বন্যা নয় পানি আগ্রাষণ!
আষাঢ়ের প্রবল বর্ষণ এবং বর্ষা মওসুমের কারণে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা যখন প্রাকৃতিক নিয়মে পানিতে বন্যা আক্রান্ত, লাখ লাখ খাদ্য ও বস্ত্রহীন বিপন্ন মানুষ যখন আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে ঠিক তেমন এক ভয়ংকর অবস্থার মধ্যে ভারত হঠাৎ তিস্তা নদীর উজানে নির্মিত গজলডোবা বাঁধের সবগুলো গেট খুলে দিয়েছে। এর ফলে ধেয়ে আসতে শুরু করেছে বন্যার পানি। আর সে পানিতে তলিয়ে গেছে নীলফামারী ও কুড়িগ্রামসহ দেশের উত্তর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলো। এখনো তলিয়ে যাচ্ছে ওই অঞ্চলের বহু নতুন নতুন এলাকা।
বিবিসি এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর উদ্ধৃত করে বাংলাদেশের কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের খবরে জানানো হয়েছে, দিনের পর দিন ধরে টানা বৃষ্টির সঙ্গে পাহাড়ী ঢলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র ও বরাক নদের উপত্যকায় ব্যাপক বন্যা দেখা দেয়। বন্যার পানি ছড়িয়ে পড়ে আসাম রাজ্য জুড়েও। গত শনিবার পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটলে দশটির সেচ দফতর হলুদ সতর্কতা সংকেত জারি করে। পরদিন রোববারই গজলডোবা বাঁধের গেটগুলো খুলে দেয় ভারত। এর ফলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নীলফামারীর ডিমলা, গয়াবাড়ি ও জলঢাকা উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা ও কালিগঞ্জ উপজেলার সব গ্রামের পাশাপাশি অসংখ্য চরও উজানের পানির তলে তলিয়ে যায়। আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে হাজার হাজার মানুষ। খবরে বলা হয়েছে, ভারত যদি গজলডোবা বাঁধের গেটগুলো বন্ধ না করে তাহলে পরিস্থিতির ভয়ংকর অবনতি ঘটবে এবং আশপাশের আরো অনেক জেলা ভারতের বন্যা ও ঢলের পানিতে তলিয়ে যাবে।
প্রকাশিত খবরে প্রসঙ্গক্রমে ১৯৯৮ সালে নির্মিত গজলডোবা বাঁধের ইতিহাস উল্লেখ করে জানানো হয়েছে, বন্যা হলে বাংলাদেশের তিস্তা ব্যারেজের ৬০ কিলোমিটার উজানে নির্মিত এ বাঁধটির সব গেটই ভারত খুলে দেয়। এর ফলে বন্যায় তলিয়ে যায় বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা। আবার শুষ্ক মওসুমে ভারত একই বাঁধের গেটগুলো বন্ধ করে। তখন গজলডোবার উজানে তিস্তা-মহানন্দা খালের মাধ্যমে দুই হাজার ৯১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধের ভেতরে পানি পবেশ করে। এই বিপুল পরিমাণ পানি দিয়ে বাংলাদেশ সংলগ্ন রাজ্য পশ্চিম বঙ্গের জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর, কুচবিহার ও মালদহ জেলার দুই লাখ ২২ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের মাধ্যমে চাষাবাদ করা হয়। অর্থাৎ গজলডোবা বাঁধের সাহায্যে ভারত একদিকে বর্ষার মওসুমে বাংলাদেশকে বন্যার পানিতে ডুবিয়ে দেয়, অন্যদিকে শুষ্ক মওসুমে পানিবঞ্চিত করে নিজেই শুধু লাভবান হয়। একযোগে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির শিকার করে বাংলাদেশকে। বলা হচ্ছে, মূলত এজন্যই পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে ভারত তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর করা থেকে সুকৌশলে বিরত রয়েছে।
আমরা ভারতের এই কৌশলকে পানি আগ্রাসন বলে মনে করি এবং এর বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। বলা দরকার, গজলডোবা বাঁধের মাধ্যমে শুধু নয়, ফারাক্কাসহ অন্য অসংখ্য বাঁধ এবং খাল ও নদীর মাধ্যমেও ভারত বাংলাদেশকে ক্ষয়ক্ষতির শিকার বানিয়ে এসেছে। প্রসঙ্গক্রমে ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যার কথা উল্লেখ করতেই হবে। