আলবদর রহস্যঃ কেন ও কিভাবে? - ০২
সেই ক্ষমতাকে গোপন করে জামায়াত- শিবিরের তথ্য সন্তাসরা সাধারন মানুষএ বোঝানোর চেষ্টা করে যে, এরা সামরিক বাহিনীড় আওতায় ছিলো বলে নিজামী মুজাহিদের মত বেসামরিক লোকের পক্ষে এর প্রধান হওয়া সম্ভব নয়। অথচ ইতিহাস ও গণহত্যার অসংখ্য প্রমাণাদি তাদের মিথ্যাচারের বিপক্ষে এসে দাঁড়ায়। যখন তাঁরা এতবড় একটি তথ্য সন্ত্রাস খুব স্বাভাবিক ভাবে করে তখন তাদের একাত্তর সমকালীন নিষ্ঠুরতা সম্পর্কে খুব সহজেই অনুমান করে নেয়া যায়। অবাক হতে হয় তাদের স্বাভাবিক নিষ্ঠুরতার মাত্রা বুঝলে! অথচ অবাক হবার কিছুই থাকেন আযখন একদল সাইকোকে কল্পনা করা যায় যারা পবিত্র ধর্মের নামে অন্তরের গহীন থেকে সবচেয়ে নিষ্ঠির কাজকে শ্রষ্টার নৈকট্য পাবার মাধ্যম মনে করে বলে বুঝতে পারা যায়। ফলে খুব সহজেই আমরা তাদের এসব অবস্থাকে বিকৃত ধর্ম চর্চা বলে চিহ্নিত করতে পারি। ধর্ম পবিত্র। ধর্ম মানুষের জন্য।
কিন্তু এরা এতটাই বিকৃত মানসিকতার যে, এরা সেই মানুষকেই হত্যা, ধর্ষণ, অপহরন করে শ্রষ্টার ভালোবাসা পেতে চায়! এ বিশ্বে হাজার রকম ব্যতীক্রম বিষয়ের মাঝে আধুনিক যুগের আইএসের মতই জামায়াত-শিবিরও ব্যতীক্রম মানসিকতার খুলি কিলার! এদএর মাঝেই আলবদরের প্রেতাত্মা বাস করে। একজন বিদেশী সাংবাদিক এ জন্যই রায়ের বাজারের বধ্যভূমি দেখে মন্তব্য করেছিলেন- "Its not only utterly shocking but we are ashamed that we belong to human race whice is capable of doing that"
আলবদর থেকে ছাত্রশিবির
একদল ছেলে নিয়মিত আমাদের বাড়ি আসতো। দেখতে শুনতে খুব ভালো মনে হত। তবুও কেন যেন মন টানতো না তাদের দিকে। শত কথার মায়াজাল ভেদ করে কেন যেন তাদের নিষ্ঠুর চেহারা আমায় স্পর্শ করতো। বন্ধুদের শত অনুরোধ আর হাত টানার মাঝেও তাই কোন এক অদৃশ্য শক্তি আমায় জোর করে পেছনে দাঁড়িয়ে যেতে বাধ্য করতো। আজ বুঝি ধুতরা ফুলের সৌন্দর্য কেন আমায় টানতো না! আজ জানি এই শিবির কোথায় থেকে সেছে?
কত রক্তের ঝাঝালো গন্ধ এদের গা থেকে কালক্রমে সুগন্ধি হয়ে বেরোয়! ১৯৭১ সালে ভয়ঙ্কর খুনে নিজামী ও মুজাহিদের নেতৃত্বে জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ছাত্রসংঘ বিলুপ করে গঠন করা হয় আলবদর বাহিনী। গত সংখ্যায় বলা হয়েছে এরা কীভাবে চলাফেরা করতো আর এদের নীতিমালায় কিছগু বিষেশ দিক ছিলো, সেসব। ছাত্রসংঘের ইউনিফর্ম ছিলো সাদা পাজামা ও সাদা পাঞ্জাবি। মুখে থাকতো রুমাল। এভাবেই তাঁরা ঘুরে বেড়াতো। সাধারনত রাতের বেলা তাঁরা অভিযানে বের হতো। একেক অঞ্চল থেকে অন্যান্য অঞ্চলে ছুটে বেড়ানো আর নিষ্ঠুর ভাবে রাতের আধারে কোন পেশাজীবিকে গৃহ থেকে তুলে বধ্যভূমিতে পুতে রাখাই ছিলো এদের ইবাদত! ভাবা যায়? যে সাদা রঙ সরলতার প্রতীক সেই সাদা রঙ মৃত্যুর দেহে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে? যে শান্ত ছেলেদের দেখতে মানুষের এত আগ্রহ সেই শান্ত খুনীদের চেহারা কী বিভতস্য হতে পারে?
আলবদর গঠনের আগে জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ভেঙ্গে ফেলা হয়। ফলে সেই সংগঠন ছাত্রসংঘ বিলুপ্ত হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের পরপর ১৭ ডিসেম্বর থেকেই আওবদ্রের ভয়ঙ্কর খুনিরা কেউ বিদেশে পালিয়ে যায়। কেউ বা অন্য অঞ্চলে গিয়ে আবাস গড়ে আবার কেউ দেশেই ছদ্মবেশে চলতে থাকে। যারা খুব পরিচিত ছিলোনা তাদের জন্য কাজটা ছিলো অপেক্ষাকৃত সহজ।
কিন্তু বড় বড় নেতারা প্রধানত বিদশে পাড়ি জমায়। বঙ্গবন্ধু এসেই সাইকো লোকদের ঠিকানা ধর্ম ভিত্তিক দলগুলো নিষিদ্ধ করে দেন। কিন্তু মেজ্র জিয়া ক্ষমতা লাভের পর একতরফা ভাবে সকল ধর্মান্ধ দলকে বৈধতা দিয়ে দেন। ফলে জামাতের মত কুখ্যাত দলও রাজনীতির বৈধতা পেয়ে যায়। এ সুযোগে গোলাম আজম বারবার দেশে ফিরতে তালবাহানা শুরু করে। আর নিমাজী, মুজাহিদরা প্রথমেই দেশে এসে নেপথ্যে থেকে গঠন করায় ছাত্রশিবির। যেহেতু ছাত্রসঙ্ঘ তখন বিলুপ্ত তাই তাদের পক্ষে নতুন নামে ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলা ছাড়া উপায় ছিলোনা। আর মূল ধর্মান্ধ সংগঠন জামাত প্রথমে আইডিপি নামে ছদ্মবেশে কাজ করলেও পরে স্বরুপে আবির্ভূত হয়। এভাবেই একটি কিলার বাহিনীর নতুন রুপ হয় ছাত্রশিবির।
কী জঘন্য ইতিহাস থেকে জন্ম নেয়া সংগঠনটি কত সাধারন ও অসহায়-দরিদ্র সন্তানদের সরলতার সুযোগ নিয়ে দশকের পর দশক রাজনীতি করে যাচ্ছে, ভাবলে বমি চলে আসে। মুক্তি যুদ্ধে আপনার আমার মা-বোনের ধর্ষক, বাবা-ভাইদের খুনি আলবদর দেখতে চান? এলাকার শিবির দেখে নিন।
ট্যাগ ও ট্রেন্ডঃ
কোন মন্তব্য নাই.