ভারতীয় গুপ্তচর কুলভূষন যাদবের কথা
কূলভূষণ যাদবের মাথার ওপর এখন মৃত্যু পরোয়ানা ঝুলছে, যেটি কার্যকরের অপেক্ষায়। পাকিস্তানের একটি সামরিক আদালতে তড়িঘড়ি করে সম্পন্ন করা বিচারে তাকে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
পাকিস্তানের একটি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হয় যাদবের বক্তব্য। সেখানে তিনি জোর দিয়েই বলেছেন, তিনি ভারতীয় নৌবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত অফিসার। যদিও এই বক্তব্যটি ভারত সরকারের বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। তবে তার কর্মকাণ্ডের সাথে বক্তব্যটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল।
প্রকৃতপক্ষে যাদবের পরিচয় কী কিংবা সে কোথায় ছিল তা অস্পষ্ট। এ বিষয়ে মৌলিক কিছু প্রশ্নের উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি। সরকারি নথিগুলোও প্রকাশ করা হচ্ছে না। তবে তিনটি দেশের দশজনের বেশি কূটনীতিক ও গোয়েন্দা এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার নেয়ার পর এটি স্পষ্ট হয়েছে যে, ভারত ও পাকিস্তান কোনো দেশের সরকারই পুরোপুরি সত্য কথা বলছে না।
যাদবের ভাগ্যে কী ঘটবে সে বিষয়টির চেয়েও এই প্রশ্নগুলোর উত্তর এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর নেপথ্যে রয়েছে এমন এক গোপন যুদ্ধ যা শত শত, এমনকি হাজারো মানুষের জীবন ধ্বংসের কারণ হতে পারে।
২০১৩ সালের পর থেকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি গোপন অ্যাকশন প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে ভারত। উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়া ও ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) ভেতর থাকা এদের পৃষ্ঠপোষকদের নিবৃত্ত করাই এর লক্ষ্য। অতীতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও বর্তমানে রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ওইংয়ের (র) অনিল ধসমানের নেতৃত্বে এই প্রোগ্রামটি অনেক সাফল্য পেয়েছে। লস্কর-ই তৈয়্যবা ও জইশ-ই মোহাম্মদের মতো সংগঠনগুলোকে কঠিন আঘাত হানতে পেরেছে ভারত।
কিন্তু মৃত্যুদণ্ডের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিই প্রমাণ করছে, এই গোপন যুদ্ধও ঝুঁকিমুক্ত নয়। বিবেচনা ও কাজে সামন্য ভুলই অনেক বড় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। যে লক্ষ্য অর্জনে এই কাজ করা হয়, তার চেয়েও বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
নৌবাহিনীর চাকরিতে
যাদব এখনো ভারতীয় নৌবাহিনীতে চাকরি করছে এই দাবির সত্যতা প্রমাণে নীতিগতভাবে কোনো বাধা থাকার কথা নয়। ভারতের গেজেটে আরো অন্যান্য বিষয়ের মতো সামরিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের কমিশন লাভ, পদোন্নতি ও অবসর গ্রহণের বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। ১৯৮৭ সালে নৌবাহিনীতে যোগ দেয়া কূলভূষণ সুধির যাদব সম্ভবত ১৩ বছর পর ২০০০ সালে কমান্ডার পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। নৌবাহিনীতে তার সার্ভিস নম্বর ৪১৫৫৮জেড।
