতে সরব হয়েছেন সরকার ও রাজনীতির বাঘা বাঘা ব্যক্তি। বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এ ঘটনাকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ বলে অভিহিত করেছেন। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার লন্ডন কার্যালয়ে তল্লাশি চালানোর অনুমতি চেয়েছে দেশটির তথ্য সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ।
এর আগে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গের এক স্ট্যাটাসেই ফেসবুকের শেয়ারের দাম ৪ শতাংশ কমে যায়। ৩০০ কোটি ডলারের বেশি লোকসানের মুখে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। সে হিসাব মিলতে না মিলতেই নতুন সমস্যায় পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি—ব্যবহারকারী কমতে শুরু করেছে।
চলতি বছরের শুরুতেই আরও বন্ধুত্বপূর্ণ ফেসবুক গড়ে তোলার কথা জানায় মার্ক। বিজ্ঞাপনী পোস্ট কমিয়ে বন্ধুদের দেওয়া পোস্ট, মন্তব্য, ভিডিও বেশি দেখানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তাতে যে ফেসবুকে ব্যবহারকারীরা কম সময় ব্যয় করবে, তা-ও জানিয়েছিলেন মার্ক। লিখেছিলেন, এতে হয়তো ব্যবহারকারীরা ফেসবুকে কম সময় ব্যয় করবে, তবে যেটুকু সময়ই থাকবে তাতে ভালো কিছু দেখবে সেখানে।
এদিকে প্রথমবারের মতো ফেসবুকে দৈনিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। গত বুধবার প্রকাশিত প্রতিষ্ঠানটির চতুর্থ প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ দৈনিক ব্যবহারকারী কমে গেছে। তাতে প্রতিদিন ফেসবুক কম ব্যবহার করা হচ্ছে প্রায় ৫ কোটি ঘণ্টা। সে প্রতিবেদন প্রকাশের ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ফেসবুকের শেয়ারের মূল্য কমেছে ৫ শতাংশ।
ফেসবুকে বর্তমানে ২১৩ কোটি মাসিক ও ১৪০ কোটি দৈনিক সক্রিয় ব্যবহারকারী আছে। এই ব্যবহারকারীদের জন্য ২০১৮ সালে উন্নত-আদর্শ এক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গড়ে তোলা এখন মার্ক জাকারবার্গের লক্ষ্য।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.