বছরজুড়ে মিডিয়ার দখলে পুলিশ আর ছাত্রলীগ
চাঁদাবাজি, ঘুষ, অপহরণ, খুন, লুটপাট, হয়রানিসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিগত ১ বছরে মিডিয়ায় যত খবর প্রচারিত হয়েছে তার অধিকাংশ জুড়েই ছিল পুলিশ আর ছাত্রলীগ। এমনকি নতুন বছরের মাত্র ১০ দিন অতিবাহিত হতেই এই উভয় বাহিনীই নিয়মিত দখল করে রেখেছে পত্রিকার পাতা আর টিভির পর্দা।
ছাত্রলীগের সাথে পাল্লা দিয়ে অপহরণ, ঘুষ, ছিনতাই, মাদক ব্যবসায় ইত্যাদির সাথে জড়িয়ে পড়েছে পুলিশের একটি অংশ। এমনকি মানবপাচার ও ধর্ষণের মতো অভিযোগও আসছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এ ধরনের অপরাধ করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ার অসংখ্য ঘটনা দেখা গেছে সাম্প্রতিক সময়ে।
গুম-অপহরণের পরিসংখ্যান প্রদর্শন করলে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো নয়। অপহরণ নিয়ে পুলিশ একটা রহস্যময় আলো-আঁধারি তৈরি করেছে। একজন মানুষ কয়েক মাস নিখোঁজ থাকার পর তাকে পুলিশ আটক দেখাচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা আসামি খুঁজে পেয়েছে। আদালতে হাজির করানোর পর পুলিশের মনোভাব হচ্ছে, অপরাধীকে পাকড়াও করতে তারা পেরেছে। কিন্তু এত দিন ধরে নিখোঁজ থাকার রহস্য কী, সে ব্যাপারে পুলিশ কিছু বলছে না। ভাবখানা এমন- এ ব্যাপারে তারা কিছুই জানে না। কিছু জানার যেন তাদের দরকারও নেই।
সম্প্রতি আশুলিয়ায় চাঁদাবাজির সময় হাতেনাতে আটক হয় শিল্প পুলিশের এ এস আই মুকুলসহ তার সহযোগীরা। এর আগে কক্সবাজারের টেকনাফে ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে নেয়া মুক্তিপণের ১৭ লাখ টাকাসহ গ্রেপ্তার হন গোয়েন্দা পুলিশের সাত সদস্য। অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা ও সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ফরিদপুরের এসপি সুভাষ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। আর এসব ঘটনায় ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে পুলিশ। রাজধানীর ফকিরাপুলে একটি ভবনে অভিযানের নামে একটি রিক্রুন্টিং এজেন্সির মালিকের কাছে সিআইডির এক কর্মকর্তা কোটি টাকা ঘুষ দাবি করে বরখাস্ত হন। গত ১৮ এপ্রিল কাফরুলের কচুক্ষেতের নিউ ওয়েভ ক্লাবে চাঁদাবাজির অভিযোগে ডিবি পুলিশের ১১ পুলিশ সদস্যকে আটক করে মিলিটারি পুলিশ।
১৭ অক্টোবর রাজধানীর খামারবাড়ি এলাকায় জসীম উদ্দিন নামে এক পুলিশ সদস্য ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়েন। ওই সময় পালিয়ে যাওয়া অপর দু’জনও ছিলেন পুলিশ সদস্য। গত ২৩ অক্টোবর খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার আবদুল্লাহ আরেফের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। ২৮ নভেম্বর চট্টগ্রামের মইজ্জারটেক এলাকা থেকে এক হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক হন এএসআই আনোয়ার হোসেন। ১৯ ডিসেম্বর বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় এক ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাইয়ের সময় গণপিটুনির শিকার হন কনস্টেবল শাহনেওয়াজ।