কিন্তু ভারতীয় গেজেটের ডিজিটাল আর্কাইভ থেকে ২০০০ সালের কয়েকটি মাসের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত ফাইলগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। পরবর্তী কয়েক বছরের কোনো ফাইলে যাদবের অবসর গ্রহণের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আর গেজেটে ভুলভ্রান্তি হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতকে (আইসিজে) ভারত সরকার বলেছে, যাদব একজন অবসরপ্রাপ্ত নৌবাহিনী কর্মকর্তা। তবে তিনি ঠিক করে অবসর নিয়েছেন তা জানাতে অস্বীকার করেছে তারা। যদিও যাদবের চাকরির বিষয়টি তার গুপ্তচরবৃত্তির প্রশ্নে খুব বেশি প্রাসঙ্গিক নয়।
সাধারণত গুপ্তচরবৃত্তির জন্য কেউ আটক হলে রাষ্ট্র সরাসরি তার সাথে সরকারের কোনো সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে। এখন পর্যন্ত ১৩ জন ভারতীয় নাগরিক গুপ্তচর বৃত্তির দায়ে আটক হয়েছে পাকিস্তানে। আর একই অভিযোগে ভারতের কারাগারে রয়েছে ৩০ পাকিস্তানি নাগরিক। কিন্তু একটি ঘটনাতেও কোনো দেশ তাদের এজেন্টের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেনি।
গোয়েন্দা জগতে পদার্পণ
২০০১ সালের শেষ দিকে নৌবাহিনী গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের উপকূলীয় এলাকায় নজরদারির জন্য ৯টি নৌ পয়েন্ট চালু করে। উপকূলীয় শহরগুলোতে উগ্রপন্থী সংগঠনগুলোর হামলার আশঙ্কায় এই পরিকল্পনা নেয়া হয়। ওই সময় বিভিন্ন দিক থেকে তথ্য আসতে থাকে যে, লস্কর-ই তেয়্যবা তাদের সদস্যদের নৌ বিদ্যায় পারদর্শী করার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে আজাদ কাশ্মিরের মংলা বাধ এলাকায়। এই তথ্যগুলোকে গুরুত্বের সাথে নিয়ে বিষয়টিতে গভীর উদ্বেগ ছিল নৌবাহিনীর।
তবে শুরুতেই নৌবাহিনী বুঝতে পারে তাদের প্রধান সমস্যাটি : সমুদ্রপথে হামলা চালাতে পারে এমন সংগঠিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য স্বতন্ত্র গোয়েন্দা সক্ষমতা নেই তাদের। যাদব স্বেচ্ছায় গোপন কাজে যুক্ত হতে রাজি হন বলে তার সহকর্মীরা বলেছেন। একটি অনুষ্ঠানে যাদবের সাথে দেখা হয়েছে এমন একজন সিনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘অল্প কয়েকজন এই বিপজ্জনক কাজ করতে রাজি হন। অতিরিক্ত সাহসের জন্যই তাকে বাছাই করা হয়েছিল।’
আরেক সিনিয়র নৌবাহিনী কর্মকর্তা বলেন, কিন্তু সেখানেও একটি সমস্যা ছিল। পদোন্নতি ও আর্থিক সুবিধার জন্যই কমান্ডার (যাদব) তার নৌবাহিনীর চাকরিতে থেকেই এই দায়িত্ব পালন করতে চেয়েছেন। কাগজপত্রে নাম না রেখে বিদেশে দায়িত্ব পালনের কোনো নিয়ম নৌবাহিনীতে ছিল না, সে কারণেই তার বিষয়টি এভাবে হয়েছে (বাহিনীর পদে থেকেই নতুন দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে)।
ইরান যাত্রা
২০০৩ সালে ডিসেম্বরে পুনে থেকে বি৬৯৩৪৭৬৬ নম্বরের পাসপোর্টে ইরান যায় যাদব। পাসপোর্টে তার নাম ছিল হুসেইন মোবারক প্যাটেল। পাসপোর্টে ঠিকানা ছিল পুনের মার্টল্যান্ড কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি। তবে কোন ফ্ল্যাট নম্বর দেয়া ছিল না। এই পাসপোর্টটি কিভাবে ইস্যু করা হয়েছে সে ব্যাপারে কোনো সরকারি তদন্তও হয়নি।