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গার পানিবন্টন চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। দেশপ্রেমিকদের প্রতিবাদ উপেক্ষ করে স্বাক্ষরিত ওই চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে কোনো গ্যারান্টি ক্লজ রাখা হয়নি। এ অবস্থার সুযোগ নিয়ে ভারত একদিকে শুষ্ক মওসুমে বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়া থেকে বঞ্চিত করেছে, অন্যদিকে বিশেষ করে ১৯৯৮ সালের বন্যার সময় পানিতে পুরো দেশকে ভাসিয়ে দিয়েছে। ভারত ফারাক্কাসহ বিভিন্ন বাঁধের গেট খুলে দিয়ে বাংলাদেশকে তলিয়ে দেয়ার পরও সে সময় আওয়ামী লীগ সরকারের পানিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেছিলেন, ‘উজান’ দেশের পানিতে ‘ভাটির’ দেশ বাংলাদেশকে সব সময় নাকি ‘ডুবতেই’ হবে! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সেবার মন্দ শোনাননি। যেমন ৩০ বছর মেয়াদী পাবিণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর পর ১৯৯৭ সালের মার্চেই ভারত যখন বাংলাদেশকে কম হিস্যা দিতে শুরু করেছিল, তখন যুক্তি দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘প্রকৃতির ওপর তো কারো হাত নেই!’ ভারতের ব্যাপারে এমনটাই আওয়ামী লীগ সরকারের মনোভাব। ভারতও এমন অবস্থার সুযোগ নিয়েছে বিভিন্ন সময়ে। যেমন ১৯৯৮ সালের পর ২০০৪ সালের জুলাই মাসেও ভারতের ছেড়ে দেয়া পানিতে সারাদেশ তলিয়ে গিয়েছিল। বন্যাও হয়েছিল দীর্ঘস্থায়ী। কারণ, সেবার বৃষ্টি ও বন্যা শুরু হওয়ার পর ভারত ফারাক্কা বাঁধের ১০৫টি গেটই খুলে দিয়েছিল। ভারত সেই সাথে ৫৪টি অভিন্ন নদ-নদীর পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্মিত বাঁধের গেট খুলে দিয়েও বাংলাদেশকে বিপন্ন করে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতেও ভারত বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে চলেছে। ভারতের এই স্বার্থসর্বস্বতার কারণে কোনো মৌসুমেই বাংলাদেশ গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা পায়নি, এখনো পাচ্ছে না। অভিন্ন ও সীমান্তবর্তী নদ-নদীর ব্যাপারেও ভারত একই নীতি ও মনোভাবের প্রকাশ ঘটিয়েছে। এসব নদ-নদীর কোনো একটিতেই ভারত বাংলাদেশকে বাঁধ নির্মাণ বা ড্রেজিং করতে দিচ্ছে না। ভারতের গজলডোবা বাঁধের কারণে যমুনার পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ। তিস্তা, মহানন্দা, মনু, কোদলা, খোয়াই, গোমতি ও মুহুরিসহ আরো অন্তত ১৫টি নদ-নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণ করেছে ভারত। এভাবে ফারাক্কার পাশাপাশি ছোট-বড় বিভিন্ন বাঁধের মাধ্যমে ভারত পানি সরিয়ে নেয়ায় এবং পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করায় অভিন্ন ৫৪টির মধ্যে ৪০টি নদ-নদী শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই এখন পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। আবার পুরো বাংলাদেশকে ডুবিয়ে দিচ্ছে বর্ষার মওসুমে। বর্তমান সময়েও বাংলাদেশ ভারতের একই নীতি ও কৌশলেরই অসহায় শিকারে পরিণত হয়েছে।
আমরা মনে করি এবং একথা আগেও বিভিন্ন সময়ে বলে এসেছি যে, সর্বব্যাপী এই ক্ষয়ক্ষতি থেকে দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে হলে ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ অবস্থান নেয়া দরকার। আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে তেমনটা আশা করা যায় না বলে এ ব্যাপারে দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগে ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মামলা দায়েরসহ ব্যবস্থা নিতে হবে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অমন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভবও। কারণ, আইনটিতে বলা আছে, উজানের দেশ ভাটির দেশকে শুষ্ক মওসুমে পানি বঞ্চিত যেমন করতে পারবে না তেমনি বর্ষা মওসুমে পারবে না বন্যায় তলিয়ে দিতেও। আন্তর্জাতিক আইনের এই সুবিধা স্পেন ও পাকিস্তানসহ অনেক রাষ্ট্রই বিভিন্ন সময়ে আদায় করেছে। সে জন্যই এখন বেশি দরকার আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, সরকার যাতে ভারতের পানি আগ্রাসনের বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপন করতে বাধ্য হয়।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
