মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, আসুন! মাথা কেটে ফেলি!

অনেকে মাথা ব্যাথা সমস্যা সমাধানের জন্য মাথা ফেলে দেয়ার মত সাহসী সিদ্ধান্ত নেন। আমাদের বীর শিক্ষামন্ত্রীও সেই পথে এগুচ্ছেন। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর জন্য আমরা নোবেল দাবী করতেই পারি। আজকাল তো বাংলাদেশে নোবেল দাবী করা একটা বিশেষ ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে।
খবরে দেখলাম বাংলাদেশে প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১লা ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় ফেসবুক বন্ধ রাখার পরিকল্পনা করছে। এজন্য তারা টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি সাথে কথাবার্তা শুরু করেছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলছেন, শুধুমাত্র পরীক্ষার দিনগুলিতে এই পদক্ষেপ কার্যকর করা হবে।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের সমস্যার মূলে আঘাত না করে সরকারের এসব বালকসুলভ প্রচেষ্টা কোন যৌক্তিক সমাধান হতে পারে না। বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন ফাঁসের জন্য কোচিং সেন্টার এবং শিক্ষকসহ বিভিন্ন পক্ষকে দায়ী করেছে। শিক্ষা মন্ত্রনালয় এমনভাবে অভিযোগ করছে যেন প্রশ্নপত্র প্রণয়নের দায়িত্ব কোচিং সেন্টারগুলোর!
আজ পর্যন্ত অনেক মানুষ এই ইস্যুতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর মধ্যে একজনও নেই যারা প্রশ্নপত্রের মূল দায়িত্বে আছেন। যারা এরেস্ট হয়েছেন তারা সবাই প্রান্তিক পর্যায়ে বিপণনের কাজ করেছেন। এটা অবশ্যই অপরাধ। কিন্তু মূল অপরাধীদের আড়াল করা হয়েছে বারংবার। এদের কাছে প্রশ্ন কীভাবে এসেছে তা কেউ খতিয়ে দেখছে না।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, এসএসসি পরীক্ষার দিনগুলোতে একটা লিমিটেড সময়ের জন্য ফেসবুক বন্ধ রাখার ব্যাপারে তাঁরা টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি এবং প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলছেন। ফেসবুক যারা পরিচালনা করে, তাদেরকেও এবিষয়ে অনুরোধ করা হচ্ছে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেছেন। ফেসবুকের মাধ্যমে পরীক্ষার প্রশ্ন লেনদেন আমরা বন্ধ করতে চাইছি। হাঁ, না জবাবের অনেক প্রশ্ন আছে। সেগুলো ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এগুলো যাতে না ছড়ায় অথবা মিথ্যা রটাতে না পারে, এসব কারণে। পরীক্ষা শুরুর আগমুহূর্ত থেকে এক দেড় ঘণ্টা ফেসবুক বন্ধ রাখার কথা আমরা ভাবছি।
শিক্ষামন্ত্রীর কথা শুনে দুটো জিনিস আমার কাছে স্পষ্ট।
১- প্রশ্নফাঁস হবে। কিন্তু এর কথা ছড়িয়ে পড়তে দেয়া যাবে না। ফেসবুক বন্ধ রাখতে হবে। যাতে করে সরকারের ভাবমুর্তি রক্ষা পায়।
২- প্রশ্নফাঁস মানুষ তো আর সাধে করে না। এটা হাজার কোটি টাকার বিজনেস। তাই এটা বন্ধ করার ক্ষমতার ঘাটতি আছে মন্ত্রীর। হাজার হলেও টাকার লোভ ছাড়া মন্ত্রী নাহিদের পক্ষে সহজসাধ্য কিছু নয়। প্রশ্নফাঁসের নিউজ ছড়িয়ে পড়লে পরীক্ষা বাতিল করতে হয়। আরো অনেক সমস্যা হয়। যাদের কাছে চড়া মূল্যে প্রশ্ন বিক্রী করা হয়েছে তারা ক্ষুব্দ হয়। দেখা গেলো কেউ লাখ টাকা দিয়ে প্রশ্ন কিনে। আবার কেউ বিনামূল্যে প্রশ্ন পেয়ে যাচ্ছে ফেইসবুকে। এভাবে তো হতে পারে না। সমতা দরকার। আমাদের শিক্ষামন্ত্রী আবার সমতায় খুব বিশ্বাসী।
দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, সমস্যার মূলে নজর না দিয়ে কিছু হাল্কা পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, ফেসবুক বন্ধ না করে এর মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসের চেষ্টার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করা সম্ভব। কিন্তু সেটা না করে এই মাধ্যমটিকেই বন্ধ রাখার কথা বলা হচ্ছে।
"এটা অনেকটা রোগের কারণ চিহ্নিত না করে, রোগের উপসর্গের চিকিৎসা করার মতো বিষয় হবে। সেটাতো মূল কারণে যাওয়া হলো না। আমাদের উদ্বেগের বিষয়টা হলো, জড়িতরা চিহ্নিত হচ্ছে না বা তারা বিচারের মুখোমুখি হচ্ছে না।"
আমি বিশ্বাস করতে চাই না আমাদের শিক্ষামন্ত্রী এসব দুর্নীতির সাথে যুক্ত। যদি তাই হয় তাহলে তার এই সিদ্ধান্ত মাথা ব্যাথায় মাথা কেটে ফেলার মত। ফেসবুক শেয়ার করার জায়গা শেয়ার হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র যাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে আপনি তাদের নিয়ন্ত্রণ করুন।
এমন হতে পারে এই সিদ্ধান্ত আপনাকে কেউ দিয়েছে। আমি নিশ্চিত আপনি খোঁজ নিন। ঐ ব্যাক্তিই আসল কালপ্রিট। সেই আপনাকে মাথা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
মন্তব্য: ১ টি
২৪ জানুয়ারি ’১৮ সকাল ০৬:০৭
এমন হতে পারে এই সিদ্ধান্ত আপনাকে কেউ দিয়েছে। আমি নিশ্চিত আপনি খোঁজ নিন। ঐ ব্যাক্তিই আসল কালপ্রিট। সেই আপনাকে মাথা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত দিয়েছে।