পুনে পাসপোর্ট অফিসের রেকর্ডে দেখা গেছে, ওই পাসপোর্টটি আগে আরেকজন ব্যবহার করত, তবে তার কোনো ঠিকানা ফাইলে লেখা নেই। কিভাবে আরেকজনের পাসপোর্ট যাদব পেল সে ব্যাপারে ভারত সরকার কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, যাদবের এই ‘কল্পকাহিনীর’ জন্য অর্থ দিয়েছে নৌ গোয়েন্দা দফতর। ইরানি কর্মকর্তাদের তদন্ত ও কূটনৈতিক সূত্রগুলো থেকেও এই দাবির সমর্থনে বক্তব্য পাওয়া গেছে। সেই অর্থ দিয়েই যাদব কামিন্দা ট্রেডিং কোম্পানি নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করে। প্রতিষ্ঠানটির কাজ ছিলে নৌযান মেরামত করা। পরে এই প্রতিষ্ঠানটি চাবাহার বন্দরে একটি নৌযানও চালু করে। রেকর্ড থেকে জানা যায়, যাদবের কোম্পানি জিপসাম সাপ্লাইয়ের জন্য ঠিকাদারদের আহ্বান জানায়। সিমেন্ট তৈরির জন্য ভারত এই পদার্থটি আমদানি করে। ২০১৫ সালে মার্চে যাদব বার্ষিক চুক্তিতে সরবরাহের জন্য অংশীদার খুঁজতে থাকে বলেও জানা যায়।
পাকিস্তান যে স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দি প্রকাশ করেছে সেখানে যাদব বলেছেন, তিনি ইরানের চাবাহারে একটি ছোট ব্যবসায় চালু করেছিলেন এবং ২০০৩ ও ’০৪ সালে নিজের অবস্থান গোপন রাখা ও গোপনে করাচি সফর করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
একজন সিনিয়র কূটনীতিক জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তেহরানের নিজস্ব তদন্তে দেখা গেছে কামিন্দা নামক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ছিল খুবই কম। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কেন যাদব এত বছর ইরানে থেকেছেন। ওই কূটনীতিক আরো জানান, কামিন্দার কাছে কোথাও থেকে অর্থও আসেনি এ সময়, যা ব্যবসার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
কাজের পরিধি বৃদ্ধি
২০০৮ সালের নভেম্বরের মুম্বাই হামলার আগে ব্যাপক সংখ্যক ভারতীয় উগ্রপন্থী ইরানের জাহেদান হয়ে পাকিস্তানের প্রশিক্ষণ শিবিরগুলোতে গেছে প্রশিক্ষণ নিতে। যাকে লস্কর-ই-তৈয়্যবার ভারতীয় শীর্ষ এজেন্ট মনে করা হয় সেই ফাহিম আরশাদ আনসারি, ফেরারি বোমা বিশেষজ্ঞ ফয়েজ কাগজী ছিলেন এই দলে।
২০০৬ সালের দিকে বালুচিস্তানের বিদ্রোহ ফুঁসে ওঠে। ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী তাদের আফগান ঘাঁটিগুলো থেকে পর্যাপ্ত তথ্য পেলেও ওই অঞ্চলে কার্যক্রম আরো জোরদারের জন্য চাপ দেয়া হয় তাদের।
দুই কর্মকর্তা বলেছেন, নৌ গোয়েন্দা সংস্থাকে হতাশ করে চাবাহারে তাদের নতুন সম্পদটি ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি) হয়ে সন্ত্রাস দমনে কাজ করতে শুরু করে। তাদের ভয় ছিল, যাদবের নৌবাহিনীর চাকরিতে থাকার বিষয়টি ঝামেলা তৈরি করতে পারে।
সূত্র জানিয়েছে, ২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল সময়ে নৌবাহিনী প্রধানের দায়িত্ব পালন করা অ্যাডমিরাল অরুণ প্রকাশ এ বিষয়টির বিরোধিতা করলেও ওই অঞ্চলে থাকা এমন একটি আস্থা রাখার মতো লোককে কাজে লাগাতে গোয়েন্দা প্রধান ছিলেন বেপরোয়া। এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আইবি যাদবকে যে কাজ দিয়েছে তার ফলাফল সম্পর্কে সত্যিই উদ্বেগে ছিল নৌবাহিনী। তবে আমরা মূলত এটিই বলেছি, যেহেতু সে ওখানে আছে তাই তাকে কাজে লাগাতে দোষ কী।’
