গুলি করে খুলি উড়ায়ে দিব
বিনা দোষে বহিষ্কৃত ইন্টার্ন চিকিৎসক লিমন মণ্ডলের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারসহ ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছিলেন রাজধানীর এমএইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিক্ষার্থীরা ।
গতকাল সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে শমরিতা মেডিকেল কলেজের সামনের রাস্তা বন্ধ করে চলছিল তাদের এই কর্মসূচি। কর্মসূচিতে হঠাৎ উপস্থিত হন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি হাজী এম মকবুল হোসেন। বেলা সাড়ে ১০টার দিকে তিনি ঘটনাস্থলে এসেই শিক্ষার্থীদের প্রতি রূঢ় আচরণ শুরু করেন। তাদের হুমকি দিয়ে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় অশ্রাব্য ভাষায় গালিও দেন সাবেক এই এমপি।
ঘটনার সময় শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ ভিডিও চিত্র ধারণ করেন। পরে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে মকবুল বলেন, ‘আমার সাথে সরকার একাত্মতা করছে। যারাই ইতরামি করবে পুলিশ আছে, খুলি উড়াইয়া দিবে’। একজন সাবেক এমপির এমন বক্তব্যে পরিস্থিতি আরো উত্তাল হয়ে ওঠে। তারা মিছিল করতে থাকেন। পাশাপাশি মকবুলের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা চলতে থাকে।
ভিডিওতে দেখা যায়, মকবুল শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘বইসা পড়ো বইসা পড়ো। এমবিবিএস করতে আসছো না? পাবনা, জানো না? বন্ধ কইরা দিসে। কী...(অশ্রাব্য) হইছে অথরিটির! কুমিল্লা মেডিকেল বন্ধ কইরা দিছে? কি হইছে? প্রিন্সিপালের কি হইছে!...(অশ্রাব্য শব্দ) হইছে?
এক শিক্ষার্থীর দিকে আঙুল উঁচিয়ে তিনি বলেন, তোমার এক বছর মিস হবে। তোমাকে এক্সপেল করা হবে! এ সময় ওই শিক্ষার্থী বলেন, মইরা যাবো, দাবি না মানলে।
মকবুল বলেন, মইরা যাবি? কয়বার জেল খাটসোস?’
উত্তরে শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার এক বছর না, পাঁচ বছর লাগুক। তবুও দাবি আদায় করে ছাড়বো। আমাদের সঙ্গে সব শিক্ষার্থী একাত্মতা প্রকাশ করেছে। যারা আসেনি তারাও বাসা থেকে একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
এ সময়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে মকবুল বলেন, ‘এই চুপ, এই চুপ। আমার সঙ্গে রয়েছে সরকার। যারাই ইতরামি করবে গুলি করে খুলি উড়িয়ে দেব।’
একপর্যায়ে মকবুল হোসেন ঘুরে ঘুরে আন্দোলনরত নারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘কি হোস্টেলে যাবা না? এখানেই থাকবা? এটা মাস্তানির জায়গা না। নিয়ম মানবা না, আবার আন্দোলনও করবা? তবে শিক্ষার্থীরা মকবুলের হুমকিতে পিছু হটেননি। তারা শমরিতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে ভেতরে রেখে বাইরে থেকে তালা মেরে দেন। একপর্যায়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদের সমঝোতায় রাস্তা ছেড়ে দেয়ার শর্তে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হন মকবুল হোসেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাস্তা ছাড়বেন না বলে ঘোষণা দেন।
এরপর ওসিকে রাস্তা খালি করার কথা বলে কলেজের ভেতরে প্রবেশ করেন মকবুল হোসেন। শিক্ষার্থীদের অনড় অবস্থানের কারণে দুপুর ১টায় কলেজের কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলন করেন মকবুল হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত ১২ই জানুয়ারি নবাগত এক ভারতীয় ছাত্রকে মারধর এবং গালিগালাজের কারণে ইন্টার্ন চিকিৎসক লিমন মণ্ডলকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। এর জের ধরে সঙ্গে আরো কয়েকটি দাবি যুক্ত করে অনিয়মিত কিছু ছাত্র আন্দোলনে শুরু করে। সরকারি মেডিকেল কলেজে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা দেয়ার নিয়ম রয়েছে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ক্ষেত্রে ভর্তির সময় ইন্টার্ন ফি বাবদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নেয়ার নিয়ম রয়েছে। সেই টাকা থেকে ইন্টারেস্ট হওয়ার পর ইন্টার্নদের মাসিক ১৫ হাজার টাকা করে দেয়ার কথা। কিন্তু আমাদের এখানে ভর্তির সময় অনেকেই ইন্টার্ন ফি দেয় না, তাহলে আমরা কোথা থেকে টাকা দিব?
মাসিক বেতন কমানোর দাবির প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, মাসিক ১৩ হাজার টাকা বেতন নিই, কথাটি সত্য নয়। আপনারা যাচাই করে দেখুন আমরা ৮ হাজার টাকা নিই। কেউ যদি ফেল করে সেজন্য হয়তো এক-দেড় হাজার টাকা বেশি নেয়া হয়। সংবাদ সম্মেলন শেষে কলেজের সামনে এসে দেখা যায়, কলেজের গেটে তালা ঝুলিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। এর কিছুক্ষণ পর চেয়ারম্যান মকবুল এসে শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেয়ার কথা বলেন।
এ বিষয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ডিউটি অফিসার বলেন, কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন বন্ধ করেছেন।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে, ইন্টার্ন ডাক্তারদের (এমবিবিএস) সর্বনিম্ন ভাতা ১৫ হাজার এবং ইন্টার্ন ডাক্তারদের ( বিডিএস) সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা ভাতা দিতে হবে, প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের বেতন বৃদ্ধি করা যাবে না। ফাইনাল পেশাগত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে বিএমডিসি নিয়ম বহির্ভূত বাড়তি ৬ মাসের টাকা (৭৮ হাজার) নেয়া বন্ধ করতে হবে, একদিন অনুপস্থিতির জন্য সর্বোচ্চ জরিমানা ২০ টাকা করতে হবে, যে কোনো পেশাগত পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ধার্য্যকৃত ফি এর অতিরিক্ত টাকা নেয়া বন্ধ করতে হবে, শিক্ষার্থীদের বেতন দেয়ার সর্বশেষ সময় ১০ তারিখ করতে হবে, সকল শিক্ষার্থীর জন্য চিকিৎসা ও ল্যাব পরীক্ষা সম্পূর্ণ ফ্রি দিতে হবে এবং সকল শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের জন্য চিকিৎসা এবং ল্যাব পরীক্ষায় ৬০ শতাংশ ছাড় দিতে হবে, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সঙ্গে কোনো প্রকার অনৈতিক আচরণ ও অকথ্য ভাষা ব্যবহার করা যাবে না।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.