এ কী হল তাবলীগে!
দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের জিম্মাদার মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভিকে টঙ্গির বিশ্ব ইজতেমায় যোগদানের বিরোধীতা করে বুধবার সকাল থেকে বিমানবন্দরের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিক্ষোভ করছেন তাবলিগ জামাতের একটি অংশ এবং আলেম-ওলামাগণ।
আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ব্যাংকক থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছান মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভি। পরিস্থিতির উত্তপ্ত থাকায় মাওলানা মোহাম্মদ সাদকে আপাতত বিমানবন্দরের ভেতরেই রাখা হবে। এ মুহূর্তে তাকে ইজতেমা মাঠে নেয়া হচ্ছে না।
বিতর্কিত ও আপত্তিকর মন্তব্যের কারণে সমালোচিত মাওলানা সাদের আগমন ঠেকাতে বুধবার সকাল থেকে উত্তরা এলাকার বিভিন্ন মসজিদে এবং বিশেষ করে এয়ারপোর্ট এলাকার মসজিদগুলোতে আলেম ওলামা ও মাদরাসার শিক্ষক শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিমানবন্দরের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিক্ষোভ করছেন। তাবলিগ জামাত অনুসারীগণ মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বাংলাদেশে আগমনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে।
মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বিতর্কিত বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি এবং সবার সম্মিলিত সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে তিনি ইজতেমায় আসায় এর প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার বিকেল ৪টার দিকে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ আলেম ওলামা ও তাবলিগ অনুসারীগণ সড়কে বসে পড়েন। ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার যাত্রী।
বিশেষ করে বিদেশ থেকে আসা বিভিন্ন ফ্লাইটের যাত্রীরা অনেকেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন। কোনপ্রকার যানবাহন না পেয়ে অনেকে বাধ্য হয়ে লাগেজ ও শিশু কোলে নিয়ে পায়ে হেঁটেই রওনা দিয়েছেন নিজ নিজ গন্তব্যে।
কেন বিতর্ক:
শতবছর আগে দ্বীন ও ইসলামের দাওয়াতি কাজকে তরান্বিত করতে মাওলানা ইলিয়াছ শাহ (রাহ.) দিল্লির নিজামুদ্দিন মসজিদ থেকে তাবলিগের যাত্রা শুরু করেন। মাওলানা ইলিয়াছ (রাহ.)-এর ছেলে মাওলানা হারুন (রাহ.)। তারই ছেলে হলেন মাওলানা সাদ কান্ধলভী।
দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের বর্তমান মুরব্বী সাদ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় কুরআন, হাদিস, ইসলাম, নবি-রাসুল ও নবুয়ত এবং মাসআলা-মাসায়েল নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন।
তিনি তার এ সব আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য দেওবন্দসহ বিশ্ব আলেমদের কাছে বিতর্কিত হয়েছেন। তাঁর বিতর্কিত মন্তব্যগুলো হচ্ছে:
“ ভোটের সময় চিহ্ন হিসাবে (আঙুলে) যে রং লাগানো হয়, তার কারণে নামাজ হয় না। তাই ভোট না দেয়া উচিত।“
“ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল রাখা হারাম এবং পকেটে ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল রেখে নামাজ হয় না। যে আলেমগণ ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল রাখাকে ‘জায়েজ’ বলেন, তারা ‘ওলামায়ে ছু’। বার বার কসম খেয়ে তিনি বলেন, তারা হলো ‘ওলামায়ে ছু’। এমন আলেমরা হলো গাধা! গাধা! গাধা!”
“মোবাইলে কুরআন শরীফ পড়া এবং শোনা; প্রস্রাবের পাত্র থেকে দুধ পান করার মতো! “ “মাদরাসা মসজিদের বেতন বেশ্যার উপার্জনের চেয়ে খারাপ
"কুরআন শরীফ শিখিয়ে বেতন গ্রহণ করেন, তাদের বেতন বেশ্যার উপার্জনের চেয়েও খারাপ। যে ইমাম এবং শিক্ষক বেতন গ্রহণ করেন, বেশ্যারা তাদের আগে জান্নাতে যাবে"!
"মাদরাসাগুলোতে জাকাত না দেয়া হোক। মাদরাসায় জাকাত দিলে জাকাত আদায় হবে না"।
"রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর কেবল তিনজন লোকের ‘বাইআত’ পূর্ণতা পেয়েছে। আর বাকি সবার বাইআত অপূর্ণ। সেই ৩ জন হলেন- শাহ ইসমাঈল শহীদ, মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস এবং মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ"।
"মাওলানা সাদ সাহেব আযমগড়ের ইজতেমায় এবং অন্যান্য ইজতেমায় একাধিকবার সুন্নাতকে ‘৩ প্রকার’ বলে বর্ণনা করেছেন, ইবাদতের সুন্নাত, দাওয়াতের সুন্নাত এবং আচার-অভ্যাসের সুন্নাত"।
‘দাওয়াতের পথ’ হলো নবির পথ, ‘তাসাউফের পথ’ নবির পথ না।
আজান হলো ‘তাশকিল’ (প্ল্যান-পরিকল্পনা)। নামাজ হলো ‘তারগীব’ (পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্বুদ্ধকরণ)। আর নামাজের পর আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া হলো ‘তারতীব’ (পরিকল্পনার মূল বাস্তবায়ন)।
"রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাওয়াত ইলাল্লাহর বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইশার নামাজকে পর্যন্ত বিলম্ব করে পড়েছেন। অর্থাৎ নামাজের চেয়ে দাওয়াতের গুরুত্ব বেশি"।
হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম ‘তোমার প্রভুর কাছে আমার কথা বল’ বলে গাইরুল্লাহর দিকে দৃষ্টি দেয়ার কারণে তাকে অতিরিক্ত ৭ বছর জেলখানায় থাকতে হয়েছে।
হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালাম আল্লাহকে ছেড়ে গাছের কাছে আশ্রয় চাইলেন। ফলে শাস্তি ভোগ করতে হলো।
মুজিজার সম্পর্ক কেবল দাওয়াতের সঙ্গে। নবুয়াতের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই।
হজরত মুসা আলাইহিস সালাম থেকে বড় এক ভুল হয়ে গেছে এবং তিনি এক অপরাধ করে ফেলেছেন- জামাআত এবং কাওমকে ছেড়ে তিনি আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য ‘নির্জনতা’ অবলম্বন করেছেন।
হজরত মুসা আলাইহিস সালাম কর্তৃক হজরত হারুন আলাইহিস সালামকে নিজের স্থলাভিষিক্ত বানানোও অনুচিৎ কাজ হয়েছে।
হেদায়েতের সম্পর্ক যদি আল্লাহর হাতে হতো; তাহলে তিনি নবি পাঠাতেন না।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.