র-এর সাবেক কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, যাদবকে গোয়েন্দা কার্যক্রমের সম্মুখ সারিতে নিয়ে আসার পেছনে ছিল আইবির স্বতন্ত্র বৈদেশিক কার্যক্রমের উচ্চাভিলাষ। ওই অঞ্চলে র-এর নিজস্ব গোয়েন্দা কার্যক্রম ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবেলায় যথেষ্ট ছিল। ওই সময়ে কর্মরত ছিলেন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর এমন কর্মকর্তারা বলেছেন, তাদের উদ্যোগটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত ছিল। উদারহরণস্বরূপ ২০০৭ সালের মার্চে লস্কর সদস্য জামিল আহমেদ আওয়ান ও আবদুল মজিদ আরিয়ানের নেতৃত্বে ৮ পাকিস্তানি নাগরিক মুম্বাইতে আসে। মহারাষ্ট্র ও গুজরাটে তাদের হামলা করার লক্ষ্য ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু ওই পরিকল্পিত হামলাটি নস্যাৎ করে দেয় এবং সন্ত্রাসীদের আটক করে আইবি।
২০১০ সালে প্রথমবারের মতো সাবেক নৌ কর্মকর্তা পরিচয়ে র-এর সাথে যোগ দেন যাদব। তবে সেখানে তাকে স্বাগত জানানো হয়নি। গোয়েন্দা সংস্থাটির পাকিস্তানবিষয়ক ডেস্কের প্রধান আনন্দ আরনি যাদবের তার সংস্থা হয়ে কাজ করার প্রস্তাব বাতিল করে দেন। তার যুক্তি ছিল, নৌ কমান্ডারের বুদ্ধিমত্তা সামান্য। র-য়ের সাবেক এক কর্মকর্তা সেই সময়ের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘চারটি মিটিংয়ে আমরা বলেছিলাম তার জন্য কিছু ছোটখাটো পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে। পরীক্ষায় সে আমাদের আগ্রহ সৃষ্টির মতো কিছুই দিতে পারেনি। তবে কেসি ভার্মা থেকে শুরু করে পরবর্তী র প্রধানরা যাদবকে কিছু অর্থ দিতেন। ওই লেনদেনের সাথে জড়িত এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘সম্ভাব্য সূত্রগুলোর সাথে সম্পর্ক রক্ষার জন্য এটি ছিল একটি রুটিন কাজ।’ মজার ব্যাপার হচ্ছে, বেশ কয়েকজন র প্রধানের সময় এই অর্থ প্রদান অব্যাহত ছিল। ভার্মার পর সঞ্চিব ত্রিপাথি (২০১০-১২), অলক জোশির (২০১২-১৪) যুগেও। তবে পুরো এই সময়ে কেউ যাদবের চাকরির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখেননি। তার মানে এ সময় তিনি নৌবাহিনীর কর্মকর্তা হিসেবেও বহাল ছিলেন।
র-এর নিয়মিত কর্মীদের অনেকে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা থেকে এসেছেন। তবে তারা ছিলেন প্রেষণে এবং এই কর্মকর্তারা কখনোই সরাসরি অপারেশনের সাথে জড়িত ছিলেন না। অর্থাৎ প্রকাশ্য কাজগুলোতে সরকার ও এজেন্টদের তৎপরতার মধ্যে এটি কাজ করত দেয়াল হিসেবে।
অতিরঞ্জিত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে যাদব জানিয়েছেন, তিনি ২০১৩ সালে অনিল কুমার গুপ্ত নামে এক কর্মকর্তার অধীনে র-এর হয়ে কাজ শুরু করেন। তবে সংস্থাটিতে এ নামে কোনো কর্মকর্তা ছিল না, বর্তমানেও নেই। পরবর্তী আরেক ভিডিওতে তিনি র প্রধান অলিন ধাসমান ও জোশির নাম বলেছেন। ভার্মা ও জোশি দু’জনই সাবেক আইবি অফিসার এবং সম্ভবত ২৬/১১ পূর্ববর্তী সময়ে যাদবের সাথে তারা কাজ করে থাকতে পারেন।
