সাইরাস দ্য গ্রেটের ব্যাবিলন আক্রমণ
ব্যাবিলন ছিল প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ নগরী। ধারণা করা হয়, ১৭৭০-১৬৭০ এবং পুনরায় ৬১২-৩২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের সময়টিতে ব্যাবিলনই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় শহর। ২ লাখের ওপর জনসংখ্যার প্রথম নগরী বলেও মনে করা হয় ব্যাবিলনকে।
খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতকের দিকে ব্যাবিলন নগরীটি সুরক্ষিত ছিল বড় আকারের প্রাচীরের আড়ালে। পুরো নগরী বেষ্টন করে ছিল ২ স্তরের প্রাচীর, যাতে প্রথম প্রাচীরের পতন ঘটলেও দ্বিতীয়টি দিয়ে শত্রু ঠেকানো যায়। এ দুই দেয়ালের মাঝে ছিল পরিখা, যা শত্রুপক্ষের জন্য শহরের ভেতরে প্রবেশ করাকে রীতিমতো অসম্ভব করে রেখেছিল। এছাড়া ওয়াচ টাওয়ারগুলোতে সার্বক্ষণিক সশস্ত্র পাহারার ব্যবস্থা তো ছিলই।
গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাসের মতে, এ দেয়ালগুলো ছিল ৩০০ ফুট উঁচু, ৮০ ফুট চওড়া ও ৫৫ মাইল জুড়ে বিস্তৃত। অবশ্য বর্তমানকালের ঐতিহাসিকদের মতে, হেরোডোটাস বাড়িয়ে বলেছিলেন। তাদের মতে দেয়ালগুলো ছিল ৯০ ফুট উঁচু ও ১০ মাইল লম্বা। এছাড়া ইউফ্রেতিস নদী শহরটির মাঝ দিয়ে প্রবাহিত ছিল। ফলে অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় পানির সরবরাহ নিয়েও তাদের চিন্তার কিছু ছিল না।
৫৩৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পারস্যের রাজা ২য় সাইরাস, যিনি ‘সাইরাস দ্য গ্রেট’ নামেই বেশি পরিচিত, আক্রমণ করে বসেন ব্যাবিলনে। কিন্তু ব্যাবিলনের সৈনিকেরা সাইরাসের এ আগমনকে পাত্তাই দেয়নি। তারা তখন ফসল কাটার উৎসবে ব্যস্ত ছিল। শহরের নিরাপত্তা নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগা ব্যাবিলনিয়ান সৈনিকদের কাছে সাইরাস যেন ছিলেন এক শিশু।
ব্যাবিলন সুরক্ষিত ছিল চারদিকে প্রাচীর দিয়ে। শহরের মধ্য দিয়ে যে ইউফ্রেতিস নদী বয়ে গিয়েছিল, এর প্রবেশপথেও ফটক নির্মাণ করে রেখেছিল তারা। কিন্তু এদিকে বাড়তি আর কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাখেনি। শহরটির সৈন্যরা কখনও আশা করেনি, পানির নিচে কেউ সেই ফটক ভেঙে তাদের শহরে আক্রমণ চালাবে। এছাড়া পানির নিচে কেউ এত দীর্ঘ সময় ধরে দম আটকে রাখতে পারবে বলেও মনে করেনি তারা। আর তাদের ঠিক সেই জায়গা দিয়েই আক্রমণ করলেন সাইরাস। নদীর আশপাশে বিভিন্ন খাল ও অন্যান্য জলাশয় খনন করে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের ব্যবস্থা করলেন তিনি। ফলে নদীতে পানির স্তর নিচে নেমে যায়। তখনই দেখা মেলে গেটগুলোর। এরপর এক রাতে গোপনে তার সৈন্যরা সেখানের ফাঁকা জায়গা দিয়ে শহরে প্রবেশ করে মূল ফটকটি খুলে দেয়। এরপর মৌমাছির ঝাঁকের মতো শহরের ভেতরে ঢুকে পড়ল সাইরাসের বাহিনী। প্রকৃত অবস্থাটি ব্যাবিলনের সৈন্যদের বুঝতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লেগেছিল। যখন তারা বুঝতে পারল, ততক্ষণে বেশ দেরি হয়ে গেছে। আর দিন-রাত নাচ-গান ও মদের রাজ্যে ডুবে থাকায় তারা সেভাবে প্রতিরোধও গড়তে পারেনি। সাইরাস দ্য গ্রেটের সৈন্যদলের কাছে কচুকাটা হতে হয়েছিল তাদের। এভাবেই সাইরাস দ্য গ্রেটের কাছে পরাজয় ঘটেছিল ব্যাবিলনের।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.