গত ২৬ ডিসেম্বর ট্রাফিক পরিদর্শক শেখ আজম মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মধুখালী রেলগেট এলাকায় দুর্ঘটনায় পড়েন। ছিটকে পড়ে তার মোটরসাইকেলের টুলবক্স ভেঙে বেরিয়ে আসে ৩৯ বোতল ফেনসিডিল! এ ঘটনার পর স্থানীয় জনতা পুলিশের ওই কর্মকর্তাকে পুলিশের হাতে দিয়েছেন। পরে মোটরসাইকেলটি তল্লাশি করে ট্যাঙ্কের ভেতর বিশেষ কৌশলে রাখা আরও ৪৩ বোতল ফেনসিডিল পাওয়া যায়।
পুলিশ সদর দপ্তরের গত পৌনে ৬ বছরের পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, নানা অপরাধে জড়িয়ে বছরে অন্তত ১৩ হাজার সদস্যকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। মাসে গড়ে সাড়ে ১১শ’ সদস্যকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। দৈনিক অন্তত ৩৮ জন পুলিশ সদস্য আইন অমান্য করা থেকে শুরু করে নানা অপরাধে জড়িয়ে শাস্তি পাচ্ছেন। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১২ সাল থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৫১১ জন পুলিশ সদস্য চাকরিচ্যুত এবং ৪২ জনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এরপরও তাদের অপরাধপ্রবণতা কমানো যাচ্ছে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কনস্টেবল থেকে শুরু করে উপপরিদর্শক (এসআই) পর্যন্ত সদস্যরা বেশি অপরাধে জড়াচ্ছেন। তারপর রয়েছেন পরিদর্শক মর্যাদার কর্মকর্তারা। এএসপি থেকে শুরু করে আরও উপরের কর্মকর্তাও অপরাধে জড়িয়ে শাস্তি পাওয়ার নজির রয়েছে। ২০১২ সাল থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত পৌনে ৬ বছরে লঘুদণ্ড পেয়েছেন ৭৩ হাজার ৩৩৩ জন সদস্য। তাদের মধ্যে কনস্টেবল থেকে এসআই পর্যন্ত রয়েছেন ৭৩ হাজার ২৯ জন, পুলিশ পরিদর্শক ৭০ জন এবং এএসপি থেকে তার ঊর্ধ্বে কর্মকর্তা রয়েছেন ২৩ জন। একই সময়ে গুরুদণ্ড পেয়েছেন তিন হাজার ৯৯১ জন। শাস্তি পাওয়াদের মধ্যে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ১০ হাজার ৮২১ জনকে শাস্তি দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে শাস্তি পাওয়া পুলিশের সংখ্যা ১৩ হাজার ৫৮৬ জন, ২০১৫ সালে ১১ হাজার ১৬৭ জন, ২০১৪ সালে ১৫ হাজার ২৯৭ জন। ২০১৩ সালে অপরাধ করে শাস্তি পেয়েছেন পুলিশের ১৪ হাজার ৬০ সদস্য এবং ২০১২ সালে এ সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৮৭৯ জন।
এ গেল পুলিশ বাবুদের কর্মযজ্ঞের খতিয়ান। এবার ছাত্রলীগের দিকে নজর দেয়া যাক। দেশজুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হানাহানি, টেন্ডারবাজী, খুন ও ধর্ষণের মতো ঘটনা তারা প্রায় বিনা বাধায় ঘটিয়ে এসেছে গত আট বছর ধরে। গত এক বছরের খতিয়ান আলোচনা করতে গেলে অন্তত দুইদিন সময়ের প্রয়োজন হবে। ছাত্রলীগের এহেন লাগামহীন অপকর্মের বিষয়ে বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। কিন্তু বিষয়টি সতর্কবাণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। এটাই সত্যি যে, সব ধরনের অপকর্মে তারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে দলীয় এবং প্রশাসনিক সুবিধা পেয়েছে।
অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও দলীয় কোন্দলে শক্তিপ্রদর্শনের পাশাপাশি তারা নিজেদেরকে নিয়োজিত করে বিরোধী মতপথ দমনের কাজে। এক্ষত্রে তারা পূর্ণ প্রশাসনিক সহায়তায় ও নিরাপত্তায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে গড়ে ওঠা ন্যয়সঙ্গত দাবির আন্দোলনে তাণ্ডব চালানোর সুযোগ পাচ্ছে। মিডিয়াগুলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিপক্ষ ছাত্রদলের অনুপস্থিতিতে ছাত্রলীগ নিজেরাই কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে। ৮ বছরে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রতিপক্ষ্যের ওপর হামলা, চাঁদাবাজী, আধিপত্য বিস্তারের জন্য সংঘর্ষ, গোলাগুলি, টেন্ডারবাজী, দখল বাণিজ্য, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রন, হলের সিট নিয়ন্ত্রণসহ নানা ইস্যুতে নিজেদের মধ্যে কোন্দলে ছাত্রলীগের প্রায় একশ ৩০জন নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছে। শরিয়তপুরসহ সম্প্রতি কয়েকটি এলাকায় ছাত্রলীগের নেতার নারী ধর্ষণ এবং ধর্ষনের দৃশ্য ধারণ করে ভিডিও প্রচার কাহিনীসহ অসংখ্য ন্যাক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাদের নাম জড়িয়েছে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাস-চাঁদাবাজী-প্রশ্নপত্র ফাঁস বাণিজ্য আর নিজেদের মধ্যে খুনাখুনি দেখতে দেখতে কেটে গেছে ২০১৭ সালের পুরোটাই।
মোটকথা ২০১৭ সালের পুরোটা জুড়েই মিডিয়ার খোরাক ছিল পুলিশ আর ছাত্রলীগ। ২০১৮ সালের শুরুতেই যেভাবে পুলিশ আর ছাত্রলীগ অপরাধের মহড়া শুরু করেছে তাতে শঙ্কা হচ্ছে কেমন যাবে এ বছরটা! দেশের মানুষের ঘুম কেড়ে নিয়ে আর কত তান্ডবলীলা চালালে আমরা অনেক বেশি স্বাধীন হয়ে উঠবো তা ভাবাচ্ছে প্রতি মূহুর্তেই।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
ছাত্রলীগের সাথে পাল্লা দিয়ে অপহরণ, ঘুষ, ছিনতাই, মাদক ব্যবসায় ইত্যাদির সাথে জড়িয়ে পড়েছে পুলিশের একটি অংশ। এমনকি মানবপাচার ও ধর্ষণের মতো অভিযোগও আসছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এ ধরনের অপরাধ করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ার অসংখ্য ঘটনা দেখা গেছে সাম্প্রতিক সময়ে।
গুম-অপহরণের পরিসংখ্যান প্রদর্শন করলে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো নয়। অপহরণ নিয়ে পুলিশ একটা রহস্যময় আলো-আঁধারি তৈরি করেছে। একজন মানুষ কয়েক মাস নিখোঁজ থাকার পর তাকে পুলিশ আটক দেখাচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা আসামি খুঁজে পেয়েছে। আদালতে হাজির করানোর পর পুলিশের মনোভাব হচ্ছে, অপরাধীকে পাকড়াও করতে তারা পেরেছে। কিন্তু এত দিন ধরে নিখোঁজ থাকার রহস্য কী, সে ব্যাপারে পুলিশ কিছু বলছে না। ভাবখানা এমন- এ ব্যাপারে তারা কিছুই জানে না। কিছু জানার যেন তাদের দরকারও নেই।