বিবিসি এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর উদ্ধৃত করে বাংলাদেশের কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের খবরে জানানো হয়েছে, দিনের পর দিন ধরে টানা বৃষ্টির সঙ্গে পাহাড়ী ঢলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র ও বরাক নদের উপত্যকায় ব্যাপক বন্যা দেখা দেয়। বন্যার পানি ছড়িয়ে পড়ে আসাম রাজ্য জুড়েও। গত শনিবার পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটলে দশটির সেচ দফতর হলুদ সতর্কতা সংকেত জারি করে। পরদিন রোববারই গজলডোবা বাঁধের গেটগুলো খুলে দেয় ভারত। এর ফলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নীলফামারীর ডিমলা, গয়াবাড়ি ও জলঢাকা উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা ও কালিগঞ্জ উপজেলার সব গ্রামের পাশাপাশি অসংখ্য চরও উজানের পানির তলে তলিয়ে যায়। আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে হাজার হাজার মানুষ। খবরে বলা হয়েছে, ভারত যদি গজলডোবা বাঁধের গেটগুলো বন্ধ না করে তাহলে পরিস্থিতির ভয়ংকর অবনতি ঘটবে এবং আশপাশের আরো অনেক জেলা ভারতের বন্যা ও ঢলের পানিতে তলিয়ে যাবে।
প্রকাশিত খবরে প্রসঙ্গক্রমে ১৯৯৮ সালে নির্মিত গজলডোবা বাঁধের ইতিহাস উল্লেখ করে জানানো হয়েছে, বন্যা হলে বাংলাদেশের তিস্তা ব্যারেজের ৬০ কিলোমিটার উজানে নির্মিত এ বাঁধটির সব গেটই ভারত খুলে দেয়। এর ফলে বন্যায় তলিয়ে যায় বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা। আবার শুষ্ক মওসুমে ভারত একই বাঁধের গেটগুলো বন্ধ করে। তখন গজলডোবার উজানে তিস্তা-মহানন্দা খালের মাধ্যমে দুই হাজার ৯১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধের ভেতরে পানি পবেশ করে। এই বিপুল পরিমাণ পানি দিয়ে বাংলাদেশ সংলগ্ন রাজ্য পশ্চিম বঙ্গের জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর, কুচবিহার ও মালদহ জেলার দুই লাখ ২২ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের মাধ্যমে চাষাবাদ করা হয়। অর্থাৎ গজলডোবা বাঁধের সাহায্যে ভারত একদিকে বর্ষার মওসুমে বাংলাদেশকে বন্যার পানিতে ডুবিয়ে দেয়, অন্যদিকে শুষ্ক মওসুমে পানিবঞ্চিত করে নিজেই শুধু লাভবান হয়। একযোগে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির শিকার করে বাংলাদেশকে। বলা হচ্ছে, মূলত এজন্যই পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে ভারত তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর করা থেকে সুকৌশলে বিরত রয়েছে।
আমরা ভারতের এই কৌশলকে পানি আগ্রাসন বলে মনে করি এবং এর বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। বলা দরকার, গজলডোবা বাঁধের মাধ্যমে শুধু নয়, ফারাক্কাসহ অন্য অসংখ্য বাঁধ এবং খাল ও নদীর মাধ্যমেও ভারত বাংলাদেশকে ক্ষয়ক্ষতির শিকার বানিয়ে এসেছে। প্রসঙ্গক্রমে ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যার কথা উল্লেখ করতেই হবে। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গার পানিবন্টন চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। দেশপ্রেমিকদের প্রতিবাদ উপেক্ষ করে স্বাক্ষরিত ওই চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে কোনো গ্যারান্টি ক্লজ রাখা হয়নি। এ অবস্থার সুযোগ নিয়ে ভারত একদিকে শুষ্ক মওসুমে বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়া থেকে বঞ্চিত করেছে, অন্যদিকে বিশেষ করে ১৯৯৮ সালের বন্যার সময় পানিতে পুরো দেশকে ভাসিয়ে দিয়েছে। ভারত ফারাক্কাসহ বিভিন্ন বাঁধের গেট খুলে দিয়ে বাংলাদেশকে তলিয়ে দেয়ার পরও সে সময় আওয়ামী লীগ সরকারের পানিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেছিলেন, ‘উজান’ দেশের পানিতে ‘ভাটির’ দেশ বাংলাদেশকে সব সময় নাকি ‘ডুবতেই’ হবে! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সেবার মন্দ শোনাননি। যেমন ৩০ বছর মেয়াদী পাবিণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর পর ১৯৯৭ সালের মার্চেই ভারত যখন বাংলাদেশকে কম হিস্যা দিতে শুরু করেছিল, তখন যুক্তি দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘প্রকৃতির ওপর তো কারো হাত নেই!’ ভারতের ব্যাপারে এমনটাই আওয়ামী লীগ সরকারের মনোভাব। ভারতও এমন অবস্থার সুযোগ নিয়েছে বিভিন্ন সময়ে। যেমন ১৯৯৮ সালের পর ২০০৪ সালের জুলাই মাসেও ভারতের ছেড়ে দেয়া পানিতে সারাদেশ তলিয়ে গিয়েছিল। বন্যাও হয়েছিল দীর্ঘস্থায়ী। কারণ, সেবার বৃষ্টি ও বন্যা শুরু হওয়ার পর ভারত ফারাক্কা বাঁধের ১০৫টি গেটই খুলে দিয়েছিল। ভারত সেই সাথে ৫৪টি অভিন্ন নদ-নদীর পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্মিত বাঁধের গেট খুলে দিয়েও বাংলাদেশকে বিপন্ন করে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতেও ভারত বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে চলেছে। ভারতের এই স্বার্থসর্বস্বতার কারণে কোনো মৌসুমেই বাংলাদেশ গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা পায়নি, এখনো পাচ্ছে না। অভিন্ন ও সীমান্তবর্তী নদ-নদীর ব্যাপারেও ভারত একই নীতি ও মনোভাবের প্রকাশ ঘটিয়েছে। এসব নদ-নদীর কোনো একটিতেই ভারত বাংলাদেশকে বাঁধ নির্মাণ বা ড্রেজিং করতে দিচ্ছে না। ভারতের গজলডোবা বাঁধের কারণে যমুনার পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ। তিস্তা, মহানন্দা, মনু, কোদলা, খোয়াই, গোমতি ও মুহুরিসহ আরো অন্তত ১৫টি নদ-নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণ করেছে ভারত। এভাবে ফারাক্কার পাশাপাশি ছোট-বড় বিভিন্ন বাঁধের মাধ্যমে ভারত পানি সরিয়ে নেয়ায় এবং পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করায় অভিন্ন ৫৪টির মধ্যে ৪০টি নদ-নদী শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই এখন পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। আবার পুরো বাংলাদেশকে ডুবিয়ে দিচ্ছে বর্ষার মওসুমে। বর্তমান সময়েও বাংলাদেশ ভারতের একই নীতি ও কৌশলেরই অসহায় শিকারে পরিণত হয়েছে।
আমরা মনে করি এবং একথা আগেও বিভিন্ন সময়ে বলে এসেছি যে, সর্বব্যাপী এই ক্ষয়ক্ষতি থেকে দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে হলে ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ অবস্থান নেয়া দরকার। আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে তেমনটা আশা করা যায় না বলে এ ব্যাপারে দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগে ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মামলা দায়েরসহ ব্যবস্থা নিতে হবে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অমন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভবও। কারণ, আইনটিতে বলা আছে, উজানের দেশ ভাটির দেশকে শুষ্ক মওসুমে পানি বঞ্চিত যেমন করতে পারবে না তেমনি বর্ষা মওসুমে পারবে না বন্যায় তলিয়ে দিতেও। আন্তর্জাতিক আইনের এই সুবিধা স্পেন ও পাকিস্তানসহ অনেক রাষ্ট্রই বিভিন্ন সময়ে আদায় করেছে। সে জন্যই এখন বেশি দরকার আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, সরকার যাতে ভারতের পানি আগ্রাসনের বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপন করতে বাধ্য হয়।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.