চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের বাচ্চা সন্ত্রাসীদের কাণ্ড!
চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার দুই নম্বর গেইট এলাকায় পুলিশের ওপর গুলিবর্ষণে গুলিবিদ্ধ সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আব্দুল মালেক বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণে জড়িতরা ওমরগণি এমইএস কলেজকেন্দ্রিক রাজনীতিতে জড়িত। ছাত্রলীগের পরিচয়ে চলে, এমন একজনের নেতৃত্বে নগরীর সিআরবি এলাকায় প্রতিপক্ষের ওপর হামলা করতে যাচ্ছিল যুবলীগ-ছাত্রলীগের ১০ জন। যাওয়ার পথে পুলিশের মুখোমুখি হলে যুবলীগ কর্মী খোকন গুলি ছুঁড়ে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য মিলছে।
নগরীর ৮ নম্বর ষোলশহর ওয়ার্ডের বিতর্কিত দুই যুবলীগ নেতা এলাকায় ‘বড় ভাই’ হিসেবে পরিচিত। তাদের অনুসারীরাই এ হামলা চালিয়েছে বলে গোয়েন্দারা তথ্য পেয়েছেন।
পুলিশ এবং সংশ্লিষ্ট একাধিক গোয়েন্দা সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে পুলিশ কর্মকর্তাদের কেউই এসব বিষয়ে সরাসরি কথা বলতে রাজি হননি।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এখন পর্যন্ত যে তথ্য পেয়েছি, তারা বড় ধরনের অপরাধ ঘটানোর জন্য যাচ্ছিল। সেটা হতে পারে কাউকে গুলি করে হত্যা কিংবা হামলা-ভাঙচুর। পুলিশের সামনে যখন পড়ে যায় তখন ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে গুলি করে। যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তারাও জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য দিয়েছে।
সিআরবি এলাকায় হত্যার উদ্দেশ্যে কাউকে আক্রমণের জন্য যাচ্ছিল, বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া এমন তথ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, এই ধরনের তথ্য এসেছে। যাচাইবাছাই করে দেখছি।
সূত্রমতে, নগরীর সিআরবি এলাকায় এসে যুবলীগ-ছাত্রলীগ নামধারী একটি গ্রুপের মারধরের শিকার হন ঘটনায় জড়িত ১০ জনের একজন। মারধরের বিচার দিতে গিয়ে সে আরেক দফা অপমানের শিকার হয়। ওই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে প্রতিপক্ষের ওপর হামলার জন্য সে বাকিদের জড়ো করে যাচ্ছিল সিআরবি এলাকায়। মূলত ছাত্রলীগ নামধারী ওই তরুণই ঘটনার নেতৃত্বদাতা।
ছাত্রলীগের রাজনীতি সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমইএস কলেজে পড়ালেখা না করলেও ওই তরুণ এই কলেজকেন্দ্রিক রাজনীতিতে সক্রিয়। উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। তবে নগর, কলেজ কিংবা ওয়ার্ডভিত্তিক ছাত্রলীগের কোন কমিটিতে তার নাম নেই।
সূত্রমতে, যে খোকন গুলি করেছে, সে জিইসি-ষোলশহর এলাকায় যুবলীগ কর্মী হিসেবে পরিচিত। প্রায় ২৪ বছর বয়সী খোকনের বিরুদ্ধে ছিনতাইসহ বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক মামলা আছে।
এর আগে, শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে নগরীর পাঁচলাইশ থানার দুই নম্বর গেইট এলাকায় পুলিশের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ পাঁচলাইশ থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আব্দুল মালেক বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মো.আব্দুল হাকিম অভি (১৯) নামে একজনকে আটক করে। এরপর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত রাতে নগরীর মুরাদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে জোবায়ের হোসেন প্রত্যয় (১৭) এবং মাঈনুদ্দিন ফরিদ প্রকাশ রাকিব (১৭) নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেনের ছেলে প্রত্যয় এবার নগরীর কাজেম আলী স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী। তাদের বাড়ি নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায়। বাসা মুরাদপুর জলিল বিল্ডিং গলিতে।
রাকিবও নগরীর নাসিরাবাদ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল। তার বাবা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তালিকাভুক্ত ঠিকাদার আ ন ম ফরিদ উদ্দিন ফরহাদ। আনোয়ারা উপজেলার রায়পুরা দোভাষীবাজারে তাদের বাড়ি। বাসা নগরীর নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির ৫ নম্বর সড়কে।
অভি হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট এলাকার সিএনজি অটোরিকশা চালক মো.ইউনূসের ছেলে। নগরীর চশমাহিলের মেয়র গলিতে তাদের বাসা।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পাঁচলাইশ থানার ওসি বলেন, সিভিল এবং ইউনিফর্ম পড়া মিলিয়ে ১০ জনের টিম ষোলশহর দুই নম্বর গেইটের মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছিল। তিনটি মোটর সাইকেলে করে ১০ জন দুই নম্বর গেইটের মোড় অতিক্রম করে মুরাদপুরের দিকে যাচ্ছিল। কর্তব্যরত পুলিশের সন্দেহ হলে সেটি থামার সংকেত দেন তারা। এ সময় একজন গুলি ছুঁড়ে।
‘গুলিবর্ষণের পর একটি মোটরসাইকেল ঘটনাস্থলে ফেলে পালিয়ে যায়। পুলিশ ধাওয়া দিলে আরেকটি মোটরসাইকেল কয়েক গজ দূরে ফেলে যায়। এ সময় হাকিমকে পুলিশ ধরে ফেলে। আরেকটি মোটরসাইকেল মুরাদপুর এলাকায় পার্ক করে তারা পালিয়ে যায়। পরে সেটিও আমরা উদ্ধার করেছি। ঘটনাস্থল থেকে দুই রাউন্ড গুলির খোসা ও এক রাউন্ড তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে পিস্তলটি উদ্ধার করা এখনো সম্ভব হয়নি’ বলেন ওসি।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.