যেসব কারণে আবারো প্রেসিডেন্ট হবেন ভ্লাদিমির পুতিন
রাত পার হলেই আগামীকাল রোববার রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আটজন প্রার্থী। মস্কোর স্থানীয় সময় সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা আটটা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। কিন্তু তা নিয়ে কোনো উত্তেজনা নেই। কারণ, ধরেই নেয়া হয়েছে চতুর্থ দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে চলেছেন ভ্লাদিমির পুতিন। তার সামনে কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীও নেই। রাষ্ট্রীয় পরিচালনায় পোলস্টারের সর্বশেষ জরিপে বলা হয়েছে, শতকরা ৬৯ ভাগ ভোট পেতে চলেছেন পুতিন। রোববারের নির্বাচনে এসব ভোটার পুতিনকে ভোট দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন।
রাশিয়ায় পুতিন ভীষণ জনপ্রিয়। এর আগে গতবছরের শেষদিকে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় স্বাধীন জনমত যাচাইকারী সংস্থা ‘লেভাদা সেন্টার’ পুতিনের প্রতি ৭৩ শতাংশের সমর্থন থাকার কথা জানিয়েছিল৷ গত কয়েক বছর ধরে পুতিনের প্রতি সমর্থনের পরিমাণ প্রায় ৭০ শতাংশের মতো ছিল৷ফলে রোববারের নির্বাচনে পুতিনের জয় একরকম নিশ্চিত বলেই ধরে নিয়েছে বার্তা সংস্থাগুলো। এই জনপ্রিয়তার পেছনে কারণগুলো অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
বিশ্ব দরবারে রাশিয়ার অবস্থান সুসংহত
সিরিয়ায় শান্তি প্রক্রিয়ায় রাশিয়ার শীর্ষ স্থানীয় ভূমিকার জন্য বহির্বিশ্বে পুতিনের প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। পশ্চিমা জগতে জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী এমন দেশের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা মস্কোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার পক্ষে। পুতিন এমন একটি ভাবমূর্তি সৃষ্টি করেছেন যে, হ্যাকিং ও রাজনৈতিক কৌশলে তিনি নির্বাচনের ফল পাল্টে দিতে পারেন। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন তার দাপট বাড়িয়েছিল তখন এমন একটি ধারণা সৃষ্টি হয় যে, মস্কো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে পারে। এর মধ্য দিয়ে তারা নির্বাচনের ফল পাল্টে দেয়ার চেষ্টা করতে পারে। এ থেকেই সৃষ্টি হয় শীতল যুদ্ধের ফ্যান্টাসি। আর এখন সিআইএ বলছে- হ্যাঁ, রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে।
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর পুতিন
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান হিসেবে ইতিমধ্যেই নাম করেছেন ভ্লাদিমির পুতিন। পরপর চার বছর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ফর্বসের সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষ স্থান পেলেন। তাদের কথায় তার নিজের দেশ, সিরিয়া এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সবক্ষেত্রেই পুতিন যা চেয়েছেন তাই পেয়েছেন।
রাশিয়ার সর্বময় ক্ষমতা পুতিনের কাছে
রাশিয়ার সংবিধান অনুযায়ী বেশির ভাগ ক্ষমতার মালিক প্রেসিডেন্ট। ফলে দেশটির শক্তি কোনদিকে ব্যয় হচ্ছে তার পুরোটাই নির্ভর করে পুতিনের ওপর। রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ যখন থমকে দাঁড়িয়েছিল তখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিশেষ করে ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে অনেকটাই সফল হন। এজন্য তার সফলতা বা জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।
রাশিয়ার স্থিতিশীলতা
প্রার্থী বাছাইয়ে ভোটারদের আস্থার মূলে হলো স্থিতিশীলতা। পুতিন সেটা দিতে পারবেন বলে তারা বিশ্বাস করেন। নির্বাচনের আগে রাশিয়ার বিভিন্ন এলাকা সফর করেছেন বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফাররা। তাতে তারা যা দেখতে পেয়েছেন তাতে, প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিজয় নিয়ে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই। তবে ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া ক্রাইমিয়াতেও এবার প্রথমবারে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হচ্ছে। সেখান থেকে প্রকৌশলী আন্দ্রে লুকিনিখ বলেছেন, পুতিনই একমাত্র প্রার্থী, যিনি কঠিন সময়েও স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে পারেন।
অর্থনৈতিক অগ্রগতি
পুতিন ১৭ বছর ক্ষমতায় থেকে দেশে যে অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধন করেছেন তাতে ওই বেশিরভাগ রাশিয়ান অভিভূত। রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে আরো শক্তিশালী করতে পুতিনের বিকল্প নেই বলে তারা মনে করেন।
দারিদ্রের হার কমে যাওয়া
১৯৯২ সালে রাশিয়ায় দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করতো প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ। ২০১৬ সালে এসে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৩.৪ শতাংশ। ক্রমাগত দারিদ্রের হার কমা পুতিনের জনপ্রিয়তার জন্য ব্যাপকভাবে ভূমিকা রাখছে।
এবার জিতলে পুতিন ক্ষমতায় থাকবেন ২০২৪ সাল পর্যন্ত। কেননা এবার থেকে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ বেড়ে হয়েছে ৬ বছর। এর মানে রোববারের নির্বাচন শেষে পৃথিবী ২০২৪ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে পাবে পুতিনকে। পশ্চিমা বিশ্বের সবচেয়ে বড় চোখের কাঁটা ভ্লাদিমির পুতিন পশ্চিমা দাদাগিরির পথের কাঁটা হয়ে রাজনীতির দাবার ছক আর জুডো-কারাত নিয়ে বহাল তবিয়তে থাকবেন। রোববার সকালটা পুতিনের দেশ শাসনের নতুন ছাড়পত্র পাবার মঞ্চ কেবল!
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.