যাদব এল৯৬৩০৭২২ নম্বরের যে পাসপোর্টটি নিয়ে পাকিস্তানের হাতে আটক হয়েছেন সেটি ২০১৪ সালে তার হাতে আসে। মুম্বাইয়ের পার্শ্ববর্তী থানে শহরে সেটি ইস্যু করা হয়। সে সময় তিনি মুম্বাই-পুনে সড়কের জশোদাবালা কমপ্লেক্সের বাসিন্দা হিসেবে পরিচয় দেন। পৌরসভার রেকর্ডে দেখা গেছে, সেখানের ফ্ল্যাটির মালিক তার মা অবন্তি যাদব। পাসপোর্টে যথাযথ ঠিকানা ব্যবহার করা একটি বড় ধরনের ভুল, যদি তিনি সে সময় গোয়েন্দা সংস্থার সাথে কাজে জড়িত থাকেন। একজন র কর্মকর্তা বলেন, ‘যাদব তার পরিচয় সম্পর্কে যা বলেছে, তা অস্বীকার করা ভারতের পক্ষে অসম্ভব। একজন গুপ্তচরের ব্যবহৃত পরিচয় তার আসল পরিচয়ের কাছাকাছি হওয়াটাও বড় ধরনের একটি দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও অপরাধ।’
বিশ্বাসঘাতকতার পথে
সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের পর থেকে যাদব করাচিভিত্তিক সন্ত্রাসী উজাইর বালুচের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। উজাইর একসময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ঠ লোক থাকলেও ২০১৩ সালে সে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ১৯৮৭ সাল থেকেই উজাইরের রয়েছে ইরানি পাসপোর্ট, চাবাহারে স্থায়ীভাবে থাকত না সে, আসত আবার চলে যেত। তার ভাতিজা জালাল বালুচের পাশের বাড়িতেই থাকতেন যাদব, তথ্য সরবরাহের বিনিময়ে তাদের দিত অর্থ। পাকিস্তান সেনাবাহিনী জোর দিয়ে বলছে, ২০১৪ সালের পর থেকে র-এর পক্ষ থেকে অন্তত পাঁচটি অস্ত্রের চালান বালুচ বিদ্রোহীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে যাদব। যদিও বিষয়টি পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।
(পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা) আইএসআইয়ের সাথে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পর উজাইর বালুচকে আশ্রয় দিয়েছে ইরান। পাকিস্তানের একটি তদন্তের নথিতে দেখা গেছে, উজাইর গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িত হয়ে বিদেশী কর্মকর্তা ও এজেন্টদের কাছে গোপন তথ্য ও পাকিস্তানের সেনা স্থাপনার নকশা সরবরাহ করত। তবে তার সরবরাহ করা জিনিসগুলো ছিল নিম্নমানের।
গত বছর উজাইর বালুচ ইন্টারপোলের এক পরোয়ানার ভিত্তিতে আবুধাবিতে গ্রেফতার হয়, পরে তাকে পাকিস্তানের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, উজারইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই আইএসআই চাবাহারে কর্মরত অজ্ঞাত ভারতীয়দের বিষয়ে জানতে পারে। ২০১৭ সালের এপ্রিলে করাচির এক আদালতে সাক্ষ্য দেয় উজাইর, স্বীকার করে কূলভূষণ যাদব ও ইরানি গোয়েন্দাদের সাথে সম্পর্কের কথা। যাদবের মামলাটি কিভাবে শেষ হবে তা অনেকটাই ঠিক করে দেয় উজাইরের জবানবন্দি।
পাকিস্তানি মিডিয়ায় যাদবের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বলা হলেও সেনাবাহিনীর আদালতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় গোপনীয়তা আইনে। ওই আইন অনুসারে কোনো ব্যক্তি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষাভাবে শত্রুদের কাজে লাগতে পারে এমন কোনো তথ্য সরবরাহ করলে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিধান রয়েছে।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.