সম্প্রতি আশুলিয়ায় চাঁদাবাজির সময় হাতেনাতে আটক হয় শিল্প পুলিশের এ এস আই মুকুলসহ তার সহযোগীরা। এর আগে কক্সবাজারের টেকনাফে ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে নেয়া মুক্তিপণের ১৭ লাখ টাকাসহ গ্রেপ্তার হন গোয়েন্দা পুলিশের সাত সদস্য। অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা ও সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ফরিদপুরের এসপি সুভাষ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। আর এসব ঘটনায় ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে পুলিশ। রাজধানীর ফকিরাপুলে একটি ভবনে অভিযানের নামে একটি রিক্রুন্টিং এজেন্সির মালিকের কাছে সিআইডির এক কর্মকর্তা কোটি টাকা ঘুষ দাবি করে বরখাস্ত হন। গত ১৮ এপ্রিল কাফরুলের কচুক্ষেতের নিউ ওয়েভ ক্লাবে চাঁদাবাজির অভিযোগে ডিবি পুলিশের ১১ পুলিশ সদস্যকে আটক করে মিলিটারি পুলিশ।
১৭ অক্টোবর রাজধানীর খামারবাড়ি এলাকায় জসীম উদ্দিন নামে এক পুলিশ সদস্য ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়েন। ওই সময় পালিয়ে যাওয়া অপর দু’জনও ছিলেন পুলিশ সদস্য। গত ২৩ অক্টোবর খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার আবদুল্লাহ আরেফের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। ২৮ নভেম্বর চট্টগ্রামের মইজ্জারটেক এলাকা থেকে এক হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক হন এএসআই আনোয়ার হোসেন। ১৯ ডিসেম্বর বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় এক ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাইয়ের সময় গণপিটুনির শিকার হন কনস্টেবল শাহনেওয়াজ।
গত ২৬ ডিসেম্বর ট্রাফিক পরিদর্শক শেখ আজম মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মধুখালী রেলগেট এলাকায় দুর্ঘটনায় পড়েন। ছিটকে পড়ে তার মোটরসাইকেলের টুলবক্স ভেঙে বেরিয়ে আসে ৩৯ বোতল ফেনসিডিল! এ ঘটনার পর স্থানীয় জনতা পুলিশের ওই কর্মকর্তাকে পুলিশের হাতে দিয়েছেন। পরে মোটরসাইকেলটি তল্লাশি করে ট্যাঙ্কের ভেতর বিশেষ কৌশলে রাখা আরও ৪৩ বোতল ফেনসিডিল পাওয়া যায়।
পুলিশ সদর দপ্তরের গত পৌনে ৬ বছরের পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, নানা অপরাধে জড়িয়ে বছরে অন্তত ১৩ হাজার সদস্যকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। মাসে গড়ে সাড়ে ১১শ’ সদস্যকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। দৈনিক অন্তত ৩৮ জন পুলিশ সদস্য আইন অমান্য করা থেকে শুরু করে নানা অপরাধে জড়িয়ে শাস্তি পাচ্ছেন। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১২ সাল থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৫১১ জন পুলিশ সদস্য চাকরিচ্যুত এবং ৪২ জনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এরপরও তাদের অপরাধপ্রবণতা কমানো যাচ্ছে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কনস্টেবল থেকে শুরু করে উপপরিদর্শক (এসআই) পর্যন্ত সদস্যরা বেশি অপরাধে জড়াচ্ছেন। তারপর রয়েছেন পরিদর্শক মর্যাদার কর্মকর্তারা। এএসপি থেকে শুরু করে আরও উপরের কর্মকর্তাও অপরাধে জড়িয়ে শাস্তি পাওয়ার নজির রয়েছে। ২০১২ সাল থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত পৌনে ৬ বছরে লঘুদণ্ড পেয়েছেন ৭৩ হাজার ৩৩৩ জন সদস্য। তাদের মধ্যে কনস্টেবল থেকে এসআই পর্যন্ত রয়েছেন ৭৩ হাজার ২৯ জন, পুলিশ পরিদর্শক ৭০ জন এবং এএসপি থেকে তার ঊর্ধ্বে কর্মকর্তা রয়েছেন ২৩ জন। একই সময়ে গুরুদণ্ড পেয়েছেন তিন হাজার ৯৯১ জন। শাস্তি পাওয়াদের মধ্যে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ১০ হাজার ৮২১ জনকে শাস্তি দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে শাস্তি পাওয়া পুলিশের সংখ্যা ১৩ হাজার ৫৮৬ জন, ২০১৫ সালে ১১ হাজার ১৬৭ জন, ২০১৪ সালে ১৫ হাজার ২৯৭ জন। ২০১৩ সালে অপরাধ করে শাস্তি পেয়েছেন পুলিশের ১৪ হাজার ৬০ সদস্য এবং ২০১২ সালে এ সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৮৭৯ জন।
এ গেল পুলিশ বাবুদের কর্মযজ্ঞের খতিয়ান। এবার ছাত্রলীগের দিকে নজর দেয়া যাক। দেশজুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হানাহানি, টেন্ডারবাজী, খুন ও ধর্ষণের মতো ঘটনা তারা প্রায় বিনা বাধায় ঘটিয়ে এসেছে গত আট বছর ধরে। গত এক বছরের খতিয়ান আলোচনা করতে গেলে অন্তত দুইদিন সময়ের প্রয়োজন হবে। ছাত্রলীগের এহেন লাগামহীন অপকর্মের বিষয়ে বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। কিন্তু বিষয়টি সতর্কবাণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। এটাই সত্যি যে, সব ধরনের অপকর্মে তারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে দলীয় এবং প্রশাসনিক সুবিধা পেয়েছে।
অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও দলীয় কোন্দলে শক্তিপ্রদর্শনের পাশাপাশি তারা নিজেদেরকে নিয়োজিত করে বিরোধী মতপথ দমনের কাজে। এক্ষত্রে তারা পূর্ণ প্রশাসনিক সহায়তায় ও নিরাপত্তায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে গড়ে ওঠা ন্যয়সঙ্গত দাবির আন্দোলনে তাণ্ডব চালানোর সুযোগ পাচ্ছে। মিডিয়াগুলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিপক্ষ ছাত্রদলের অনুপস্থিতিতে ছাত্রলীগ নিজেরাই কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে। ৮ বছরে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রতিপক্ষ্যের ওপর হামলা, চাঁদাবাজী, আধিপত্য বিস্তারের জন্য সংঘর্ষ, গোলাগুলি, টেন্ডারবাজী, দখল বাণিজ্য, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রন, হলের সিট নিয়ন্ত্রণসহ নানা ইস্যুতে নিজেদের মধ্যে কোন্দলে ছাত্রলীগের প্রায় একশ ৩০জন নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছে। শরিয়তপুরসহ সম্প্রতি কয়েকটি এলাকায় ছাত্রলীগের নেতার নারী ধর্ষণ এবং ধর্ষনের দৃশ্য ধারণ করে ভিডিও প্রচার কাহিনীসহ অসংখ্য ন্যাক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাদের নাম জড়িয়েছে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাস-চাঁদাবাজী-প্রশ্নপত্র ফাঁস বাণিজ্য আর নিজেদের মধ্যে খুনাখুনি দেখতে দেখতে কেটে গেছে ২০১৭ সালের পুরোটাই।
মোটকথা ২০১৭ সালের পুরোটা জুড়েই মিডিয়ার খোরাক ছিল পুলিশ আর ছাত্রলীগ। ২০১৮ সালের শুরুতেই যেভাবে পুলিশ আর ছাত্রলীগ অপরাধের মহড়া শুরু করেছে তাতে শঙ্কা হচ্ছে কেমন যাবে এ বছরটা! দেশের মানুষের ঘুম কেড়ে নিয়ে আর কত তান্ডবলীলা চালালে আমরা অনেক বেশি স্বাধীন হয়ে উঠবো তা ভাবাচ্ছে প্রতি মূহুর্তেই।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.